জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: শনিবার ডার্বির আবহ, পরিবেশ, লড়াই যেমনই হোক না কেন, এটিকে মোহনবাগানের একটাই লক্ষ্য, তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া। কলকাতা ডার্বি মানেই যে একটা বিশাল ফুটবল উৎসব, তা খুব ভাল করেই জানেন সবুজ-মেরুন শিবিরের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। এই নিয়ে হিরো আইএসএলে তৃতীয় ডার্বিতে দলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কোচ। এ ছাড়াও এ বছর ডুরান্ড কাপেও তাঁর তত্ত্বাবধানে বড় ম্যাচ খেলেছে এটিকে মোহনবাগান। গত মরশুমে ফাঁকা গ্যালারির সামনে খেলতে হয়েছিল। কিন্তু এই মরশুমে টের পেয়ে গিয়েছেন কলকাতা ডার্বি কী।
শুক্রবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভীড়ে ঠাসা কনফারেন্স রুমে ডার্বির সাংবাদিক বৈঠকে যেমন তাঁকে ডার্বির অনুভূতি নিয়ে বলতে শোনা গেল, “কলকাতা ডার্বি অবশ্যই স্পেশ্যাল। এত মানুষ খেলা দেখতে আসে, তারা সর্বক্ষণ হইচই করে, অসাধারণ একটা পরিবেশ তৈরি হয় সারা স্টেডিয়াম জুড়ে। ম্যাচের আগে থেকেই এই ম্যাচকে ঘিরে প্রচুর আগ্রহ দেখা যায়, যেটা ফুটবলের পক্ষে একেবারে আদর্শ আবহ। আমি খুব উপভোগ করি এই পরিবেশটা। কোভিড-পরবর্তী সময়ে সমর্থকেরা গ্যালারি ভরিয়ে তুলছেন, এটা দারুন ব্যাপার। আর ডার্বির দুই দলই যথেষ্ট ঐতিহ্যবাহী। দুই ক্লাবেরই জমজমাট ইতিহাস আছে, যা সারা ভারতের মানুষ জানে। তবে আমাদের কাছে শনিবারের ম্যাচে জয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”।
এত আবেগ, এত হইচই, সমর্থকদের উন্মাদনা, প্রতিপক্ষের হোম ম্যাচ তথা তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রত্যাশার চাপ— এ সব দূরে সরিয়ে রেখে ফেরান্দোর ওই শেষ লাইনটাই এই ডার্বিতে তাঁর দলের থিম বলা যেতে পারে। ‘জিতে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ো’। কোচের মতে, “এখানে ডুরান্ড কাপের ম্যাচ ও আইএসএলের প্রথম লিগের ম্যাচ খেলেছি ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে। অসাধারণ একটা পরিবেশ তৈরি হয়। এই ম্যাচটা যেহেতু ইস্টবেঙ্গলের হোম ম্যাচ, তাই হয়তো ওদের সমর্থক বেশি থাকবে গ্যালারিতে। তবে আমি এ সব নিয়ে খুব একটা ভাবছি না। আমাদের তিন পয়েন্ট পেতে হবে, লিগ টেবলে যথাসম্ভব ওপরে থেকে শেষ করতে হবে, এর বাইরে আর কিছু ভাবনা নেই আমার মাথায়”।
কিন্তু ডার্বির আগের দিনই যে দুঃসংবাদ দিলেন, তা জেনে সমর্থকেরা মোটেই খুশি হবেন না। গত ডার্বির নায়ক হুগো বুমৌস এই ম্যাচে অনিশ্চিত এবং খেলতে পারবেন না গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জোড়া গোলের নায়ক কার্ল ম্যাকহিউও। দু’জনেরই চোট। বুমৌসকে নিয়ে ফেরান্দো বলেন, “বুমৌস দিন কুড়ি দলের সঙ্গে অনুশীলন করেনি। ফলে ওর পক্ষে এখন পুরো ম্যাচ খেলা কঠিন। ও দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু দু-তিনদিনের অনুশীলনে আহামরি কিছু হয় না। ওকে ধাপে ধাপে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে হবে।” কার্লের চোট নিয়ে তিনি বলেন, “কার্ল ম্যাকহিউ কাল খেলতে পারবে না। ওর যা চোট, তাতে ওর পক্ষে মাঠে নামা সম্ভব হবে না। সুমিতেরও (রাঠি) সংক্রমণ হয়েছে। জানি না, কালকের মধ্যে ও ম্যাচের জন্য তৈরি হতে পারবে কি না”। এর ওপর আবার কার্ড সমস্যা থাকায় অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিলও শনিবার মাঠে নামতে পারবেন না। সব মিলিয়ে ডার্বি ও হিরো আইএসএল প্লে অফে নামার আগে সবুজ-মেরুন শিবিরের অবস্থা মোটেই ভাল না।
কোচ অবশ্য সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে চাইছেন এই কথা বলে, “দলের সবাই আমাদের পরিকল্পনা, কৌশল ভাল ভাবে জানে। যে-ই মাঠে নামুক, তার খেলতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বা ভাল না খেলারও কোনও কারণ নেই। চূড়ান্ত দল বাছার সিদ্ধান্ত আমিই নিই এবং সেটা জেনেবুঝেই নেব। এই মুহূর্তে ও এই পরিস্থিতিতে যারা দলের কাজে লাগবে, তাদেরই মাঠে নামাব। কে খেলল না, তার অনুপস্থিতিতে কী হবে, এ সব ভেবে মাথা খারাপ করে লাভ নেই। দলের সবার প্রতি আস্থা আছে আমার। তিন বিদেশি না খেলতে পারলেও যারা আছে, তাদের নিয়েই লড়ে যাব। এর আগেও আমাদের ছেলেরা কঠিন সময় কাটিয়ে উঠেছে। নিজেদের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। আশা করি, এ বারও সফল হবে”।
তিনি নিজের দলের দু-একজন খেলোয়াড়কে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে রাজি নন, তেমনই প্রতিপক্ষের বিশেষ কোনও তারকাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানিয়ে দিলেন। ক্লেটন সিলভা, জেক জার্ভিস, নাওরেম মহেশদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি না জিজ্ঞাসা করায় ফেরান্দো জবাব দেন, “আমাদের আক্রমণ বা রক্ষণ, যাই হোক না কেন, তার কৃতিত্ব বা দায় পুরো দলের। কোনও দু-একজন খেলোয়াড়কে এ জন্য আলাদা করে কোনও কৃতিত্ব দেওয়া ঠিক না। দলের সবাই যদি গোল করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে, তা হলে তা দলের পক্ষেই ভাল। বিপক্ষের দু-একজন খেলোয়াড়কে নিয়েও ভাবি না, পুরো দলটার ১১ জনের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। তাই সবাইকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। ক্লেটন খুবই ভাল ফুটবলার। ভাল ফর্মে আছে। কিন্তু ওর জন্য আলাদা বা বিশেষ পরিকল্পনা করার প্রশ্নই ওঠে না”।
প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল এফসি গত ডার্বিতে দু’গোলে হারলেও কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও বেশ ভাল। লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি-কে তাদের মাঠে হারিয়ে ডার্বিতে নামছে তারা। ফলে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের নিয়ে সবুজ-মেরুন কোচের ধারণা, “ইস্টবেঙ্গল ডুরান্ড কাপের দু’সপ্তাহ আগে প্রস্তুতি শুরু করেছিল। ফলে ওদের দলটাকে দাঁড় করাতেও দেরি হয়ে যায়। তবে গত সপ্তাহে ওরা যে ভাবে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়েছে, তার প্রশংসা করতেই হবে। গত ছ-সাতটা ম্যাচ ধরে দেখা যাচ্ছে ওরা খুব ভাল পরিকল্পনা নিয়ে খেলছে। রক্ষণ, আক্রমণে সবেতেই পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে। তাই ওদের সমীহ করতেই হবে”।
তবে দুই দলের মধ্যে তুলনার ধারে কাছেও থাকতে চাইলেন না প্রীতম কোটালদের কোচ। বলেন, “আমি নিজের দল নিয়েই শুধু ভাবি, অন্য দলের সঙ্গে নিজের দলের তুলনা করি না। কারণ, দুই দলের স্টাইল, মানসিকতা, ভাবনা, কৌশল সবেতেই যেখানে ফাকার, সেখানে তুলনা চলে না। দুই দলের আবেগ, আত্মবিশ্বাস, সাজঘরের আত্মবিশ্বাসও অন্য রকমের হয়। তাই নিজের দল নিয়ে কথা বলতে পারি, অন্য দল নিয়ে নয়। আমার দলের কাছে সেরাটা চাই। অন্য দলের লক্ষ্য কী, সেটা তো বলতে পারব না”।
ডার্বিতে বাড়তি মোটিভেশনেরও প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন কোচ। বলেন, “ডার্বির পরিবেশ থেকেই মোটিভেশন চলে আসে। তবে আমাদের কাছে এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট খুবই জরুরি। সে দিকে তাকিয়েই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়বে ছেলেরা”।
গত ডার্বির ভুল থেকে নেওয়া শিক্ষা এই ম্যাচে কাজে লাগানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফুটবলে ভুলভ্রান্তি হয়েই থাকে। সেগুলো শোধরাতে হয়। ট্রানজিশন, অ্যাটাক, ডিফেন্সে কিছু কিছু ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তবেই নিখুঁত হওয়ার কাছাকাছি যাওয়া যায়। আমরা জুলাইয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছি। তাই দলের ছেলেদের অনেকেই ক্লান্ত। শারীরিক দিক থেকে এবং মানসিক দিক থেকেও। এত ম্যাচ খেলার পরে সেটা হতেই পারে। তবে ভুলকে ভয় পেলে চলবে না। ভুল শোধরানোর যে চেষ্টা, সেটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ”।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google