জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কোনও দলের সাফল্য শুধু যে তাদের পারফরম্যান্স ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, তা নয়। অনেকটাই নির্ভর করে তাদের প্রতিপক্ষের ওপরও। প্রতিপক্ষ যদি কঠিন হয়, তা হলে যে কোনও দলের কাছেই সাফল্য অর্জন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ বারের এএফসি কাপে এটিকে মোহনবাগানের (AFC Cup ATKMB Opponent) কথাই ধরা যাক। সমর্থকেরা আশাবাদী, এ বার হয়তো তাদের প্রিয় ক্লাব ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের গণ্ডী পেরোবে।
গতবার যে রকম ভাবে এই রাউন্ডের ম্যাচে উজবেকিস্তানের এফসি নসফের বিরুদ্ধে তাদের ০-৬-এ হেরে হেনস্থা হতে হয়েছিল , এ বার বোধহয় তার পুনরাবৃত্তি হবে না। কারণ, এ বার তাদের সামনে অপেক্ষাকৃত সহজ দল, যার নাম কুয়ালা লামপুর সিটি এফসি (কেএলসি এফসি)। কিন্তু সত্যিই কি প্রতিপক্ষ হিসেবে সহজ হবে কেএলসি এফসি? মালয়েশিয়ার এই ক্লাব ও তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর নিয়ে দেখা যাক, এর উত্তর পাওয়া যায় কি না।
সাফল্যের খতিয়ান
প্রায় অর্ধশতাব্দী (৪৮ বছর) পুরনো এই ক্লাব এখন সে দেশের এক নম্বর লিগ মালয়েশিয়ান সুপার লিগের অন্যতম অংশগ্রহনকারী দল। দু’বার মালয়েশিয়ান লিগ জিতেছে তারা। দেশের মাটিতে তারা এফএ কাপ ও চ্যারিটি শিল্ড জিতেছে তিনবার করে। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও দু’বার অংশ নিয়েছে তারা।
মালয়েশিয়ান সুপার লিগে তারা খেলছে ২০১০ থেকে। তবে টানা নয়। ২০১০ থেকে ১২ এই লিগে খেলার পরে তাদের অবনমন হয় এবং ২০১৩-য় তারা দ্বিতীয় সারির প্রিমিয়ার লিগে খেলে। তার পরের বছর তৃতীয় সারির এফএএম লিগে খেলতে হয় তাদের। ২০১৫ থেকে ২০১৭ তারা ফিরে আসে প্রিমিয়ার লিগে এবং ২০১৮-য় আবার সুপার লিগে জায়গা করে নেয়। ২০২০-তে তারা ১২ দলের মধ্যে তিন নম্বরে ছিল। গত বছরে ৬ নম্বরে থেকে শেষ করে তারা।
প্রথম এফসি কাপেই সাফল্য
তবে এশীয় স্তরের টুর্নামেন্টে তাদের ইদানীং বড় একটা দেখা যায়নি। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত এসিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ ও এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপে খেলার পরে প্রায় ২৬ বছর এশীয় স্তরের টুর্নামেন্টে অনুপস্থিত থাকার পরে ২০২২-এর এএফসি কাপে অংশ নেয় তারা। এবং প্রথম এএফসি কাপেই ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে কুয়ালা লামপুর সিটি এফসি। এটা কম বড় ব্যাপার।
যাদের হারিয়ে ইন্টার জোন সেমিফাইনালে উঠেছে কেএলসি, সেই ইন্দোনেশিয়ার পিএম মাকাসারের বিরুদ্ধেই এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচ খেলে তারা। সেই ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে দ্বিতীয় ম্যাচে সিঙ্গাপুরের টাম্পাইন রোভার্সকে ২-১ গোলে হারায় মালয়েশিয়ার দলটি। গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দল হিসেবে আসিয়ান জোন সেমিফাইনালে পৌঁছয় তারা এবং সেই পর্বে ভিয়েতনামের ভিত্তেল এফসি-কে টাই ব্রেকারে হারায়। নির্দিষ্ট সময়ে গোলশূন্য থাকার পরে পেনাল্টি শুট আউটে ৬-৫-এ জেতে কেএলসি। গত মাসের শেষে আসিয়ান জোন ফাইনালে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ৫-২ গোলে পিএসএম-কে হারিয়ে বুধবার যুবভারতীতে এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি তারা।
তারকাদের সাম্প্রতিক ফর্ম
এই দলের দুই স্তম্ভ কঙ্গোজাত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার রোমেল মোরাল, যিনি দেশের এক নম্বর লিগে ১৫টি গোল করে দলের সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন। মাঝমাঠে তাঁর সঙ্গী ব্রাজিলের পাওলো জোসু দলের অন্যতম অধিনায়ক। এএফসি কাপে চারটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি, তার মধ্যে দুটিতে জোড়া গোল করেছেন এই ব্রাজিলীয়। আসিয়ান জোন ফাইনালে ৫২ মিনিটে ও ৮৪ মিনিটে গোল করেন তিনি। ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছিলেন রোমেল। এই টুর্নামেন্টে অবশ্য এটিই তাঁর একমাত্র গোল।
সেই ম্যাচে রোমেল মোরালেস গোলের খাতা খোলার পরে জোড়া গোল করেন জর্ডান মিন্টা। দলের ব্রাজিলীয় তারকা পাওলো জোসু ও হাডিন আজমান ম্যাচের শেষ দিকে বাকি দু’টি গোল করেন পেনাল্টি থেকে। আগাগোড়া আধিপত্য বিস্তার করা এই ম্যাচে কেএলসি ন’টি শট গোলে রাখে। ইন্দোনেশিয়ার দলটি তিনটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি। বল দখলেও এগিয়ে ছিল কেএলসি (৫৪-৪৬)।
এ ছাড়া ফিলিপিন্সের গোলকিপার কেভিন মেনডোজা, আর এক সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার অস্ট্রেলিয়ার রায়ান লাম্বার্ট, ঘানার সেন্টার ফরোয়ার্ড জর্ডান মিন্টা এই দলের নির্ভরযোগ্য সদস্য। দলের প্রধান কোচ ক্রোয়েশিয়ার বোজান হোডাচ, যিনি ২০১২ থেকে মালয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে দু’বছর (২০১৭-১৯) দেশের জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলেরও কোচ ছিলেন। তবে তার পরে ক্লাব ফুটবলেই ফিরে আসেন।
২০২০ পর্যন্ত পিএসএম মাকাসার দলের কোচের দায়িত্বে থাকার পরে গত বছর কুয়ালা লামপুর সিটি এফসি-র দায়িত্ব নেন। তাঁরই প্রশিক্ষণে কেএলসি ২২ বছর পরে মালয়েশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে এবং চ্যাম্পিয়নও হয়। ওই টুর্নামেন্টে খেতাব জয়ের সুবাদেই এই প্রথম এএফসি কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে কুয়ালা লামপুর সিটি এফসি।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google