ভারতীয় ফুটবল ও বন্ধ দরজা

মন্দার মিত্র: বিষয়টা বড় প্রতীকী।

সুনীল ছেত্রীরা দুটো ফুটবল ম্যাচ খেললেন। কিন্তু সেই ম্যাচ নাকি সাধারণ দর্শক দেখতে পারবেন না। ক্লোজডোর ট্রেনিংয়ের মতো এখন ভারতীয় ফুটবল দলের নতুন ট্রেন্ড ‘ক্লোজডোর ম্যাচ।’


খোদ বাংলার বুকে মানালো মার্কুয়েজের টিমের এমন ফুটবল ম্যাচ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। গত কয়েকদিন ধরে কলকাতায় ঘাঁটি গেড়েছে ভারতীয় সিনিয়র ফুটবল দল। চলছে আন্তর্জাতিক ম্যাচের শিবির। প্রথমে ফিফা ফ্রেন্ডলি তার পর রয়েছে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব। কলকাতায় ১০ দিনের শিবির ক্লোজডোর ট্রেনিংই চলছে। সেটাও আবার শহর থেকে বেশ দূরে। সেই শিবিরেই দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে শুভাশিস বসুরা।

প্রথম ম্যাচটি ছিল সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলের বিরুদ্ধে। পরের ম্যাচটি ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ফুটবল দলের বিরুদ্ধে। সেই দুই ম্যাচই হয়েছে বন্ধ দরজার ও পারে। সাধারণ দর্শক থেকে সংবাদমাধ্যম, কারও প্রবেশাধিকার ছিল না সেখানে।
বিষয়টি বেশ অদ্ভুত ঠেকেছে দীর্ঘদিন ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কর্তা-ব্যক্তিদের।

উত্তর ২৪ পরগণা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন প্রেসিডেন্ট নবাব ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরেই সর্বভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে জড়িত। তাঁর সাফ কথা, ‘ফেডারেশনের অনুমতি ছাড়া তো আর ভারতীয় দলের ম্যাচ আয়োজন করতে পারি না। আমাকে এই ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল দর্শকদের সামনেই। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন বলা হল এই ম্যাচ ক্লোজডোর করতে হবে। কিন্তু কেন, এর পিছনে কী আছে সেটা আমাকে বলা হয়নি।’ এখানেই শেষ নয়। নবাবের সংযোজন, ‘ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য এরকম ম্যাচ দরকার বলেই আমার মনে হয়। অনেক বেশি মানুষের কাছে ভারতীয় ফুটবল পৌঁছনোর প্রয়োজন রয়েছে। এই ম্যাচগুলো সেটা করতে সাহায্য করবে।’

বাংলা দলের বিরুদ্ধে কোনওরকমে ২-১ গোলে ম্যাচ জিতেছিল ভারতীয় ফুটবল দল। যারা নাকি এশিয়ান কোয়ালিফাইংয়ে খেলবে হংকংয়ের বিরুদ্ধে। তার আগে ফিফা ফ্রেন্ডলিতে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ। তা হলে কি সুনীলদের পারফরম্যান্স জনসমক্ষে আনলে সমালোচনা হতে পারে, সেই ভয়ে ক্লোজডোর ভাবন?

প্রথমে কিন্তু সেই ম্যাচ নৈহাটি স্টেডিয়ামে সর্বসমক্ষে খেলার কথা থাকলেও হঠাৎই সেই পরিকল্পনা বদল করে ফেডারেশন। রাতারাতি দর্শকদের সামনে হওয়ার কথা থাকা ম্যাচ চলে যায় বন্ধ দরজার পিছনে। নৈহাটি স্টেডিয়ামে এই ম্যাচের প্রচার হয়ে গিয়েছিল বিপুল পরিমাণ। ফুটবলপ্রেমীরা টিকিটের খোঁজ খবর করতে শুরু করেছিলেন। নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল টিকিটের দামও। কিন্তু ম্যাচের ঠিক আগের দিনই খবর আসে ম্যাচ করতে হবে ক্লোজডোর।

উত্তর ২৪ পরগনা দলের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে যেতে ভারতীয় দল। তবে তাদের জন্য গলা ফাটাতে সেখানে কেউ হাজির ছিল না। সুনীল ছেত্রীর মতো তারকা ভারতীয় ফুটবলার যে দলে খেলছে সেই দলকে সমর্থন করতে যে গ্যালারি ভড়াতেন সমর্থকরা সেটাই তো হল না। নবাব ভট্টাচার্য মনে করছেন এর পিছনে এমন কিছু রয়েছে সেটা সবার বোঝার বাইরে। বলছিলেন, ‘আমাকে মণিপুরে গিয়ে খেলতে বললে তো আমি সেখানে গিয়ে দর্শকদের সামনে খেলব। কারণ আমার দলে মণিপুরের অনেক প্লেয়ার রয়েছে। তাহলে কেন ক্লোজডোর?’

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পুরো আইএসএল ক্লোজডোর হয়েছিল। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে কেন এমন সিদ্ধান্ত, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। এমনিতেই বিরাট কোহলিদের নিয়ে যা উন্মাদনা তার ছিটেফোঁটা নেই সুনীল ছেত্রীজদের নিয়ে। সেখানে বাংলার প্রস্তুতি শিবির করে ভারতীয় ফুটবলের মরা গাঙে জোয়ার নিয়ে আসার সুযোগ কেন হারালো ফেডারেশন, সে প্রশ্ন উঠছে।

নীরব ভারতীয় ফুটবলের প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবেও। ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স, স্ট্র্যাটেজি, নৈহাটি থেকে জেনে থাইল্যান্ড বা হংকংয়ে কেউ পৌঁছে দিতে পারেন বলে মানালোর এই ভয় কি না জানা নেই। তবে বাস্তব হল, ভারতের ফিফা র‍্যাঙ্কিং এখন ১২৭।

সাফল্যের তলানিতে পড়ে থাকা ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে যেতে গেলে অনেক বাধা ভেঙে চুরমার করে এগোতে হবে। সেখানে নিজের দেশে প্র্যাক্টিস ম্যাচেই দরজা বন্ধ করে রাখা খুব একটা ভালো বিজ্ঞাপন হল কি?

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle