জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হিরো আইএসএলে এর আগে পাঁচবার মুখোমুখি হলেও কখনও এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি বেঙ্গালুরু এফসি। সুনীল ছেত্রীর এই আফসোস রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মিটিয়ে দিলেন তাঁর সতীর্থরা। বিশেষ করে এটিকে মোহনবাগানের দুই প্রাক্তন তারকা হাভিয়ে হার্নান্ডেজ ও রয় কৃষ্ণা। তাঁদের গোলেই এ দিন ২-১-এ জিতে চলতি লিগের সেরা ছয়ে ঢুকে পড়ল বেঙ্গালুরুর দলটি। এই নিয়ে টানা পাঁচটি ম্যাচ জিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আরও এক উজ্জ্বল নজির তৈরি করল তারা।
প্রথমার্ধে টানটান উত্তেজনায় ঠাসা ফুটবলের পর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা যায় বেঙ্গালুরু এফসি-কে। প্রথমার্ধে যে দাপট দেখিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী, দ্বিতীয়ার্ধে সেই দাপট দেখাতে শুরু করে ‘ব্লু’জ’-রা। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগে দূরপাল্লার শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হার্নান্ডেজ। ৯০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুন করেন ফিজিয়ান স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা, যিনি একসময় ছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নয়নের মণি। বাড়তি সময়ের তৃতীয় মিনিটে সান্ত্বনা গোলটি করে ব্যবধান কমান দিমিত্রিয় পেট্রাটস।
এই জয়ের ফলে বেঙ্গালুরু এফসি ১৭ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট অর্জন করে ওডিশা এফসি-কে টপকে লিগ টেবলের ছ’নম্বর স্থানে উঠে এল। যদিও ওডিশা এক ম্যাচ কম পেয়ে তাদের চেয়ে দু’পয়েন্ট পিছনে। সোমবার এফসি গোয়াকে হারাতে পারলে তারা ফের ছ’নম্বরে উঠে পড়বে। পাঁচ নম্বরে থাকা গোয়ার দল ওডিশার ঘরের মাঠে তাদের আটকাতে পারবে কি না, সে দিকেই তাকিয়ে থাকবেন সুনীল ছেত্রীরা।
দু’দিন আগে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ঘরের মাঠে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল এফসি যে সুবিধা করে দিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনীকে, সেই সুবিধা তারা কাজে লাগাতে পারল না মূলত হুগো বুমৌস ও আশিক কুরুনিয়ান খেলতে না পারায় এবং দুই ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিং চেনা ছন্দে না থাকায়। তাঁদের পরিবর্তে দুই তরুণ ফরোয়ার্ড কিয়ান নাসিরি ও ফারদিন আলি মোল্লাকে ৮৪ মিনিটের মাথায় নামানা কোচ হুয়ান ফেরান্দো, যে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমর্থক মহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
প্রত্যাশিত ভাবেই দুই কার্ড সমস্যায় থাকা ফুটবলার হুগো বুমৌস ও আশিক কুরুনিয়ানের জায়গায় ফেদরিকো গায়েগো ও লিস্টন কোলাসোকে প্রথম এগারোয় রাখে এটিকে মোহনবাগান। বরাবরের মতো ৪-২-৩-১-এ শুরু করে তারা। অন্য দিকে রয় কৃষ্ণা ও শিবশক্তি নারায়ণনকে সামনে রেখে দল সাজায় বেঙ্গালুরু এফসি, যারা গত চারটি ম্যাচেই জয় পায়।
এ দিন শুরু থেকেই ফুটবলের তুমুল লড়াই দেখা যায় দুই দলের মধ্যে, যার মধ্যে তীব্রতা ছিল যথেষ্ট। দু’পক্ষেরই আক্রমণ ও রক্ষণ বিভাগের মধ্যে লড়াই রীতিমতো জমে ওঠে। ন’মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে কোলাসোর মাইনাসে পাওয়া বলে পেট্রাটস কোণাকুনি শটে গোলের চেষ্টা করলেও তা বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ১৯ মিনিটের মাথায় ফের কার্ল ম্যাকহিউয়ের পাস পেয়ে তা থেকে গোলমুখী জোরালো শট নেন আশিস রাই। কিন্তু এ বার তা আটকে দেন বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। এর কয়েক মিনিট পরে আশিসের আর একটি গোলমুখী শট আটকান গুরপ্রীত। এ দিন আশিসকে চেনা মেজাজে পাওয়া যায়।
২৮ মিনিটের মাথায় যে আক্রমণটি করে বেঙ্গালুরু এফসি, সেটিই এই ম্যাচে তাদের প্রথম পজিটিভ আক্রমণ বলা যায়। মাঝমাঠ থেকে একেবারে সামনে ফাঁকায় থাকা শিবশক্তিকে বল বাড়ান রয় কৃষ্ণা। বল নিয়ে তিনি প্রতিপক্ষের বক্সে ঢোকামাত্রই সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিবশক্তির পা থেকে বল সরিয়ে নেন গোলকিপার বিশাল কয়েথ।
একের পর এক আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে ম্যাচ জমে উঠলেও আক্রমণের ভাগ এটিকে মোহনবাগানেরই ছিল বেশি। সারা অর্ধে একটিও কর্নার আদায় করতে পারেননি রয় কৃষ্ণারা। তবে এটিকে মোহনবাগান তিনটি কর্নার পেয়েও কিছু করতে পারেনি। বেঙ্গালুরুর যাবতীয় আক্রমণের চেষ্টাকে বারবার প্রতিহত করেন প্রীতম কোটাল, ব্রেন্ডান হ্যামিলরা। এই অর্ধে আক্রমণ বিভাগের মতো সবুজ-মেরুন রক্ষণকেও দুর্দান্ত ফর্মে দেখা যায়। প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগানের বল পজেশন ৬২ শতাংশ থাকলেও দু’পক্ষই দুটি করে শট গোলে রাখে। বেঙ্গালুরুর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন সংখ্যক পাস খেলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে ছবিটা পুরো পাল্টে দেয় বেঙ্গালুরু এফসি। শুরু থেকে তারাই বেশি চাপে রাখার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে। এটিকে মোহনবাগানকেও বেশ রক্ষণাত্মক লাগছিল তখন। কোলাসো, মনবীরদেরও মাঝে মাঝে সাইড ব্যাকের জায়গায় নেমে এসে খেলতে দেখা যায়। ৬১ মিনিটের মাথায় অবশ্য বেশ কয়েকটি পাস খেলে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করে তারা। কিন্তু শেষে বক্সের সামনের দিক থেকে গায়েগো গোলের উদ্দেশ্যে বাঁ পায়ে যে শট নেন, তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
আক্রমণ বেশি করলেও এ দিন এটিকে মোহনবাগানের দুই ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিং ফর্মে ছিলেন না। ফলে দুই উইং দিয়ে আক্রমণের ধার কম ছিল। গায়েগোকেও তেমন উজ্জ্বল লাগেনি। আশিক কুরুনিয়ান ও হুগো বুমৌসের অভাব স্পষ্ট বোঝা যায় এ দিন। কিয়ান, ফারদিনদের দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি নামালে হয়তো উপকার পেত দল। কিন্তু তা করেননি কোচ ফেরান্দো।
৭০ মিনিটের পর থেকে এটিকে মোহনবাগান পাল্টা চাপ দেওয়া শুরু করলেও দমে যায়নি বেঙ্গালুরু এফসি। তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং এমনই এক আক্রমণে ৭৮ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যান হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। একাধিক ছোট পাসে তৈরি করা আক্রমণের শেষে বক্সের বাঁ দিক থেকে যে ক্রস দেন রোশন নাওরেম, বক্সের সামনে সেই ক্রসে সোজা গোল লক্ষ্য করে এক জোরালো ভলি মারেন হার্নান্ডেজ, যা বাঁ দিকে ঝাঁপানো বিশালের হাতে লেগে গোলে ঢুকে পড়ে (১-০)।
গোল খাওয়ার পরই মনসংযোগের অভাব দেখা দেয় এটিকে মোহনবাগান রক্ষণে। বহু আকাঙ্খিত দুই পরিবর্তন সবুজ-মেরুন কোচকে করতে দেখা যায় ৮৪ মিনিটের মাথায়। মার্টিন্সের জায়গায় ফারদিন আলি মোল্লা ও আশিসের জায়গায় কিয়ান নাসিরি। অর্থাৎ ম্যাচের শেষ ১১ মিনিট (পাঁচ মিনিট বাড়তি সময়-সহ) এটিকে মোহনবাগান কার্যত ছ’জন ফরোয়ার্ড নিয়ে খেলে।
কিন্তু তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি। বরং বলা যায় দ্বিগুন ক্ষতি হয়ে যায় তাদের, যখন ব্যবধান বাড়িয়ে নেন রয় কৃষ্ণা। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মিনিটে প্রায় ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেন এটিকে মোহনবাগানের আর এক প্রাক্তনী। ডান দিক থেকে পাবলো পেরেজের গোলমুখী চিপ ফিস্ট করতে গিয়ে রয়ের পায়ে বল জমা দিয়ে দেন বিশাল। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি রয় (২-০)।
বেঙ্গালুরু জয় সুনিশ্চিত করার তিন মিনিটের মধ্যেই স্বান্ত্বনা গোলটি তুলে নেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। এ বারও দূরপাল্লার শটেই গোলটি হয়। মাঝমাঠে মনবীরের পা থেকে বল পেয়ে কিছুটা বাঁ দিকে ঢুকে এসে বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া এই জোরালো শট বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার অ্যালান কোস্টার মাথায় লেগে গতিপথ পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়, যার নাগাল পাননি গুরপ্রীত (২-১)। শেষের মাত্র দু’মিনিটে আর সমতা ফেরানো সম্ভব হয়নি সবুজ-মেরুন বাহিনীর পক্ষে।
এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই (কিয়ান নাসিরি), প্রীতম কোটাল (অধি), ব্রেন্ডান হ্যামিল, শুভাশিস বোস, গ্ল্যান মার্টিন্স (ফারদিন আলি মোল্লা), কার্ল ম্যাকহিউ, ফেদরিকো গায়েগো, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google