জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হিরো আইএসএল ২০২২-২৩ মরশুমের প্রথম ম্যাচে নামছে তাঁর দল। গতবার লিগ তালিকার একেবারে নীচে থাকার পরে এই মরশুমে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই এবং এই লড়াইে তাদের পথ দেখানোর জন্য এসেছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন (Stephen Constantine)। কোচিতে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নামার আগেই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁর দল এ বার হারতে বা লিগ টেবলের নীচে থাকতে আসেনি, লড়াই করতে এসেছে। কেমন হতে পারে এ বারের সেই লড়াই, তা শুক্রবার কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামেই বোঝা যাবে। কিন্তু তার আগে কী বলছেন লাল-হলুদ কোচ কনস্টান্টাইন, তা জেনে নেওয়া যাক। বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠকের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে দেওয়া হল।
গত দুটি মরশুম ইস্টবেঙ্গলের যে রকম কেটেছে, তার পরে আপনার কি মনে হয় এ বার সমর্থকেরা ভিন্ন কোনও ছবি দেখতে পাবেন? ভারতীয় দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার কতটা কাজে লাগবে?
আমি সাত বছর ধরে ভারতে কোচিং করার পরে ভেবেছিলাম এ দেশের প্রধানমন্ত্রীই নিজের হাতে আমাকে এ দেশের পাসপোর্ট দেবেন। ভারতীয় খেলোয়াড়দের ভাবনা, উপলব্ধি এগুলো খুব ভাল ভাবে জানি আমি। এটা অবশ্যই হয়তো আমাকে সুবিধা জোগাবে। তবে অতীত, অতীতই। গত দুবার যা হয়েছে, তা আমার হাতে ছিল না। পরের মরশুমে কী হতে পারে, তা কিছুটা আমার হাতে রয়েছে। সবাই খুব পরিশ্রম করেছে। কম সময়ের জন্যই আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ছ’সপ্তাহ আগে আমার হাতে মাত্র ১২ জন ছিল। এখন আমার স্কোয়াডে ২৬ জন আছে। তারা সবাই যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। তার ফল কী হতে পারে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে কালকের ম্যাচে। এখনও আমরা পুরোপুরি তৈরি নই ঠিকই। তবে এটুকু নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি। কাল আমরা হারার জন্য নামব না বা এই লিগে আমরা একেবারে নীচে থাকার জন্য খেলছি না।
সম্প্রতি ইস্টবেঙ্গল নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সে সব সামলে কী ভাবে আপনি কালকের ম্যাচে দলটাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসবেন বলে ভাবছেন?
দলের আভ্যন্তরীন ব্যাপার নিয়ে সবার সামনে কিছু বলতে চাই না। ৪ অগাস্ট যখন প্রথম আসি, তখন সোজা অনুশীলনের মাঠে যাই। সে সব নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। এখন আমাদের প্রথম ম্যাচে নামতে হবে, যেখানে প্রতিপক্ষ কেরালা ব্লাস্টার্স যথেষ্ট ভাল প্রতিপক্ষ। ওদের কোচ ইভান দু’বছর ধরে দলটার সঙ্গে কাজ করছে। ও দলের অনেক খেলোয়াড়কেই ভাল ভাবে চেনে, বোঝে আবার ফুটবলাররাও ওকে ভাল চেনে। আমাদের পক্ষে ম্যাচটা কঠিন হতে চলেছে। সব ম্যাচই কঠিন। আমাদের ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। প্রতি ম্যাচে জেতার চেষ্টা করতে হবে। প্রতি ম্যাচ জিতবই, বলতে পারছি না। কিন্তু হারার মতোও খেলব না। কালকের ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেলে ছেলেরা প্রচুর আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাবে।
এই মরশুমে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আপনার দলের প্রধান শক্তি কী হতে চলেছে?
লিগ টেবলের নীচে থাকার পরিকল্পনা অবশ্যই নেই আমাদের। দলের সবাই নতুন। তবে দলটা গড়ে ওঠার জন্য সময় তো দিতেই হবে। প্রত্যেককে নিজেদের ভূমিকা বোঝার জন্যও সময় দিতে হবে। প্রতি দলে নিজেদের সেরাটা তো দিতেই হবে। এটা ন্যূনতম চেষ্টা। ভুল হতেই পারে। ভুল ক্ষমা করে দিই। কিন্তু যারা চেষ্টা করে না, তাদের ক্ষমা করতে পারি না। এই ম্যাচে কোনও ভুল হলে চলবে না। আপাতত আমরা পরবর্তী ম্যাচ নিয়েই শুধু ভাবছি। প্রার্থনা করুন, ভাগ্য যাতে আমাদের দিকে থাকে।
আপনার দলের তিন বিদেশির (ক্লেটন, আইএসএলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারাই কি আপনার দলের মেরুদন্ডের জোর বাড়াবে বলে মনে করেন?
বিদেশি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা আইএসএলের অভিজ্ঞতার দিকটা দেখেছিলাম। এরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে। প্রত্যেকেই দৃঢ়চরিত্রের অধিকারী। কারও কোনও সমস্যা নেই। যে বিদেশিরা নতুন আসে, তাদের বোঝাপড়া গড়ে তুলতে অসুবিধা হয়। ভারতের ফুটবলে কী ভাবে কী হয়, তা বুঝতে ওদের অনেকটা সময় লেগে যায়। সে জন্যই ওদের অভিজ্ঞতা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
এ বার থেকে ছ’টি দল নক আউটে উঠবে। এই ব্যাপারটা আপনি কী ভাবে দেখছেন? প্রথম ছয়ে থাকাই কি আপনাদের বাস্তবসম্মত লক্ষ্য?
ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, লিডস ইউনাইটেড, ম্যান ইউনাইটেড—এই দলগুলো কোনও না কোনও সময় প্রিমিয়ার লিগে অবনমনের আওতায় পড়েছে। ম্যান সিটি একসময় লিগ ৩-এ নেমে গিয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস ইতিহাসই। কেউ যদি ঠিক পথে না চলে, তা হলে তাকে তার মাশুল দিতেই হবে। যেমন কেরালা ব্লাস্টার্সের কথাই ধরুন। ওরা গত মরশুমে চতুর্থ স্থানে ছিল। মাত্র ন’বছরের ক্লাব ওরা। আর আমাদের ক্লাবের বয়স ১০৩ বছর। সেই ইতিহাসের দিকে তাকালে তো ভাল লাগেই। কিন্তু সেই ইতিহাস ধরে রাখতে গেলে বর্তমানেও সাফল্য ধরে রাখতে হয়।
প্রথম ম্যাচেই আপনার দলের ছেলেদের দর্শকের গগনভেদী চিৎকার সহ্য করে খেলতে হবে। এর জন্য দলের ফুটবলারদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেছেন আপনি?
যতক্ষণ না এ রকম দর্শকের সামনে খেলতে মাঠে নামছে ওরা, ততক্ষণ ব্যাপারটা রপ্ত হবে না। এর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। দলের অনেকেরই ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আইএসএলে খেলারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। যে ব্যাপারগুলো আমাদের হাতে নেই, সেগুলো নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করি না। আশা করি, কাল আমরা দর্শকদের চুপ করিয়ে রাখতে পারব। তবে তা নির্ভর করছে, আমরা কেমন খেলব ও খেলার ফল কী হবে।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য আপনার কী বার্তা?
অনেকবার এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। সমর্থকেরা আমাদের কাছে অপরিহার্য্য। ওদের ছাড়া আমাদের চলবে না। এ পর্যন্ত সমর্থকদের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছি, তা অভাবনীয়। এ বারেও আশা করি তার অন্যথা হবে না। জানি না কাল কতজন মাঠে আসবেন। আশা করি, হাজার খানেক-দু’হাজার।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google