জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই’ বলে রবিবার রাতে মুম্বই ফুটবল এরিনার ফুটবল-যুদ্ধের তীব্রতাকে সঠিক ভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধু ‘উপভোগ্য’ শব্দ ব্যবহার করলে এটিকে মোহনবাগান ও মুম্বই সিটি এফসি-র মধ্যে ম্যাচটি সম্পর্কে সঠিক বিশেষণ দেওয়া হয় না। উত্তেজনার চরম উপাদানে ঠাসা রোমহর্ষক এক ফুটবল দ্বৈরথ বললে তাও কিছুটা কাছাকাছি যেতে পারে, কিন্তু তাতেও অনেকে অখুশি থেকে যেতে পারেন (ISL 2022-23 MFC vs ATKMB)।
দু’পক্ষের দু’টি করে গোল, অসংখ্য গোলের সুযোগ, অজস্রবার ক্রসবারে লেগে ফিরে আসা, দুই দলের ওঠানামার গতিতে অভাবনীয় ক্ষিপ্রতা ও দু’পক্ষের রক্ষণের মরিয়া লড়াই— সব কিছুই মজুত থাকা রবিবারের এই ম্যাচকে এখন পর্যন্ত এই মরশুমের সেরা ম্যাচের তকমা দেওয়া যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল হয় ২-২। অর্থাৎ এ বারেও এটিকে মোহনবাগান হিরো আইএসএলে তাদের সবচেয়ে বড় হার্ডলটি পেরোতে পারল না।
হুয়ান ফেরান্দো কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে এটিকে মোহনবাগান দ্বিতীয় ম্যাচেও ড্র করল। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই লালরিনজুয়ালা ছাঙতের গোলে মুম্বই এগিয়ে যাওয়ার পরে ৪৭ মিনিটের মাথায় সেমসাইড গোলে সমতায় ফেরে এটিকে মোহনবাগান। ৭২ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডার রস্টন গ্রিফিথের গোলে ফের এগিয়ে যায় মুম্বই সিটি এফসি। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষের ঠিক এক মিনিট আগে দ্বিতীয় গোলও শোধ করে দেন সবুজ-মেরুন মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ।
প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে শুভাশিস বোসের বাধা কাটিয়ে কাট ইন করে সোজা গোলে যে শট নেন মিজোরামের তারকা ফরোয়ার্ড, তা বারে লেগে গোললাইনের ওপারে ড্রপ করে ফের বাইরে চলে আসে (১-০)। রেফারি গোলের বাঁশি বাজাতে দ্বিধা করেননি। দুই দলই এ দিন দুই উইংকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে বারবার। মুম্বইয়ের যেমন বিপিন, ছাঙতেরা বারবার বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন, তেমন এটিকে মোহনবাগানের মনবীর, কোলাসোরাও। ৩২ মিনিটের মাথায় বুমৌসকে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন মনবীর। কিন্তু ওই জায়গা থেকেও বারের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন ফরাসি তারকা বুমৌস।
প্রথমার্ধের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে লেনি রড্রিগেজকে নামানো হয় দীপক টাঙরির জায়গায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা শুরু করে দেয় সবুজ-মেরুন বাহিনী। গোলশোধে মরিয়া এটিকে মোহনবাগানের উদ্দেশ্য সফল হয় তিন মিনিটের মধ্যেই। বুমৌস নিজের জায়গা বদলে বাঁ দিক দিয়ে ওঠেন এবং বক্সে থাকা কোলাসোকে ক্রস দেন। এক পাক ঘুরে তাঁর ডানদিকে জনি কাউকোকে গোলের বল সরবরাহ করেন তিনি এবং কাউকো মাটি ঘেঁষা শটে সোজা গোলে বল রাখতে ভুল করেননি (১-১)। যদিও তা ডিফেন্ডার মেহতাব সিংয়ের পায়ে লেগে গোলে ঢোকে বলে তাকে নিজ গোল বলে ঘোষণা করা হয়।
শেষ কুড়ি মিনিট খেলার জন্য আশিক কুরুনিয়ানকে নামানো হয় কোলাসোকে বসিয়ে। কিন্তু এই পরিবর্তনের পরেই যে ঘটনাটি ঘটে, তা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ম্যাচের পরিবেশ। আহমেদ জাহুর কর্নার ক্লিয়ার হওয়ার পরে তাঁর কাছেই বল যায়। ডানদিক থেকে ক্রস দেন জাহু, গোললাইনের একেবারে সামনে থাকা রস্টন গ্রিফিথ প্রথম চেষ্টায় বারে বল লাগান। বার থেকে নেমে আসা বল বিশাল হাত দিয়ে বের করে দিতে যান। কিন্তু তাঁর প্রায় গায়ে লেগে থাকা রস্টনের মাথায় লেগে তা গোলে ঢুকে যায় (২-১)। সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা গ্রিফিথের বিরুদ্ধে ফাউলের অভিযোগে ফেটে পড়লেও রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি।
দূর্গ বাঁচানোর জন্য কার্ল ম্যাকহিউকে এবং গোল শোধের উদ্দেশ্যে কিয়ান নাসিরিকে নামান কোচ ফেরান্দো। তুলে নেন বুমৌস ও আশিস রাইকে। এর আগে মনবীরের জায়গায় নামেন লালরিনলিয়ানা হ্নামতে। ওই সময়ে এটিকে মোহনবাগানকে সবচেয়ে আকাঙ্খিত মুহূর্তটি এনে দেন কার্ল ম্যাকহিউ। ৮৯ মিনিটের মাথায় ডান উইং থেকে পেট্রাটসের নিখুঁত ফ্রি কিকে জোরালো হেড করে গোলে বল ঢুকিয়ে দেন আইরিশ মিডফিল্ডার (২-২)।
চার মিনিট বাড়তি সময়ের মধ্যে জয়সূচক গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন পেট্রাটস, যা তিনি ছ’গজের বক্সে ঢুকে বুক দিয়ে ঠেললেও তা বারে লেগে ফিরে আসে। এর পরে আর কোনও ভাবেই তাদের ম্যাচে ফেরা সম্ভব ছিল না।
এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই (কিয়ান নাসিরি), প্রীতম কোটাল (অধি), ব্রেন্ডান হ্যামিল, শুভাশিস বোস, দীপক টাঙরি (লেনি রড্রিগেজ), জনি কাউকো, হুগো বুমৌস (কার্ল ম্যাকহিউ), মনবীর সিং (লালরিনলিয়ানা হ্নামতে), লিস্টন কোলাসো (আশিক কুরুনিয়ান), দিমিত্রিয়স পেট্রাটস।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google