জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ডান্স বার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার যে রায় দিয়েছে, তাতে মহারাষ্ট্রের ডান্স বার মালিকদের পাশাপাশি খুশি সেখানকার কয়েক হাজার কর্মীও।
২০১৪ সালের জুন মাসে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় রাজ্য পুলিশ বিল আনে সরকার। সেখানে সব হোটেলে ডান্স বারগুলির উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা বলা হয়। কোনও বিরোধিতা ছাড়াই সেই বিল পাশ হয়ে গিয়েছিল রাজ্য বিধানসভায়। ২০১৪ সালের ওই সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ‘ভারতীয় হোটেল এবং রেস্তোরাঁ সংগঠন’। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এ দিনের এই রায়।
ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং অশোক ভূষণের বেঞ্চ রাজ্য পুলিশ আইনের বেশ কয়েকটি অংশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাতিলও করে দিয়েছে একাধিক অংশ।
মহারাষ্ট্র পুলিশ আইনে সন্ধে ৬ থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বার খোলা রাখার কথা বলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই সময়সূচিকে মেনে নিয়েছে। বার মালিকের সঙ্গে সেখানকার নর্তকীদের একটা পাকাপোক্ত চুক্তি থাকা প্রয়োজন বলে পুলিশ আইনে বলা হয়েছিল। যাতে, কোনও পক্ষই চুক্তিভঙ্গ করলে প্রশাসন বা আদালতের সাহায্য নেওয়া যায়। এ দিন শীর্ষ আদালত সেই চুক্তির বিষয়েও মান্যতা দিয়েছে।
বিয়ের কার্ডে ভোটের দাবি, এমনই অভিনব ঘটনা ঘটালেন গুজরাতের যুগল
রাজ্য পুলিশ আইনে বলা হয়েছিল, যে জায়গায় মদ পরিবেশন করা হয়, সেখানে নর্তকীরা নাচতে পারবেন না। বারের এই দু’টি অংশ কোনও বিভাজিকা দিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে। তা হলে গন্ডগোলের সম্ভাবনা কম হবে। শীর্ষ আদালত যদিও এই যুক্তি মানতে চায়নি। বিচারপতিদের বেঞ্চ জানিয়েছে, একই জায়গাতেই মদ পরিবেশনের পাশাপাশি নর্তকীরা নাচতে পারবেন। ঠিক তেমন ভাবেই তারা উড়িয়ে দিয়েছে ডান্স বারে সিসি ক্যামেরা বসানোর যুক্তিও। সে ক্ষেত্রে বিচারপতিদের মত, সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি গোপনতার অধিকার খর্ব করবে।
একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ডান্স বারে যে সমস্ত নর্তকী নাচবেন, তাঁদের কোনও ভাবেই ছোঁয়া যাবে না। এমনকি খদ্দেররা তাঁদের টিপস দিতে পারবেন। কিন্তু, টাকা বা পয়সা কোনওটাই নর্তকীদের উদ্দেশে ওড়ানো য়াবে না বলেই জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এ ছাড়া ওই আইনে বলা হয়েছিল, কোনও ধর্মস্থান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১ কিলোমিটারের মধ্যে ডান্স বার খোলা যাবে না। বারের মালিককে সজ্জন এবং ভাল মানুষ হতে হবে বলেও আইন ছিল। এ দিন এই দু’টি বিষয়ই বাতিল করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিদের মতে, মুম্বইয়ের মতো শহরে, যেখানে জায়গার খুবই অভাব, সেখানে ১ কিলোমিটারের এই নিয়ম মেনে চলাটা কার্যত অসম্ভব।
এ দিন আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্য সরকারের আইনজীবী নিশান কাটনেশওয়ারকর এ দিনের রায়ের পর বলেন, ‘‘আমরা সরকারের ভূমিকায় খুশি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বার নর্তকীদের সুরক্ষা। সেটা সুপ্রিম কোর্ট বজায় রেখেছে।’’
A Welcome judgment by the Hon. Supreme Court on the functioning of #DanceBars in #Maharashtra
— Madhur Bhandarkar (@imbhandarkar) January 17, 2019
মহারাষ্ট্রের ডান্স বার এবং বার ডান্সারদের নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ২০০৫ সালে। সে বছর বম্বে পুলিশ আইনে সংশোধনী আনে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। রাজ্য জুড়ে রমরমিয়ে চলতে থাকা ডান্স বারগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। সরকারের বক্তব্য ছিল, এই ডান্সবারগুলি অশালীনতা ছড়ায়। শুধু তাই নয়, প্রকারান্তরে তারা যৌন ব্যবসাকে মদত দেয়।
রাজ্য সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে তখনই মামলা করে রেস্তোরাঁ ও বার মালিকদের একটি সংগঠন। তাদের মত ছিল যে, বারগুলিকে নিষিদ্ধ করলে যৌন ব্যবসায় মদত দেওয়া তো কমবেই না। উল্টে বার নর্তকীদেরই পরোক্ষে যৌন পেশায় ঠেলে দেওয়া হবে। তারা একটা হিসাব দিয়েছিল সেই সময়। তাতে বলা হয়েছিল, রাজ্য জুড়ে প্রায় ৭০০ ডান্স বারে ৭৫ হাজার মহিলা কাজ করেন। সরকার এই বারগুলি নিষিদ্ধ করলে সংসার চালাতে তাঁদের দেহ ব্যবসাতেই নামতে হবে।
২০০৬ সালের এপ্রিলে মহারাষ্ট্র সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে বাতিল ঘোষণা করে বম্বে হাইকোর্ট। বম্বে হাইকোর্টের এই রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে বম্বে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের সুরে শীর্ষ আদালতও তাদের রায়ে জানায়, মহারাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সংবিধান-বিরোধী।
এর পর, ২০১৪ সালের জুন মাসে বিধানসভায় মহারাষ্ট্র পুলিশ বিল আনে সরকার। কোনও বিরোধিতা ছাড়া সেই বিল পাশ হয়ে যায় রাজ্য বিধানসভায়। এর পর ২০১৪ সালের সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ‘ভারতীয় হোটেল এবং রেস্তোরাঁ সংগঠন’।
‘চাঁদনি বার’-এ বার নর্তকীদের জীবন কাহিনি তুলে ধরেছিলেন পরিচালক মধুর ভান্ডারকর। এ দিনের রায়ের পর টুইটারে পরিচালক লিখেছেন, ‘‘মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’
(দেশের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)