জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সেই পুরনো রোগেই ফের পিছিয়ে পড়ল ইস্টবেঙ্গল এফসি। হিরো আইএসএলের সেমিফাইনালিস্ট হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দু’গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়তে হল তাদের। ম্যাচের শেষ দিকে ১৩ মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল করে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল হায়দরাবাদ এফসি। আর প্রায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে হিরো সুপার কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার মুখে লাল-হলুদ ব্রিগেড।
বৃহস্পতিবার রাতে মাঞ্জেরির পাইয়ানাড স্টেডিয়ামে হিরো আইএসএল ২০২১-২২-এর নক আউট চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-১-এ এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। চতুর্থ ও ৪৫ তম মিনিটে গোল করে দিনের নায়ক হয়ে উঠতে পারতেন নাওরেম মহেশ সিং। ১৭ মিনিটের মাথায় তৃতীয় গোলটি করেন ভিপি সুহের। ১১ মিনিটের মাথায় একটি গোল শোধ করেন হায়দরাবাদের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও।
কিন্তু ৭১ মিনিটে সিভেরিও ও ৮৩ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত ফরোয়ার্ড আব্দুল রাবির গোলে লাল-হলুদের জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এ দিন ফের একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে কলকাতার দল। এই ড্রয়ের ফলে গ্রুপ বি-তে চার পয়েন্ট করে পেয়ে ওড়িশা এফসি ও হায়দরাবাদ এফসি শীর্ষে রয়েছে। ইস্টবেঙ্গল এফসি দু’পয়েন্ট পেয়ে তিন নম্বরে। তাদের শেষ ম্যাচ পয়েন্টহীন আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে। হায়দরাবাদ ও ওড়িশার মধ্যে ম্যাচও বাকি। ওই ম্যাচে যারা জিতবে, তারাই সেমিফাইনালে উঠবে। যদি ওই ম্যাচে ড্র হয় ও ইস্টবেঙ্গল চার-পাঁচ গোলের ব্যবধানে আইজলকে হারাতে পারে, তা হলে হয়তো শেষ চারে জায়গা হতে পারে তাদের।
এ দিন প্রথমার্ধে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করলেও দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ থেকে কার্যত হারিয়ে যান লাল-হলুদ ফুটবলাররা। বল দখলের লড়াইয়ে তারা অনেকটাই পিছিয়ে (৪১-৫৯) পড়ে। ম্যাচের বয়স সাড়ে তিন মিনিট হওয়ার আগেই নাওরেম মহেশ সিংয়ের গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। মাঝমাঠ থেকে যখন মহেশকে গোলের পাস বাড়িয়ে প্রতি আক্রমণ শুরু করেন ক্লেটন সিলভা, তখন হায়দরাবাদের অর্ধে গোলকিপার গুরমিত সিং ছাড়া কেউই ছিলেন না। মহেশ তীব্র গতিতে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের দিকে এগিয়ে যান। তাঁকে বাধা দিতে বক্সের বাইরে বেরিয়ে আসেন গুরমিত। তাঁকে ড্রিবল করে সোজা গোলে শট নেন মহেশ (১-০)।
তবে সাত মিনিটের মধ্যেই তা শোধ করে দেন হাভিয়ে সিভেরিও। বাঁ দিক থেকে হোলিচরণ নারজারির মাপা ক্রসে হেড দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড (১-১)। এর চার মিনিট পরে, ১৭ মিনিটের মাথায়, ফের গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ইস্টবেঙ্গল এফসি। এ বার অনবদ্য গোল করেন ভিপি সুহের। বাঁ দিকের উইং থেকে উড়ন্ত ক্রস বক্সের মধ্যে ফেলেন মহেশ। উদ্দেশ্য ছিল জেক জার্ভিস। তিনি গোলে শট নিলেও তা গুরমিতের হাতে লেগে ছিটকে চলে যায় বক্সের ডানদিকে, যেখানে ছিলেন সুহের। সময় নষ্ট না করে মাপা কোণাকুনি শটে দ্বিতীয় পোস্টের ওপরের কোণ দিয়ে বল গোলে ঢুকিয়ে দেন (২-১)।
বিরতির ঠিক আগে, ৪৫ মিনিটের মাথায় তাঁর দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন মহেশ। ডান দিক থেকে ক্লেটন সিলভার মাপা ক্রস গুরমিতের হাতে লেগে ছিটকে এলে তা সোজা গোলে শট নেন মহেশ (৩-১)। ক্লেটনের ক্রসের উদ্দেশ্য ছিল অবশ্য জার্ভিস। কিন্তু তাঁর কাছে বল পৌঁছনোর আগেই গুরমিত তা আটকে দেন। তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। বক্সের মধ্যে মহেশও ছিলেন কার্যত অরক্ষিত।
৬৮ মিনিটের মাথায় জার্ভিসের জায়গায় জর্ডন ও’ডোহার্টিকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। অন্য দিকে, জোয়েল চিয়ানিজকে তুলে বোরহা হেরেরাকে নামায় হায়দরাবাদ। তিনি নামার পরেই দলের দ্বিতীয় গোল তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট নিয়ে। কমলজিৎ সেই শট আটকালেও বল তাঁর হাত থেকে পিছলে যায় এবং সেই বলে বেশ কঠিন কোণ থেকে শট নিয়ে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন সিভেরিও (৩-২)। ৮২ মিনিটের মাথায় আব্দুল রাবির গোলে দ্বিতীয় বার সমতা এনে ফেলে হায়দরাবাদ। বাঁদিক থেকে আসা ক্রসে হেড করে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন অ্যারেন ডিসিলভা। তিনি ব্যর্থ হলেও বল চলে আসে রাবির কাছে। তিনি ব্যর্থ হননি, তাঁর জোরালো শট সোজা গোলে ঢুকে পড়ে (৩-৩)।
ইস্টবেঙ্গল দল: কমলজিৎ সিং (গোল), অতুল উন্নিকৃষ্ণন, লালচুঙনুঙ্গা, সার্থক গলুই, তুহীন দাস, অ্যালেক্স লিমা, মোবাশির রহমান (চ্যারিস কিরিয়াকু), ভিপি সুহের (সুমিত পাসি), নাওরেম মহেশ, জেক জার্ভিস (জর্ডন ও’ডোহার্টি), ক্লেটন সিলভা।
(লেখা -ছবি: আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে