ভোটের বাজারে, রাজনীতির মঞ্চে এমনটা হামেশাই দেখা যায়। কথা পাল্টা কথার খেলা চলতেই থাকে। শব্দ ব্রহ্ম, আর সেই ব্রহ্মাস্ত্রের আঘাতেই একে অপরকে বিনাশের চেষ্টায় মেতে ওঠে দুই প্রতিপক্ষ। সবাই সবার দোষ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর অন্যকে খারাপ করে নিজে ভালো সাজার চেষ্টা মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তা বলে ভারতীয় ফুটবলের মঞ্চে এমন কাদা ছোঁড়াছুড়ি দেখতে হবে ২০২৫-এ এসে তা কে ভেবেছিল। যেটা করে চলেছেন ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনের মাথায় বসে থাকা এক ব্যক্তি আর একজন ভারতীয় ফুটবলের আইকন। কল্যাণ চৌবে বনাম Bhaichung Bhutia লড়াই এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তা থেমেও থামছে না।
কয়েকদিন আগের কথা, ভারতীয় ফুটবলের অধঃপতন নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন মহলে, প্রশ্ন উঠছিল কল্যাণ চৌবের প্রশাসন নিয়েও। তারই জবাব দিতে দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। সেখানে হিসেব দিয়ে দিয়ে তিনি অতীত ও বর্তমানের তুলনা করেছিলেন, দেখিয়েছিলেন তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় ফুটবল কতটা উন্নতি করেছে বা কী কী পরিবর্তন সেই উন্নতি নিয়ে আসতে পারে। সঙ্গে ভাইচুং ভুটিয়াকে রীতিমতো আক্রমণ শানিয়েছিলেন। যে ভাইচুং ফেডারেশনের নির্বাচনে কল্যাণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন। তবে তিনি যে আর নির্বাচনে অংশ নিতে চান না তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তার সঙ্গে কল্যাণের বক্তব্যের কাউন্টারে শুক্রবার কলকাতার স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন ভাইচুং। সেখানে তিনি রীতিমতো কাটাছেড়া করলেন কল্যাণ চৌবের প্রশাসনকে নিয়ে ।
আই লিগ প্রসঙ্গ টেনে তিনি ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে সার্কাস আর ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের জোকার বলেও আখ্যা দিলেন। তিনি বলেন, ‘‘একজনকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে তাদের ট্রফি দিয়ে দেওয়া হল তার পর তাদের থেকে এখন ট্রফি ফেরত চাওয়া হচ্ছে! মজা হচ্ছে নাকি? ফেডারেশন এখন সার্কাসে পরিণত হয়েছে আর তার ভিতরে থাকা সকলে জোকার।’’ ঠিক যেমনটা মার্কেজ মানোলোকে কোচ করার ক্ষেত্রে হয়েছিল। ভাইচুং বলছিলেন, ‘‘ওরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এসে ঘোষণা করল মানোলোকে ভারতীয় দলের কোচ করা হচ্ছে, আর বাকিরা হাত তুলে দিল। আমি বলেছিলাম, মানোলোকে টেকনিক্যাল কমিটির সামনে বসাতে। কথা বলতে। শুধু কী তাই? আমি বলেছিলাম, মিটিং, এজিএম সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করতে, ও রাজি হয়নি। কিসের এতো ভয়?’’
কল্যাণের বিরুদ্ধে তদন্তের কথাও বলেন ভাইচুং। বলছিলেন, ‘‘২০২৭ এশিয়া কাপের জন্য ভারতের বিড করার কথা ছিল। কিন্তু কল্যাণ সৌদি আরবে গিয়ে টেবলের তলায় কী বোঝাপড়া করে এল যে সবটা ঘেটে গেল। এখড় ২০৩১-এর কথা বলছে সে তো অনেক দূর। কেন এশিয়া কাপের জন্য বিড করা হল না তার তদন্ত হোক।’’ পাশাপাশি ভাইচুং এও দাবি করেছেন যে কল্যাণ চৌবে জাতীয় সিনিয়র দলে কখনও খেলেননি, যেটা তিনি বলেন সেটা পুরোপুরি মিথ্যে। সব মিলে কল্যাণ চৌবের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যে বলার অভিযোগ এনেছেন তিনি। আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় ফুটবলের অবণতির কারণ এই ফেডারেশন। জোড় গলায় দাবি করেছেন, ‘‘আজকে বুঝতে পারছি এই প্রশাসনকে দেখার পর যে প্রিয়রঞ্জন দাশ মুন্সি বা প্রফুল প্যাটেলের প্রশাসন কয়েকশো গুন ভালো ছিল। আর এটাও হলফ করে বলতে পারি এই প্রশাসন চলে গেলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি কতটা হবে জানি না অধঃপতনটা আটকানো যাবে।’’
ভাইচুং দাবি করেন, তিনি কল্যাণ চৌবের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়তে গিয়েই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে কল্যাণ সঠিক মানুষ নন। তাই এখন তিনি চান, ভারতীয় ফুটবলের হাল এমন একজন ধরুক যিনি ফুটবলের স্বার্থে কাজ করবে নাকি নিজের জন্য। তাঁর মতে, সেটা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে পারে, কোনও কর্পোরেট হতে পারে বা কোনও ফুটবলার। তিনি জানান, তিনি ফুটবলার ভোটিং রাইটও চেয়েছিলেন যা কল্যাণ চৌবে একদমই চাননি। পাশাপাশি তিনি, কল্যাণের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, আগে ফুটবলার তৈরি করে দেখাক তার পর তাঁর অ্যাকাডেমি নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। সব মিলে ভারতীয় ফুটবল রীতিমতো সঙ্কটে। তার মধ্যে আইএসএল-ও বিশ বাঁও জলে। আর ভারতীয় ফুটবলের মুখরা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করেই সময় পাচ্ছে না।
এদিকে ভাইচুং ভুটিয়ার সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন কল্যাণ চৌবে। সেখানে তিনি মিলে মিশে কাজ করার কথা দিয়েই শুরু করেছেন। পাশাপাশি আগামী ২ জুলাই ফেডারেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির মিটিংয়েও ভাইচুংকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাহলে কি সুর নরম করছেন ফেডারেশন সভাপতি? তিনি কি বুঝে গিয়েছেন তাঁর সময় শেষ হয়ে এসেছে এআইএফএফ-এর সভাপতির চেয়ারে? কারণ ইতিমধ্যেই আদালত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে এই ফেডারেশনের হাত থেকে। সংবিধান পরিবর্তন থেকে শুরু করে নির্বাচন সবটাই করতে হবে। তার পর নতুন কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। যে কারণে আটকে রয়েছে আইএসএল ২০২৫-২৬-এর ঘোষণাও।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google