জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১: চেন্নাই এফসি বনাম এটিকে মোহনবাগান ম্যাচ দুই দলই আক্রমণের ঝড় তুললেও বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে শেষ পর্যন্ত একটাও গোল হল না। এটিকে মোহনবাগান ও চেন্নাইন এফসি-র মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ গোলশূন্য ভাবে শেষ হল মঙ্গলবার। এই ম্যাচে এক পয়েন্ট পেয়ে মোট ১৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার শীর্ষে উঠে গেল কলকাতার দল। চেন্নাইন এফসি অবশ্য একই জায়গায় রয়ে গেল। তবে এ দিন যে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছেন ক্রিভেলারো, সিলভেস্টর, ছাঙতেরা, তাতে এই ম্যাচ জিততেই পারতেন তাঁরা। সব মিলিয়ে চেন্নাইন এফসি যেখানে গোলে সাতটি শট নেয়, সেখানে এটিকে মোহনবাগানের গোলমুখী শট ছিল মাত্র একটি।
তবে এ দিন দলের হার বাঁচানোর কৃতিত্ব দিতেই হবে সবুজ-মেরুন গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে। তাঁর দলের ডিফেন্স এ দিন বহুবার ধোঁকা খেলেও চেন্নাইন এফসি-র একাধিক নিশ্চিত গোল আটকে বিপক্ষের জয় রুখে দেন তিনি। দলের ডিফেন্সের সেরা ফর্মে না থাকা, যথেষ্ট উইং প্লে-র অভাব এবং দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা কড়া পাহাড়ায় থাকার কারণে এ দিন এটিকে মোহনবাগান ম্যাচটা হেরেও যেতে পারত। কিন্তু অরিন্দম তা হতে দেননি। তাই ম্যাচের সেরার খেতাব তিনিই জিতে নেন।
গত ম্যাচের প্রথম এগারো নিয়ে একই ছকে এ দিন দল নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তবে শুরুটা আগের ম্যাচের মতো করতে পারেনি তারা। বিপক্ষে লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা দল বলে যে শুরু থেকে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে তাদের মেপে নেবেন, এমন ভাবনা নিয়ে এ দিন মাঠে নামেনি চেন্নাইন এফসি। বরং বারবার আক্রমণে উঠছিল তারা। কোচ কসাবা লাজলো তাই দলও সাজিয়েছিলেন ৪-১-২-৩-এ। ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই তাদের এই পরিকল্পনা বোঝা যায়।
পাঁচ মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে ওঠা জাকুব সিলভেস্টরের পাস থেকে রাফায়েল ক্রিভেলারো ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় গোলের সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দেন অরিন্দম। আট মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের সামনে থেকে বাঁ দিক দিয়ে ওঠা ছাঙতেকে পাস দেন ক্রিভেলারো। ছাঙতে গোলে শট নিলেও তা সেকেন্ড পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
প্রথম দশ মিনিট এ রকম চলতে থাকার পরে ক্রমশ বলের দখল বাড়ানো শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। ক্রমশ বিপক্ষের ডিফেন্সের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করেন রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিংরা। ২৮ মিনিটের মাথায় ডান দিকের উইং থেকে বক্সের মধ্যে হাওয়ায় ভাসানো নিখুঁত ক্রস করেন এডু গার্সিয়া। কিন্তু বলের জায়গায় পৌঁছতে কিছুটা দেরি করে ফেলায় ডেভিড উইলিয়ামস জোরালো শট নিতে পারেননি গোলে। চেন্নাইন ডিফেন্ডার রিগান সিং তাঁকে সমানে বাধা দেওয়ায় আরও সমস্যায় পড়েন ডেভিড।
প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট দুই দলেরই আক্রমণে ম্যাচ জমে ওঠে। তবে কোনও পক্ষই ঠিকমতো ফিনিশ করতে পারেনি বিপক্ষের রক্ষণের তৎপরতায়। ৪১ মিনিটের মাথায় তাই বক্সের বাইরে থেকেই সোজা গোলে শট নেন কার্ল ম্যাকহিউ। কিন্তু চেন্নাইন গোলরক্ষক বিশাল কয়েথের হাতে তা জমা পড়ে যায়। ৪৩ মিনিটে বিপক্ষের ইনসাইড বক্সের সামনে থেকে সোজা গোলে শট নিয়েছিলেন বসনিয়ান ডিফেন্ডার এনিস সিপোভিচ। তাও অরিন্দমের সুরক্ষিত হাতে ঢুকে পড়ে।
প্রথম ৪৫ মিনিটে লড়াইটা ছিল একেবারে সমানে সমানে। লড়াইটা যে দুই ও সাত নম্বরের মধ্যে, তা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না। এই সময়ে বল পজেশন ছিল ৫০-৫০। চেন্নাইন এফসি যেখানে গোলে দু’টি শট নেয়, সেখানে এটিকে মোহনবাগানের গোলমুখী শটের সংখ্যা ছিল এক। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই জারি ছিল।
৫০ মিনিটের মাথায় অনবদ্য একটি গোল থেকে ছাঙতেকে বঞ্চিত করেন অরিন্দম। নিজেদের পেনাল্টি বক্স থেকে উড়ে আসা বল বাঁ দিকের উইংয়ে দুর্দান্ত রিসিভ করে বল নিয়ে গোলের দিকে উঠে যান ছাঙতে। তাঁকে একা ছেড়ে দিয়ে অফসাইডের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গনরা। কিন্তু ছাঙতে কোনও বাধা না পেয়ে গোলে নিখুঁত শট নেন তিনি। অরিন্দম বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে বলে হাত ছুঁইয়ে বিপদ কাটান। অরিন্দম এই সেভটি না করলে চেন্নাইন অবধারিত ভাবে এগিয়ে যেত। ৬৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া মেমো মৌরার হাওয়ায় ভাসানো শটেও অবধারিত গোলের ঠিকানা লেখা ছিল। কিন্তু এ বারও লাফিয়ে উঠে বাঁচিয়ে দেন অরিন্দম। এই ফ্রি কিকের আগেই প্রণয় হালদারের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে গুরুতর আহত হন ক্রিভেলারো, যার ফলে প্রণয়কে হলুদ কার্ড দেখতে হয়। তবে এটিকে মোহনবাগান কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়ে যায়।
ক্রিভেলারো মাঠের বাইরে বেরিয় যাওয়ার পরেই ডাগ আউট থেকে একসঙ্গে প্রবীর দাস ও জয়েশ রানেকে নামান কোচ হাবাস। তুলে নেন মনবীর ও প্রণয়কে। আক্রমণে গতি ও ধার বাড়ানোর জন্যই যে এই পরিবর্তন, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। ক্রিভেলারোর বদলে ডিফেন্ডার দীপক টাঙরিকে নামান লাজলো। তবে ক্রিভেলারো বেরিয়ে যাওয়ায় চেন্নাইন এফসি-র আক্রমণে যে দুর্বলতা দেখা যেতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল, তা কিন্তু হয়নি। বরং পজেশন বাড়িয়ে ও দুই উইং দিয়ে গতিময় আক্রমণে উঠে বিপক্ষকে আরও কোনঠাসা করার চেষ্টা করে চেন্নাইন এফসি। ওই সময়ে রয় কৃষ্ণাকেও ডিপ ডিফেন্সে নেমে আসতে দেখা যায়।
৭৮ মিনিটের মাথায় নিজেদের এলাকায় বল নিয়ে ডানদিকের উইং দিয়ে সোজা বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন রিগন সিং। এতটা পথ এটিকে মোহনবাগানের কেউই তাঁকে বাধা দেননি। বক্সে ঢুকে রিগন সোজা গোলে শট নেন, কিন্তু এ বারও ত্রাতা হয়ে ওঠেন সেই অরিন্দম। তার ঠিক আগেই ডান দিকের উইং দিয়ে উঠে প্রবীর রয়কে ক্রস দেন। কিন্তু সিপোভিচের ইন্টারসেপশনে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষ দশ মিনিটে গোলের জন্য মরিয়া ওয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। ৮৩ মিনিটে ফের ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকেও পড়েন প্রবীর। কিন্তু রয়ের দিকে ঠেলা বল গোলকিপারের হাতে চলে যায়। বাঁ দিক থেকে শুভাশিস বসুর নিখুঁত ক্রস থেকেও ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন রয়। ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারলে হয়তো গোল হত। কিন্তু পারেননি তিনি।
রয় কৃষ্ণাকে এ দিন কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন চেন্নাইনের ডিফেন্ডাররা। ফিজিয়ান ফরোয়ার্ড বল ধরলেই তাঁকে অন্তত তিনজন ডিফেন্ডার ঘিরে ধরছিলেন। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে ডেভিড উইলিয়ামসকে তুলে ব্র্যাড ইনম্যানকে নামান হাবাস এবং ছাঙতেকে তুলে ফাথখুল্লো ফাথখুলোয়েভকে নামান লাজলো। দ্বিতীয়ার্ধে দেওয়া বাড়তি ছ’মিনিটের মধ্যে তাঁর একটি ফ্রি-কিক গোলের দিকে বিপজ্জনক ভাবে উড়ে গেলেও তা শেষ পর্যন্ত বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
এটিকে মোহনবাগান দল: অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, তিরি, শুভাশিস বসু, কার্ল ম্যাকহিউ, এডু গার্সিয়া, প্রণয় হালদার (জয়েশ রানে), ডেভিড উইলিয়ামস (ব্র্যাড ইনম্যান), মনবীর সিং (প্রবীর দাস), রয় কৃষ্ণা ।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
(খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)