‘আমাকে নুসরত জাহানের মতো দেখতে? ভাল করে আয়নায় দেখতে হবে তো মুখটা’

শ্রেয়শ্রী রায় ভানুমতীর খেলভানুমতীর খেল-এ শ্রেয়শ্রী রায়। ছবি জি বাংলার ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।

ক্যামেরার সামনে প্রথম আসা ইটিভি-র ‘দুই পৃথিবী’ ধারাবাহিকে। এর পর ‘রান রনি রান’-এ মুখ্য চরিত্র-সহ আরও বেশ কয়েকটি ফাইনাইট সিরিজে কাজ করার পর আজ ম্যাজিশিয়ান ভানুমতী। ম্যাজিকে বেশ ভাল হাত পাকা করে ফেলেছেন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী শ্রেয়শ্রী রায়। সামনেই বড় পরীক্ষা। কী বলছেন টেলিভিশনের এই সময়ের বহুচর্চিত চরিত্র ভানুমতী? পর্দার বাইরে ভানুমতীর সঙ্গে আড্ডা দিলেন সোনালি দত্তগুপ্ত

‘ভানুমতীর খেল’-এ সুযোগটা এল কী ভাবে?
শ্রেয়শ্রী: সে এক মনে রাখার মতো দিন। সে দিন খুব শরীর খারাপ। আমার মাইগ্রেন আছে। মাথা খুব যন্ত্রণা করছিল সে দিন। তাই রাত ৯টার মধ্যেই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। একটা ফোন এসেছিল। শরীর খারাপের দমকটা এতটাই ছিল যে, ফোনটা ধরতে চাইনি প্রথমে। কিন্তু অনর্গল বেজে যাচ্ছে দেখে কোনও রকমে ধরি। ওপারে থাকা ভদ্রলোক কী বলছিলেন সেটা আজ মনে নেই আমার। হ্যাঁ-হুঁতে উত্তর দিয়েছিলাম। তার পর সব খুব চটপট কেমন এগিয়ে গেল। অডিশন হল, লুক সেট হল। আর এখন তো সবাই ভানু নামেই ডাকছে আমাকে। শ্রেয়শ্রী নামটা প্রায় ভুলতেই বসেছি।

ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ানোর দিনটার কথা মনে পড়ে?
শ্রেয়শ্রী: অনেকের মুখেই শুনি ক্যামেরার সামনে প্রথম বার দাঁড়িয়ে নাকি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কেঁদেও ফেলেছিলাম নাকি! আমার কিন্তু ও রকম কিস্যু হয়নি। শুধু ডিরেক্টর আমাকে শটের সময় একটা ব্যাগ দৌড়ে এসে ফেলতে বলেছিলেন, যেটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। তা-ও সেটা ভয়বশত নয়। এমনিই ভুলে গিয়েছিলাম। বকুনি খেয়েছিলাম প্রথম দিনই। পরের টেকটা ঠিকঠাকই হয়েছিল।

ম্যাজিক শিখছ?
শ্রেয়শ্রী: হ্যাঁ তা তো শিখছিই। রোজই কিছু না কিছু শিখতে হচ্ছে। কারণ ‘ভানুমতীর খেল’ তো ম্যজিকের উপরেই বেস করে। আমি, রুবেলদা দু’জনেই এই সিরিয়ালটা শুরু হওয়ার আগে দেড়-দু’মাস ম্যাজিকের উপর ওয়ার্কশপ করেছি।

কী কী ম্যাজিক শিখলে এর মধ্যে?
শ্রেয়শ্রী: অনেক রকমের শিখেছি। টাকা, রাবার, পেন, কয়েন, দড়ি— হরেক রকমের জিনিস দিয়ে ম্যাজিক শিখেছি।

ভানুর নিজের মুখেই শুনে নিন…

কে ট্রেনিং দিচ্ছেন তোমাদের?
শ্রেয়শ্রী: দিব্যেন্দু দে।

পিসি সরকারের সঙ্গে আলাপ আছে? তিনি কিন্তু জানেন এই ধারাবাহিকের কথা।
শ্রেয়শ্রী: না, সুযোগ পাইনি এখনও। ম্যাজিক শব্দটা শুনলেই ওই মানুষটার নাম মনে পড়ে। ভানু হিসেবে তো বটেই, শ্রেয়শ্রী হিসেবেও পিসি সরকারের সাক্ষাত পেতে চাই। টিপস চাইব ওঁর কাছে।

ফ্লোরে শটের চাপ আবার ধারাবাহিকের খাতিরে ম্যাজিক শেখা, রোজ কত ক্ষণ ধরে চলছে ম্যাজিক আর শুটিং পর্ব?
শ্রেয়শ্রী: অনেকটা সময় ফ্লোরেই কেটে যায়। ম্যাজিক ফ্লোরেই শিখি। তবে কাজের সময়সীমা অনেকটা কমেছে আমাদের। এ বার একটু পড়াশোনায় মন দেব। সামনে বড় পরীক্ষা আসছে। তার পর কলেজ। শুটিং-এ আসার আগে ব্যাগের ভিতর বইটা ঢুকিয়ে নিই। ওটা সর্ব সময় ব্যাগেই পড়ে থাকে! মাঝে মধ্যে বার করে পড়ি। সত্যি বলছি, পড়াটা খুব একটা হয় না। প্রজেক্ট, প্র্যাক্টিক্যাল করতে স্কুলে যাই মাঝে মাঝে।

কী কী সাবজেক্ট আছে তোমার?
শ্রেয়শ্রী: এডুকেশন, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সাইকোলজি, জিওগ্র্যাফি।

স্কুলে যেতে পারো না সে ভাবে। হাজিরা নিয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে না?
শ্রেয়শ্রী: না। তবে, পরীক্ষাটা নিয়েই যা একটু চাপে আছি। আমরা যারা সিনেমা সিরিয়ালে কাজ করি তারা একটা ছাড় পাই স্কুল থেকে। তবে রেজাল্ট ভাল না করলে সেই ছাড় আর পাওয়া যাবে না। তাই কাজ আর পড়া— দু’দিকেই সিরিয়াস থাকতে হয় আমাদের।

শ্রেয়শ্রী রায়

শ্রেয়শ্রী রায়। ছবি জি বাংলার ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।

ছবির অফার এসেছে এর মধ্যে?
শ্রেয়শ্রী: এসেছিল। কিন্তু হ্যাঁ বলার আগেই সব না হয়ে গিয়েছিল।

রুবেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কেমন?
শ্রেয়শ্রী: ভীষণ ভাল বন্ধুত্ব রুবেল দার সঙ্গে আমার। আমরা কুড়ি ঘণ্টাই থাকি সেটে। ফলে, ওকে কো-অ্যাক্টরের থেকেও বেশি দাদা বলে মনে হয়। সারা দিন কাজ নিয়ে কথা তো হয়ই, কত খুনসুটি, কত ঝগড়াও হয়। ঠিক যেমন ভাইবোনের মধ্যে হয়।

আর সেটে ঢুকেই বর-বউ খেলা!
শ্রেয়শ্রী: ওটাই তো মজা! হা হা হা।

অভিনয়ের ইচ্ছা কি অনেক দিন থেকেই?
শ্রেয়শ্রী: না। ভাবিওনি কখনও যে সিনেমা- সিরিয়াল করব। ছোটবেলায় কত কী হওয়ার কথা ভাবতাম! কখনও ভাবতাম শেফ হব, কখনও আর্মিতে যোগ দেব, কখনও টিচার হব, উকিল হব। মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল, মেয়েকে টেলিভিশনে দেখার। মা খুব পছন্দ করেন এই বিনোদন জগৎটা। বলতে পারো, মায়ের অনুপ্রেরণাতেই এই ফিল্ডে আসা। আর এখন নিজে কাজ করতে করতে একটা ভালবাসা জন্ম নিয়েছে। মায়ের তো বটেই, বাড়ির সকলেরই সাপোর্ট আছে আমার অভিনেত্রী হওয়ার পিছনে। অভিনয়টাই আমি করব। এটাই আমার হবে।

লোকনাথ থুড়ি অরণ্য রায়চৌধুরী বড় হয়ে আইপিএস অফিসার হতে চায়

অভিনয়ের পাশাপাশি অন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে?
শ্রেয়শ্রী: সাইকোলজিস্ট হওয়ার ইচ্ছা আছে।

সাইকোলজি সাবজেক্টটাও তো একটা ম্যাজিক?
শ্রেয়শ্রী: হ্যাঁ, মানুষের মন পড়ে নেওয়াটাও তো একটা ম্যাজিকই। তাই আমি এই বিষয়টা নিয়েছি। একটা সুপ্ত বাসনা আছে এটাকে ঘিরে।

আজকের ভানুমতীকে দেখে পাড়ার লোকজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরা কী বলছে?
শ্রেয়শ্রী: রাস্তায় বেরোলে সবাই ভানুমতী বলেই ডাকে। ভাল তো লাগেই। এমনকি আমার বড় কাকু, দাদারা ফোন করে আগে বুবুন কেমন আছিস জিজ্ঞেস করত, এখন বলে— কী রে ভানু কেমন আছিস? শ্রেয়শ্রীটা তো কেউ বলেই না এখন আর। স্কুলের বন্ধুরাও ভানুমতী বলেই ডাকে। আর সেটে এলে তো মনেই হয় না যে আমার নাম শ্রেয়শ্রী। মনে হয় আমার নাম ভানুমতীই।

তোমার সঙ্গে টলিউডের ব্যস্ততম অভিনেত্রী নুসরত জাহানের মুখের মিল আছে। তুমি কী বলো?
শ্রেয়শ্রী: আমাকে নুসরতের মতো দেখতে! আজ ভাল করে আগে মুখটা দেখব আয়নায়। তার পর বলব তোমাকে। হাহাহাহহা!