সম্প্রীতি দত্ত: বাঙালি খাদ্যরসিক। তার ওপর শীতকাল হলে তো আর কথাই নয়। তার মেনুতে যোগ হয় নানা রকমের খাবার। পিঠেপুলি থেকে পাটিসাপটা, নলেন গুড়ের রসগোল্লা, সন্দেশ আরও কত কী! এ ছাড়া এ সময়ে রঙিন আনাজপাতিতে বাজার ভরে থাকে ফলে বাড়ির রান্নাতেও হয় তাদের উপস্থিতি। শীতে খেতেও কোনও অসুবিধা হয় না। গরমের মতো ঘাম না হওয়ায় খওয়াও যায় বেশী। ঠান্ডায় জড়ো সড়ো হয়ে খেতেও লাগে বেশ ভাল। আর যত দিন যাচ্ছে বাঙালি নানা ধরনের খাবার খেতেও শিখছে। ইতালীয়, মেক্সিকান, চাইনিজ আরও বিভিন্ন ধরনের খাবার। তাই শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঙালিরও চলে চুটিয়ে খাওয়া-দাওয়া।
শীতের মরসুম মানেই উৎসবের মেজাজ। বিয়েবাড়ি, পিকনিক, গেট টুগেদার তো আছেই এখন আবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে খাদ্যমেলা। তাই শীত পড়তেই শহরের বিভিন্ন জায়গাতেই শুরু হয়ে যায় এই মেলা। প্রতিবার বছরের শুরুতেই বউবাজারের সন্তোষ মিত্র স্কয়ারে হয় সবচেয়ে বড়ো খাদ্যমেলা। যার নাম চেটেপুটে। এবছরে ১২ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা চলল। বিশাল বড়ো মাঠ প্রাঙ্গনে এই মেলার আয়োজন করা হয়। একটা জায়গায়তেই বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। আর প্রবেশ মূল্য মাত্র ২০ টাকা। সেই কারণেই বিভিন্ন মানুষ এখানে ছুটে আসে সব থেকে বড়ো ‘পুজো’ পেট পুজো করতে।
বিভিন্ন ধরনের স্টল এখানে সারি বেঁধে বসে। কী নেই এখানে! মিত্র কাফে, বিজলি গ্রিলের ফিস কবিরাজি, মটন কাটলেট থেকে ঘোষ, মাখনলালের সন্দেশ, সুন্দরবনের মাছ দিয়ে তৈরি নানা পদ, দিঘার ফুডস্টল এমনকি তুর্কিশ আইস্ক্রিম পর্যন্ত পাওয়া যাবে এইখানে। এত খাবারের লোভ সামলাতে না পেরে নিজ পেটকে শান্ত করতে নিজেই চলে গেলাম চেটেপুটেতে। মেলা হিসেবে দামও যথার্থ এখানে।
চেটেপুটের শেষ দিন অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম সন্তোষ মিত্র স্কয়্যারে। একেই রবিবার তার ওপর খাদ্যমেলা ফলে তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না অত বড়ো মাঠেও। তবু ঢুকতে তো হবেই। এসেছি তো খাবার জন্যই। না খেয়ে তো আর ফিরে যেতে পারি না। তাই ওই ভিড়ের মধ্যেও ধাক্কা খেতে খেতে ঢুকে পড়লাম সেখানে। সার দিয়ে দাঁড় করানো স্টলগুলোর সামনে যেতেই নিজের লোভকে আর সামলানো গেল না। বুঝতেই পারছিলাম চারিদিকের গন্ধে জিভ থেকে জল এবার বেরিয়ে এল বলে। লোকসমাজে এরকম হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই পটাপট মুখে পুরে দিলাম দুটো বড়ো বড়ো চকোলেট সন্দেশ। সে কি অপূর্ব স্বাদ।
তারপর এদিক ওদিক ঘুরে একে একে ফিস কবিরাজি, মটন কাটলেট সব এক নিমেষে চেটেপুটে সাফ করে দিলাম। সঙ্গে খানকয়েক মিষ্টিও চলেছে। এখন অনেক বাড়িতেই নানা ব্যাস্ততার কারণে পৌষপার্বণের রীতি মেনে পিঠেপুলি উৎসব পালন করা হয় না। ফলে বাড়ির তৈরি পিঠে খাওয়ার স্বাদ থেকেই যায়। এখানে এসে তা একেবারে পূরণ হয়ে গেল। বাড়ির তৈরি পিঠেপুলির মতোই এখানকার পিঠের স্বাদ। তাও মাত্র ৩০ টাকায়। বাঙালির ঐতিহ্যকে যেমন ধরে রাখা হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন অবাঙালি খাবারও রয়েছে। বেনারসী পান, পাহাড়ি মোমো এগুলো তো আছেই। নতুন হল, তুর্কিশ আইস্ক্রিম। এর বিশেষ দিক হল বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দোকানি খরিদ্দারকে আইস্ক্রিম দেবে। হ্যাঁ, আমার ধৈর্যশক্তি একটু কম। মুখের সামনে আইস্ক্রিম ধরে রেখেও আমায় তা দেবে না। সেখানে কী করে ধৈর্য ধরে রাখা যায়। তাই ২৫০ টাকা খরচ না করে সাধারণ আইস্ক্রিমই খেয়েছি।
খাওয়া দাওয়ার সঙ্গে ছিল মনোরম পরিবেশ। বড়ো স্টেজে একের পর এক শিল্পির অসাধারণ গান। যা খাওয়া দাওয়ার স্বাদকে আরও বেশী মাত্রায় যেন বাড়িয়ে তুলেছিল। সব শেষে এখন একটি বহু প্রচলিত পদ ‘ব্যাম্বু বিরিয়ানি’ প্যাকিং করে নিয়েছিলাম রাতের খাবারের জন্য। সারা সন্ধ্যে সেখানে এতটা রমরমা করে পেটপুজো করেছি যে সেই বিরিয়ানি ওখানে দাঁড়িয়ে খেতে পারিনি। তাই তা বাড়ি নিয়ে আসা। এত সুন্দর পরিবেশ তার সঙ্গে এত স্বাদের পদ পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া তা আর কোথাওই পাওয়া যাবে না।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google