জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মাথায় ডাম্বেলের বাড়ি, দুই মেয়েকে খুন করল বাবা-মা — অন্ধ্রপ্রদেশের এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধর্মীয় আচারের তত্ত্বই খুঁজে পেয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে পুরষোত্তম নাইডু এবং পদ্মজা নাইডু নামের ওই দম্পতিকে। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ১৫ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলার মান্দানাপাল্লে থানা এলাকায় বাড়ি নাইডু পরিবারের। রবিবার রাতে সেখান থেকেই ওই দুই তরুণীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খুন হওয়া দুই বোনের নাম আলেখ্যা (২৭) এবং সাই দিব্যা (২৩)। পুলিশ জানিয়েছে, তারা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, তখন নাইডু দম্পতি দাবি করেন, নিজেদের সন্তানদের বাঁচানোর ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। পুলিশ যদিও সে সবের তোয়াক্কা না করেই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য দেহ দু’টি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
দেশের সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েক সপ্তাহ আগে সাই দিব্যা তাঁদের পোষ্যকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বেরোন। সেই সময় তিনি কিছু মাড়িয়ে ফেলেন। তার পর থেকে তিনি মৃত্যুভয়ে ভুগতে থাকেন। বাড়িতে এসে সে কথা তিনি বাবা-মা-দিদিকে জানান। ভয় কাটছে না দেখে পুরষোত্তম তাঁর এক সহকর্মী জিপি রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাজুই তাঁকে এক তান্ত্রিকের সন্ধান দেন। তান্ত্রিক এর পর নাইডুদের বাড়িতে আসেন। নানা রকমের তন্ত্র-ক্রিয়াকলাপ করার পাশাপাশি পরিবারের সকলকে তিনি তাবিজ পরতে দেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
কিন্তু ২৩ তারিখ তান্ত্রিক চলে যাওয়ার পর নাইডু দম্পতি দেখেন ছোটমেয়ের মৃত্যুভয় কমার বদলে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের কাছে ওই দম্পতি দাবি করেছেন, এর পর তাঁরা তিন জনে মিলে সাই দিব্যাকে প্রচণ্ড মারধর করে। তাতেও মেয়ের অস্বাভাবিক আচরণ না কমায় তাঁর মাথায় ডাম্বেল দিয়ে আঘাত করেন। শরীরেও আঘাত করেন তাঁরা। ২৪ জানুয়ারি দুপুর দেড়টা নাগাদ অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে সাই দিব্যা মারা যায়।
পুলিশের কাছে নাইডু দম্পতি জানিয়েছেন, এর পর আচমকাই আলেখ্যার মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তিনিও বোনের মতো মরতে চান বলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। বিবস্ত্র হয়ে তিনি ঠাকুরঘরে গিয়ে একটি লালশাড়ি পরেন। বড়মেয়ের ওই অস্বাভাবিকতা দেখে নাইডু দম্পতি তাঁকেও ডাম্বেল দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলেন। আলেখ্যা মারা যায় ওই দিনই বিকেল ৫টা নাগাদ।
এর পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ পুরষোত্তম তাঁর এক বন্ধু গৌরীশঙ্করকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। গৌরীশঙ্কর হতচকিত হয়ে রাজুকে ফোন করেন। ঘটনাচক্রে রাজু নাইডুদের বাড়ির কাছেই তাকতেন। তিনি দৌড়ে এসে দেখেন, নাইডু দম্পতি ঘরে বসে রয়েছেন, গোটা বাড়ি রক্তাক্ত। ঠাকুরঘরে বড় মেয়ে আলেখ্যা এবং অন্য একটি ঘরে দিব্যা সাইয়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। তিনিই পুলিশে খবর দেন। পরে রাজুই নাইডু দম্পতির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে যায়, তখন তারা পদ্মজাকে তাঁর স্বামীর উদ্দেশে বলতে শোনেন, ‘‘আর একটু অপেক্ষা করতে পারলে না। তা হলেই মেয়ে দুটো বেঁচে যেত।’’ শুধু তাই নয়, পদ্মজা তাঁর স্বামীকে বলেছেন, ‘‘আমি তোমার স্ত্রী নই। আমি শিব। করোনার জন্ম চিন থেকে হয়নি। আমার শরীর থেকে হয়েছে। আগেই বলেছিলাম, করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োজন নেই। মার্চেই করোনা বিদায় নেবে।’’ পুলিশের কাছে পদ্মজা দাবি করেছেন, আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই কলিযুগ শেষ হয়ে যেত। শুরু হত সত্যযুগ। আর সত্যযুগ শুরু হলেই তাঁদের দুই মেয়ে বেঁচে উঠত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলেখ্যা ভোপালে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট’-এ কাজ করতেন। কিন্তু সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবেন বলে সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছিলেন। আর সাই দিব্যা চেন্নাইয়ে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনিও সম্প্রতি বাড়ি এসেছিলেন। তাঁদের বাবা এবং মা-ও উচ্চশিক্ষিত। শুধু তাই নয়, তাঁরা পদস্থ চাকরি করেন। চিত্তোরের ডেপুটি পুলিশ সুপার মনোহরা চেরি জানিয়েছেন, পুরুষোত্তম মান্দানাপাল্লের সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজে রসায়নের অধ্যাপক এবং সেখানকার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল। অন্য দিকে পদ্মজা অঙ্কে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্রী। তিনি আইআইটি কোচিং ইনস্টিটিউটে পড়ান।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতে কোনও ধর্মীয় আচার পালন করা হয়েছিল। কারণ, তদন্তে নেমে তারা এমন একাধিক অনুষঙ্গের সন্ধান পেয়েছে। খুন হওয়া দুই বোনের পরনেই লাল কাপড় পরা ছিল। দু’জনের মধ্যে বড় বোন আলেখ্যার রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল বাড়ির ঠাকুরঘরে। পুলিশের কাছে নাইডু দম্পতি দাবি করেছেন, তাঁদের মেয়েদের শরীরে ‘পিশাচ’ ভর করেছিল। সে কারণেই ‘অদৃশ্য শক্তি’র নির্দেশেই তাঁরা আলেখ্যা-সাই দিব্যাকে খুন করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। সে কারণেই হয়তো এই খুন।
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)