জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: এশিয়ান গেমস ২০১৮ , লড়াইটা ছিল এশিয়ান গেমস শুরু হওয়ার আগে থেকেই। ছিল অদ্ভুত এক প্রতিবন্ধকতা। যার উপর স্বপ্না বর্মনের কোনও হাত ছিল না। সংশয় ছিল সেই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কতটা সাফল্য আসবে তা নিয়ে। স্বপ্ন নিজেই এশিয়ান গেমসে যাওয়ার আগে সেই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। সংশয় ছিল তাঁরও। কিন্তু সেই সব সমস্যাকে সঙ্গে নিয়েই নিজের ইভেন্টে বাজিমাত বাংলার মেয়ের। মেয়েদের হেপ্টাথেলনে সোনা জয়।
বুধবার তিনি ট্র্যাকে নামার আগে থেকেই স্বপ্নাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর সেই স্বপ্ন সত্যি করলেন স্বপ্না। ছাপিয়ে গেলেন ৬ হাজার পয়েন্টের গণ্ডি। চিনের ওয়ান কুইংলিং শেষ পর্যন্ত লড়াই দিলেন। কিন্তু স্বপ্না শেষ করলেন ৬০২৬ পয়েন্ট নিয়ে। মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার মূল ইভেন্ট জ্যাভলিন থ্রোয়ে এগিয়েই শেষ করেছিলেন স্বপ্না। তখন স্বপ্নার পয়েন্ট ছিল ৫২১৮। ওয়াংয়ের ছিল ৫১৫৫। মাত্র ৬৩ পয়েন্টের পার্থক্য ছিল দু’জনের মধ্যে। ৮০০ মিটার ছিল এই ইভেন্টের ক্লাইমেক্স। শুরুর ইভেন্টগুলোতে কিছুটা এগিয়েই ছিলেন ওয়াং। জ্যাভলিন থ্রো থেকে ঘুরে দাড়ান স্বপ্না।
এই সোনা জয়ের পিছনে স্বপ্নার সব থেকে বড় লড়াই ছিল ওঁর জুতো। দুই পায়ে ছ’টি আঙুল নিয়ে জন্ম নেওয়া স্বপ্নার বিশেষ মাপের জুতো ব্যবহার করতে হয়। সেই জুতো এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই যখন এশিয়ান গেমসের মতো ইভেন্টের জন্য নতুন জুতোয় খরচ করছে তখন স্বপ্নাকে নির্ভর করে থাকতে হয়েছিল সেই পুরো একপাটি জুতোর উপরই। আর সেই জুতো পরেই দেশকে সোনা এনে দিলেন জলপাইগুড়ির এই মেয়ে।
এই সোনাটা এত সহজেও আসেনি জেদি এই মেয়ের হাতে। প্রতিযোগিতায় নামার আগে থেকে চুড়ান্ত দাঁতের ব্যাথায় কাবু হয়েছিলেন। সেই ব্যথা নিয়েই নেমেছিলেন বুধবারও। ব্যথা যাতে খুব সমস্যায় না ফেলে তার জন্য গালে ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নেমেছিলেন স্বপ্না। ইভেন্ট চলার মধ্যে অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে তাঁকে গালে হাত দিতে। এত গেল বর্তমানের স্বপ্না। কিন্তু যে স্বপ্না এখানে পৌঁছেছেন, সেই মেয়ে এক সময় ছেড়ে দিয়েছিলেন সব। আর ট্র্যাকে না নামার পণ করে ফেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বরফ গলে কোচের আবেদনে।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের পাতকাটা গ্রামের ঘোষপাড়ায় পঞ্চানন বর্মনের চালা ঘরটা আজ যেন গর্বের পাহাড়ে উঠে এসেছে। ট্র্যাকে ফিরে সেই সময় স্বপ্না বলেছিলেন, ‘‘আমি তো বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম আমার আর ট্র্যাকে ফেরা হবে না। তাই সাই ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম চাকরি করে পরিবারের পাশে দাড়াব। বাবার কষ্টটা দেখেছি ছোটবেলা থেকে। শুধু স্যারের জন্যই ফিরতে পেরেছি।’’ আজও জিতে নিশ্চই সেই একই কথা ভেবেছেন স্বপ্না, ‘ভাগ্যিস স্যার ফিরিয়ে এনেছিলেন।’
দশম দিন নবম সোনাটি এল মনজিৎ সিংয়ের হাত ধরে
২০১৫তে পিঠের ব্যথায় কাবু স্বপ্নার ট্র্যাকে ফেরাই সংশয় ছিল। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ফিরে। ফিরে গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে। সাইয়ের কোচ সুভাষ সরকারই আবার ট্র্যাকে ফেরান স্বপ্নাকে। স্বপ্নার হতাশা কাটাতে সেই সময় তাঁকে মনোবিদের কাছেও নিয়ে যেতে হয়েছিল। তার পর থেকেই একটু একটু করে ফেরার শুরু। তার পরই এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় পুরোপুরি ফিরিয়ে দিয়েছিল স্বপ্নাকে। সেই স্বপ্না যে আজও একই রয়েছে তা প্রমাণ করে দিল আজকের সোনা। এর মধ্যে বিতর্কে জড়িয়েছেন। দোহায় এশীয় ইন্ডোর অ্যাথলেটিক্সে লেন বদলে হারাতে হয়েছে রুপো। যদিও সেটা ২০১৬র কথা। এখন সব মানিয়ে লড়াই করতে শিখে গিয়েছেন সোনার মেয়ে। স্বপ্না মনে করেন, জীবনের হার্ডল এখনও অনেক বাকি।