জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: জল্পনার অবসান ঘটালেন তিনি নিজেই, এটিকে মোহনবাগানের নতুন বিদেশি তারকা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস (Dimitrios Petratos)। কোচ হুয়ান ফেরান্দো তাঁকে নাম্বার নাইন হিসেবে দলে ব্যবহার করবেন কি না, নাকি এত দিন তিনি যা করে এসেছেন, অর্থাৎ নাম্বার টেনের কাজ, সেটাই ভারতে এসে করবেন, তা নিয়ে ফুটবল মহলে চলছিল অনেক অঙ্ক কষাকষি। এ বার ‘দিমি’ (তাঁর ডাকনাম) নিজেই জানিয়ে দিলেন, আসন্ন হিরো আইএসএলে তাঁর কাজ গোল করা এবং এই ভূমিকায় নিজের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
কোচ ফেরান্দো এমন একজন স্ট্রাইকার চেয়েছিলেন, যিনি প্রয়োজনে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলতে পারেন। পেট্রাটস সে রকমই একজন ফুটবলার, যিনি দেশ ও ক্লাবের হয়ে এই দুই ভূমিকা ছাড়াও উইঙ্গার হিসেবেও খেলেছেন। পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চির পেট্রাটস মূলত অ্যাটাকিং ফুটবলার। গোলের সুযোগ তৈরি করেন তিনি। তাঁর পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, তিনি যত না গোল করেছেন, গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন অনেক বেশি। ‘নাম্বার নাইন’ এর ভূমিকার চেয়ে ‘নাম্বার টেন’ হিসেবেই বেশি সফল হয়েছেন তিনি। অন্তত তাঁর অতীতের রেকর্ড সে রকমই বলছে। তবে ফেরান্দো যে তাঁকে স্ট্রাইকারের ভূমিকাতেই চাইছেন, সে রকম ইঙ্গত দিলেন পেট্রাটস নিজেই।
সোমবার হিরো আইএসএলে তাদের প্রথম ম্যাচ। তার আগে ক্লাবের মিডিয়া টিম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেট্রাটস বলেন, “আমার কাজ গোল করে দলকে সাহায্য করা। সমর্থকদের এটাই বলতে পারি যে, আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব”। ডুরান্ড কাপ ও এএফসি কাপের সেমিফাইনালে দল গোলস্কোরারের অভাব বোধ করেছে। প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি হয়েও তা হাতছাড়া হয়েছে। এ বার তাই পেট্রাটসের ওপর গোল করার দায়িত্ব দিয়েছেন কোচ। এই বাড়তি দায়িত্ব তাঁকে চাপেও ফেলে দিতে পারে। তবে তিনি বলছেন, “সত্যি বলতে, চাপ উপভোগ করি আমি। তাই এই চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই”।
হিরো আইএসএলে তাঁর ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী, তাও পেট্রাটস স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই সাক্ষাৎকারে। বলেন, “নিজের ফুটবলকে উপভোগ করা এবং দলকে জেতানো। সবার আগে খেলাটাকে উপভোগ করতে হবে। বাকিগুলো আপনিই চলে আসবে”।
মজিদ বিসকার থেকে রয় কৃষ্ণা— ভারতে এসে ফুটবলার হিসেবে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠার দৃষ্টান্ত এক ঝাঁক রয়েছে। এ বার সেই তালিকায় পেট্রাটস নাম লেখাতে পারেন কি না, তা তো সময়ই বলবে। কিন্তু ভারতের ফুটবলে সুখ্যাতি পাওয়ার সব রকম উপাদানই রয়েছে তাঁর মধ্যে। এমনটাই ধারণা তাঁর নতুন ক্লাব এটিকে মোহনবাগানের।
অন্য দিকে, ক্লাব সম্পর্কে অজি ফুটবলারের ধারণা, “ভারতের সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলির অন্যতম এই ক্লাব। বিশাল ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে এই ক্লাবের। আমিও এই ক্লাবের ইতিহাসের এক অংশ হতে চেয়েছিলাম। এখন প্রথম ম্যাচে নামার অপেক্ষায় রয়েছি। গত এক মাস ধরে পরিশ্রম করছি। সতীর্থদের বোঝার চেষ্টা করেছি, তারা কে কী রকম খেলে। মনে হয় ভালই মানিয়ে নিতে পেরেছি ওদের সঙ্গে। এখন মাঠে নেমে সেটা পরখ করার পালা। আশা করি, আমাদের খেলা দেখতে প্রচুর সমর্থক আসবেন। তাঁদের কাছে অনুরোধ, সবাই মিলে এসে আমাদের জন্য গলা ফাটান, যাতে আমরা ভাল খেলে তিন পয়েন্ট জিততে পারি”।
রাশিয়ায় গত বিশ্বকাপের মূলপর্বে তিনি অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। বিশ্বকাপ দলের ড্রেসিং রুমে থাকা, বিশ্বকাপের আবহের অভিজ্ঞতাটাই তাঁর কাছে অনেক কিছু। ফের অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার আশায় রয়েছেনও। বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। বিশ্বকাপই আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর। স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। তাই খুব উত্তেজিতও ছিলাম। আশা করি, আবার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাব”।
যাঁর রক্তে ফুটবল, যাঁর বাবা, ভাই, বোন সবাই ফুটবলার এবং ফুটবলকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তিনি যে সব সময় ফুটবলের মধ্যেই থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাঁর দাদার সঙ্গেই নিউক্যাসল জেটসের হয়ে ‘এ’ লিগে অভিষেক হয় ভাই কোস্টার। তখন তাঁদেরই বোন পানাগিওতা সেই ক্লাবেরই মেয়েদের দলের নিয়মিত সদস্যা ছিলেন। এমন ঘটনা সচরাচর ফুটবল ইতিহাসে বড় একটা দেখা যায় না।
এই ভাই-বোনেদের বাবা অ্যাঞ্জেলো অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় লিগে নিয়মিত ফুটবলার ছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ স্তরের ক্লাব ফুটবলে একই পরিবারের এতজন সদস্যকে আগে কখনও খেলতে দেখা যায়নি অস্ট্রেলিয়ায়। সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেও এটা বেনজির হলেও হতে পারে। এখানেই শেষ নয়। দিমি-রা নিউক্যাসল জেটসের হয়ে খেলার সময় তাঁদের আর এক ভাই ম্যাকি অনূর্ধ্ব ১৭-য় খেলা শুরু করেন। আরও আছে। পেট্রাটস যখন কিশোর. তখন তিনি বাবার সঙ্গে এক দলে খেলেছেনও।
নিজেই এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যখন আমার বয়স ১৫, তখন আমি আমার বাবার সঙ্গে খেলতে নেমেছিলাম। তার পরের মরশুমেও খেলেছিলাম তাঁর সঙ্গে। সেটাও আমার স্বপ্ন সত্যি হওয়া। আমি খুবই ভাগ্যবান যে, পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যের সঙ্গে খেলতে পেরেছি। ছোট থেকেই বাড়ির পিছনে মাঠে ফুটবল খেলতাম। সারাটা জীবনই ফুটবল নিয়ে কেটেছে। পরিবারের সবাই ফুটবল নিয়েই আলোচনা করেছি। তাই আমরা একে অপরকে ফুটবলের ব্যাপারে খুবই উৎসাহ জোগাই। একে অপরের কাছ থেকে শিখিও অনেক”।
এক নতুন দেশ, নতুন লিগ, যেখানে আগেও খেলেছেন একাধিক অস্ট্রেলিয়ান, এখনও খেলছেন। ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলে নিয়েছেন বলে জানান ৩০ বছর বয়সি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। বলেন, “যারা এখানে খেলে গিয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। এই দেশ, এখানকার ফুটবল, লিগ নিয়ে তারা অনেক ভাল ভাল কথা বলেছে। তাই এখানে পরিবার নিয়েই চলে এসেছি”।
ভারতে এসে পড়েছেন যখন, তখন শুধুই সামনে তাকানোর পালা। লক্ষ লক্ষ সমর্থক তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, রয় কৃষ্ণার মতো গোলমেশিন হয়ে উঠবেন, এই আশা নিয়ে। তাঁর আশা, তিনি এবং তাঁর দল এ বারের লিগে যথেষ্ট ভাল খেলবে। বলেন, “খুবই ভাল হয়েছে। আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে খুবই কঠিন। এখন প্রথম ম্যাচে নামার জন্য মুখিয়ে আছি। এই লিগে কোনও দলই খারাপ নয়। কাউকেই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। সবাই শক্তিশালী ধরে নিয়েই মাঠে নামতে হবে। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে আমাদের এগোতে হবে”।
দলের নতুন বিদেশিকে নিয়ে ফেরান্দো বলেছেন, “দিমিত্রি এমন একজন টিমপ্লেয়ার, যে আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেলে। ও সতীর্থদের জায়গা তৈরি করে দিতে সাহায্য করবে, দুর্দান্ত পাস দেবে এবং গোলের সামনে যথেষ্ট কার্যকরী হয়ে উঠবে”। কোচের কথায় যদিও ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিভিন্ন ভূমিকায় তিনি দেখতে চান দলের এই নতুন সদস্যকে। কিন্তু তাঁকে যে আসলে এটিকে মোহনবাগানের গোলমেশিনই হয়ে উঠতে হবে, এই নিয়ে আর কোনও দ্বিধা আছে বলে মনে হয় না।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google