বারাসত থেকে গত পাঁচ মাসে ঘর ছেড়েছে ৫০০ House Wife, অবাক করা পরিসংখ্যান, কিন্তু কেন

House Wife

অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সমাজ। সমাজ মানে কী? সমাজ মানে আমরা, যারা এই সমাজের অংশ। যারা নিয়ম তৈরি করি, আবার যারা নিয়ম ভাঙারও চেষ্টা করি। সমাজ মানে মানুষ। আর সেই মানুষের মধ্যেই বড্ড ধৈর্য্যের অভাব। পান থেকে চুন খসলেই কেউ মেনে নিতে পারছেন না, আর তাতেই বাড়ছে জটিলতা। সে সম্পর্ক যাই হোক না কেন, মানিয়ে নেওয়ার মানুষের বড্ড অভাব। সদ্য একটি খবর বেশ চমকে দেওয়ার মতো সামনে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত। জেলা সদরও বটে। আর সেখানেই নাকি গত পাঁচ মাসে স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে চলে গিয়েছেন ৫০০ House Wife । কিন্তু কেন? এই ঘটনা শুধু বারাসতের নয়। এই ঘটনা পুরো দেশের। যাদের মধ্যে অনেকেই টিকে রয়েছেন সমাজের ভয়ে।

অদ্ভুত না!


প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক— বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আর চমকে দেয় না। এ যেন এখন খুবই স্বাভাবিক। কেউ আনন্দে নেই, কারও মনে সুখ নেই, দিনের শেষে ঘরে ফিরে কেউ শান্তি পায় না। নিজের সঙ্গীর সঙ্গও ভালো লাগে না। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই মানসিক পরিস্থিতি ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখি। বৈবাহিক সম্পর্ক ভাঙছে, মন ভাঙছে, সংসার ভাঙছে প্রতিনিয়ত। আবার অনেকেই মুখ বুজে মানিয়েও নিচ্ছেন, এই সংখ্যাটাও নেহাৎই কম নয়। আর এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ভুল পদক্ষেপ নিয়ে বিপদেও পড়ছেন। সব মিলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সমাজ।

কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে?

বারাসতের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সেখান থেকে ৫৩৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ জনই গৃহবধূ। অনেকেরই বিয়ের বয়স খুব বেশি নয়। কারও কারও সন্তানও রয়েছে। খুব সাদা চোখে দেখলে দেখা যাবে, সবার স্বামীরা কাজে ব্যস্ত, কেউ থাকে ভীন দেশে বা ভীন রাজ্যে। এক বাড়িতে বসবাস করলেও একে অপরের জন্য সময় নেই। বিশেষ করে যাঁরা গৃহবধূ তাঁরা সারাদিন স্বামী অপেক্ষার বসে থাকার পর যখন ক্লান্ত হয়ে তিনি বাড়ি ফিরছেন তখন আর স্ত্রীর কথা শোনার মতো মানসিকতা নেই। এই অবস্থায় নৈকট্য বাড়ার কথা যেখানে ছিল সেখানে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে দুরত্ব। আর এই মানসিক দুরত্বই জীবনে তৃতীয় ব্যক্তিকে ডেকে আনছে। যাঁরা বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন, তাদের পরকীয়া তারা বাইরে রেখে আসছেন। আর যারা বাড়িতে থেকে পরকীয়ায় জড়াচ্ছেন তাঁরা শেষ পর্যন্ত স্বামীয, সংসার ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

বারাসতের ঘটনায় আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে, সেটা হল এই সব মহিলারা ঘর ছেড়েছেন কোনও না কোনও পরিচিতের সঙ্গেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সেই ব্যক্তি তাঁর স্বামীরই পরিচিত, বা পাড়ার কেউ, আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগ। এবং পুলিশ তাঁদের ফেরাতে গেলে অনেকেই না ফেরার বার্তা দিয়ে দিচ্ছেন। তার মধ্যে হাতে স্মার্ট ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার দাপট তো রয়েছেই। যা সহজ করে দিয়েছে যোগাযোগ। মনোবিদরা বলছেন, একে অপরের প্রতি আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। আর তার কারণ বাহ্যিক চাপ, বাইরের প্রলোভন তো আছেই। সঙ্গে সাহস যেটা অতীতে ছিল না মহিলাদের বিশেষ করে, সেটাও যথেষ্ট বেড়েছে। মহিলারা নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে শিখেছে, আর সেখানেই বিপদ বেড়েছে। তার মানে এই নয়, একটা পরিবারকে অসহায় করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটা কোনও সুরাহা হতে পারে। সাহস করে বাড়ি ছাড়তে পারলে, সাহস করে সবাইকে জানিয়েই সম্পর্ক ছেদ করা যায়। যদিও সেই কাজ এখনও এই সমাজে বেশ কঠিন।

সব মিলে সম্পর্কগুলো সব জগাখিচুরি পাকিয়ে গিয়েছে। এমন জট তৈরি হয়েছে মানুষের মনে যে সেই জট ছাড়িয়ে আর সম্পর্কগুলো  স্বাভাবিক হচ্ছে না। আজই দেখলাম, একজন মহিলা তাঁর পছ‌‌ন্দের পুরুষকে জীবনে না পেয়ে বদলা নিতে ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়েছেন, নিজেকেই বিপদে ফেলে দিয়েছেন। আর প্রেম করে, বিয়ে করেও এক সঙ্গে থাকা যাচ্ছে না, এই নজিরের তো কোনও শেষ নেই। ঘরে, বাইরে এক সঙ্গে একাধিক সম্পর্ক এখন যেন জলভাত, যার প্রভাব পড়ছে পরবর্তী প্রজন্মের উপর। নতুন প্রজন্মকেও একটা সুস্থ পরিবেশ দেওয়ার দায় আমাদের রয়েছে। তাই যে কোনও সম্পর্ক সুস্থভাবেও শেষ করা যায়। যে সম্পর্ক সম্মান, ভালোবাসা, সুখ, আনন্দ দিচ্ছে না দিনের পর দিনে সেই সম্পর্কে না থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ জীবন একটাই, আর সবার ভালো থাকার অধিকার রয়েছে। তবুও জীবনসঙ্গীকে সময় দিন, তবে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবেন না। অতিরিক্ত প্রেম আবার দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তার পর যার ছেড়ে যাওয়ার সে তো যাবেই, তবে যার থাকার সে কিন্তু থেকে যাবে সারা জীবনের জন্য।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle