জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ATKMB সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন যিনি, সেই রয় কৃষ্ণাকে বিদায় জানাল এটিকে মোহনবাগান। কয়েক দিন আগে তারা ডেভিড উইলিয়ামসকেও দল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে এ বার তাঁর সঙ্গে ‘সুপারহিট জুটি’ হয়ে উঠেছিলেন যিনি, সেই রয় কৃষ্ণাকেও অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এটিকে মোহনবাগান ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ, আগামী মরশুমে সবুজ-মেরুন জার্সিতে আর খেলতে দেখা যাবে না রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামসকে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্লাবের সোশ্যাল পেজে এই সংবাদ জানিয়ে দেওয়া হয়। রয়ের বিভিন্ন মুহূর্তের ভিডিও কোলাজের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে বাজানো হয়েছে সদ্যপ্রয়াত গায়ক কেকে-র বিখ্যাত গান ‘পল’। তার সঙ্গে লেখা হয়েছে, “আ ট্রিবিউট টু কেকে, থ্যাঙ্কস ফর দ্য মেমোরিজ রয় কৃষ্ণা” (কেকে-র প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ, সুখস্মৃতির জন্য রয় কৃষ্ণাকে ধন্যবাদ)। যাতে স্পষ্ট ইঙ্গিত, উইলিয়ামসের মতো কৃষ্ণাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে দিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রয়কে নিয়ে জল্পনা চলছিল। তিনি এটিকে মোহনবাগানে থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ডেভিড উইলিয়ামসকে নিয়েও একই ভাবে বাড়তে থাকে গুঞ্জন। অবশেষে দু’জনকে নিয়েই যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়ে দিল এই মরশুমে দু’জনের কেউই থাকছেন না।
করোনার অভিশাপ কাটিয়ে যখন সদ্য গ্যালারিতে আসা শুরু করছিলেন সমর্থকেরা। আগামী মরশুমে হিরো আইএসএলের হোম ম্যাচে ফের রয়-ডেভিড জুটির জাদু দেখার অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরা, তখন ক্লাবের এই ঘোষণা নিশ্চয়ই বেশ হতাশ করবে লক্ষ লক্ষ সমর্থককে।
২০২০-২১ হিরো আইএসএলের গোল্ডেন বল জয়ী ফুটবলার রয় কৃষ্ণাকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচশো ফুটবলারদের তালিকায় রেখেছিল বিশ্বখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ‘ওয়ার্ল্ড সকার’। গত বছর তাদের এক বিশেষ সংখ্যায় সারা দুনিয়ার যে ৫০০ জন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে এই তারকা ফরোয়ার্ডেরও প্রশংসা করে তাঁকে নিয়েও বিস্তারিত লেখা হয়েছিল।
যে দেশে ফুটবলের চেয়ে রাগবি অনেক বেশি জনপ্রিয়, সেই ফিজি থেকে উঠে এসে নিজেকে ক্রমশ ফুটবল তারকার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন রয়। শুরুতে ওয়েলিংটন ফিনিক্স থেকে বাতিল হওয়ার পর ২০০৯-এ বিখ্যাত ডাচ ক্লাব পিএসভি-তে ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ পান এই ফুটবলার। ওই দ্বীপরাষ্ট্রের এক ফুটবলারের কাছে যা ছিল স্বপ্নের মতো। কিন্তু তিনি এ লিগে খেলার দিকেই বেশি মন দেন এবং ওয়েটাকেরে ইউনাইটেডে সই করে ৭৫ ম্যাচে ৫৫ গোল করে তাঁর বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ার শুরু করেন।
যারা তাঁকে প্রথমে ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই ওয়েলিংটন ফিনিক্স-ই রয় কৃষ্ণাকে পাঁচ বছরের মধ্যে রীতিমতো মোটা অঙ্কের প্রস্তাব দিয়ে নিয়ে আসে ও ১২২ ম্যাচে ৫১ গোল করে তিনি সেই ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন অর্জন করেন। ২০১৬ অলিম্পিক্সে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তিনি গোল দেন।
ওয়েলিংটন ফিনিক্সের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯-এ ভারতে চলে আসেন রয়। এটিকে এফসি-র হয়ে ভারতের এক নম্বর ফুটবল লিগ হিরো আইএসএলে প্রথম বছর খেলেই ১৫ গোল করেন তিনি। এটিকে-র সঙ্গে মোহনবাগানের সংযুক্তির পরেও তিনি ভারতেই থেকে যান ও দলের অন্যতম অধিনায়কও হয়ে ওঠেন। নতুন দল লিগে দ্বিতীয় স্থান পেলেও কৃষ্ণা কিন্তু এ বারেও সর্বোচ্চ গোলদাতার শিরোপা অর্জন করেন।
গত হিরো আইএসএলেও গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য সবুজ-মেরুন শিবিরে হুগো বুমৌস, জনি কাউকোর সঙ্গে ছিলেন রয়। ভারতে এসে প্রথম মরশুমে ১৫টি ও দ্বিতীয় মরশুমে ১৪টি গোল করার পরে গত বারও তিনি প্রচুর গোল করবেন বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কোভিড ও চোট-আঘাতের কারণে গত হিরো আইএসএলে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি ফিজির তারকা ফরোয়ার্ড। ১৬ ম্যাচে সাতটি গোল করেন ও চারটি করান।
২০২০-২১ মরশুমে এটিকে মোহনবাগান সাফল্যের মুকুট জিততে না পারলেও তাদের সেরা তারকা রয় কৃষ্ণা যে খেলা দেখান, তাঁকে অসাধারণ বললেও বোধহয় কম বলা হয়। সারা লিগ জুড়ে যে দাপট ও ক্ষিপ্রতা দেখা গিয়েছিল এই ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকারের পারফরম্যান্সে, তাতে এটিকে মোহনবাগানের প্রত্যেক প্রতিপক্ষ তাঁকে রীতিমতো সমীহ করে। তাঁকে আটকানোর জন্য আলাদা করে বিশেষ পরিকল্পনা করতে হয়েছিল প্রত্যেক কোচকে। যাঁদের পরিকল্পনা কার্যকরী হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে রয় হয়তো গোল পাননি, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে পুরোপুরি আটকানোর সাধ্য হয়নি কারও। গোল করিয়ে নিজের কর্তব্য ঠিক পালন করেছিলেন তিনি।
তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখে দলের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস বলতে বাধ্য হন, “গত মরশুমের মতোই রয় এ বারও আমার দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রথম কয়েকটা ম্যাচে ও নিজের সেরাটা দিতে পারেনি। কারণ, ছ’মাস ফুটবলের বাইরে ছিল ও। কিন্তু এখন ও আমার কাছে লিগের সেরা খেলোয়াড়”।
সে বার লিগ পর্বে এটিকে মোহনবাগান যে ক’টি গোল করেছিল, তার অর্ধেকই রয়ের করা। তিনি স্ট্রাইকার, গোল করাই যে তাঁর কাজ, তা ঠিকই। কিন্তু রয়ের কাজ যে শুধু গোল করা নয়। তা তিনি বহুবার প্রমাণ করেছেন। আক্রমণ বিভাগে তিনি যেমন সর্বদা তৎপর, তেমনই মাঝমাঠের সঙ্গে আক্রমণের যোগসূত্র স্থাপন করার কাজটাও নিয়মিত করেছেন রয়।
এমনকী, মাঝে মাঝে রক্ষণ বিভাগে নেমে এসে তাঁকে বিপক্ষের আক্রমণকারীদেরও সামলাতে দেখা যায়। সে ম্যাচের শুরুর দিকেই হোক বা শেষের দিকে। এ রকম একজন ফুটবলার সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়ালে তাঁর সতীর্থরাও উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। তাই যে কোনও কোচের কাছেই প্রিয় ফুটবলার হয়ে উঠতে পারেন রয়। সে জন্যই এ বারও রয় কৃষ্ণাকে হাতছাড়া করেনি এটিকে মোহনবাগান। দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগ হিরো আইএসএলে অংশগ্রহনকারী একাধিক ক্লাব তাঁকে বিশাল অর্থ-সহ প্রস্তাব দিয়ে রাখলেও সবাইকে পিছনে ফেলে কলকাতার ক্লাবই তাদের প্রিয় তারকাকে রেখে দেয় নিজেদের কাছেই। কিন্তু এ বার তাঁকে ছেড়ে দিতেই হল।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
গোল না করেও যে তিনি দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারেন, তার উদাহরণ রয় দেন নক আউট পর্বে। তিনটি ম্যাচে কোনও গোল পাননি তিনি। কিন্তু এই তিন ম্যাচে যে চারটি গোল পেয়েছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড, তার প্রত্যেকটাতেই ‘অ্যাসিস্ট’ করেন তিনি। লিগ পর্বেও চারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ গোলেও সাহায্য করেন তিনি। ১৪টি গোলের সঙ্গে তাই আটটি ‘অ্যাসিস্ট’-ও জমা হয় তাঁর পারফরম্যান্সের খতিয়ানে। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে মোট ৩২টি গোলের মধ্যে সব মিলিয়ে ২২টিতেই তাঁর অবদান ছিল। প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে। কিন্তু এ বার সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে তার সেই পায়ের জাদু আর দেখা যাবে না।
এটিকে মোহনবাগান ছাড়লেও হিরো আইএসএলে তিনি থাকবেন কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ভারতের এক নম্বর লিগে তিনি থাকলে দুধের স্বাদ অন্তত ঘোলে মেটাতে পারবেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা।
‘আমাদের মাঠে নেমে ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে হবে। এই গ্রুপ থেকে আমাদেরই মূলপর্বে যাওয়া উচিত’।
(তথ্য্য ও লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট)
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google