কত লড়াই যে খেলার মাঠের গ্যালারি থেকে শুরু হয় তা হয়তো আমরা সব সময় জেনেও উঠতে পারি না। বিশেষ করে শত্রুর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার যে ক্ষমতা ফুটবল মাঠের রয়েছে তা হয়তো অন্য কারও নেই। যা বার বার উঠে এসেছে সামনে। সামনে থেকে লড়াই করা শিখিয়েছে ফুটবল মাঠ।আইএফএ শিল্ডে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে জয় যেভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনকে উদ্বেলিত করেছিল ঠিক সেভাবেই মাঠের চিরশত্রুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শিখিয়েছে এই ফুটবল মাঠ। বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের গ্যালারি। যারা চিরশত্রু বলেই খ্যাত। গত বছর ঠিক এই মাসটাকেই প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ফ্যানরা। যার জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছিল ডার্বি। এই সেই Durand Cup, এই সেই ডুরান্ড কাপের গ্যালারি। যেখান থেকে বুধবার উঠে এলো আরও একটি প্রতিবাদের ভাষা। এক সময় ভাষার লড়াই করেছিল বাংলাদেশ, এবার সেই বাংলা ভাষার লড়াইয়ে এই বাংলাও।
বুধবার ডুরান্ড কাপের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। নামধারীর বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জিতে প্রথম ম্যাচ জয়ের সৌজন্যে ইতিমধ্যেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে ইস্টবেঙ্গল। হাতে রয়েছে আরও একটি ম্যাচ। এদিন পুরো ম্যাচে গ্যালারিতে জ্বল জ্বল করল প্রতিবাদের ব্যানার। ইস্টবেঙ্গল আলট্রাসের এই ব্যানার ছিল সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ভাষাভাষিদের যেভাবে পুরো দেশে বিপদে ফেলা হচ্ছে তা নিয়ে। সেই ব্যানারে লেখা ছিল, ‘‘ভারত স্বাধীন করতে সেদিন পরেছিলাম ফাঁসি! মায়ের ভাষা বলছি বলে আজকে বাংলাদেশী?’’
ম্যাচের আগে থেকেই প্রেসবক্সের উল্টোদিকের গ্যালারি জুড়ে জায়গা করে নিয়েছিল এই ব্যানার। ম্যাচ শেষে গ্যালারি ফাঁকা হয়ে গেলেও সেই ব্যানার থেকে গেল সেখানেই। সাধারণত, যে সব ফ্যানক্লাবরা ব্যানার নিয়ে আসেন তাঁরা খেলা শেষে তা আবার তুলে নিয়ে চলে যান। কিন্তু এদিন ব্যানারটা থেকে গেল গ্যালারিতেই। সম্প্রতি দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে আটকে রাখা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকী, তাদের উপর অকথ্য অত্যাচারও করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে সরব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার প্রতিবাদের সুরে সুর মেলালো ইস্টবেঙ্গল গ্যলারিও। আশা করাই যায়, ইস্টবেঙ্গলের দেখানো পথে বাংলার বাকি ক্লাবগুলোও এই প্রতিবাদের পথে হাঁটবে।
এক বছর আগের কথা, শহরের নাম করা সরকারি হাসপাতালে ধর্ষণের পর খুনে হয়েছিল এক মহিলা ডাক্তার। সেদিন অভয়ার জন্য ন্যায় বিচার চেয়ে গর্জে উঠেছিল এই শহর। গর্জে উঠেছিল ফুটবল মাঠ। ডুরান্ড কাপ ডার্বির গ্যালারিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের সমর্থকরা। কিন্তু তাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। বরং বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল ম্যাচ। তবে আটকানো যায়নি প্রতিবাদ। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি গেট থেকে বাইপাস, সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ফুটবলপ্রেমীদের প্রতিবাদের ভাষায়। যারা প্রতিদিন একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরাই একে অপরের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সেদিন প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, যে প্রতিবাদ লেখা থাকবে ফুটবলের ইতিহাসে।
এদিন লেখা হল আরও একটি প্রতিবাদের ভাষা, এই ফুটবল মাঠেই।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google