জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: তাঁর প্রাক্তন দল এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দল নামানোর আগে এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো বেশ সতর্ক (ISL 8)। একে তো দলের সবাইকে পাচ্ছেন না। তার ওপর ঘন ঘন ম্যাচ খেলতে হচ্ছে বলে চোট-আঘাতের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ধাপে ধাপে দলকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে চান তিনি, যাতে নক -আউটে তাদের কেউ আটকাতে না পারে। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ রকমই বললেন ফেরান্দো। প্রশ্নোত্তর পর্বের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
আপনার দলের চোট-আঘাত পাওয়া খেলোয়াড়দের অবস্থা এখন কী রকম?
ম্যাচের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, পরপর ম্যাচ। তাই প্রস্তুতির আর সময় নেই। তবে প্রত্যেকেই ক্রমশ সেরে উঠছে। কঠিন সময়ের মধ্যেও ওরা ক্রমশ শারীরিক ভাবে উন্নতি করছে।
গত ম্যাচে আপনার দলের তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স কেমন লেগেছে?
আমাদের দলের সবাই সব সময় মাঠে নামার জ্ন্য প্রস্তুত থাকে। কে ২০ বছর বয়সি বা কার ১৯, এ সব নিয়ে এখন আর ভাবার উপায় নেই। প্রত্যেককেই তৈরি থাকতে হবে, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমি খুশি, প্রত্যেকেরই শেখার আগ্রহ আছে এবং প্রত্যেকেই ভাল ফুটবল খেলতে চায়। এখন আর খেলোয়াড়দের বয়স নিয়ে ভাবলে চলবে না। কে কী রকম খেলছে, কার মানসিকতা কী অবস্থায় রয়েছে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চেন্নাইন এফসি-কে ৫-০-য় হারিয়ে এফসসি গোয়া এই ম্যাচে আসছে। ওদের সম্পর্কে আপনাদের কী কী খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন?
এফসি গোয়ার পারফরম্যান্স খুবই ভাল। ওদের দলটা সব দিক দিয়ে খুবই ভাল খেলছে। সেরা চারে থেকে শেষ করার সম্ভাবনাও রয়েছে ওদের। ওরা ছন্দে রয়েছে। আমি শুনলাম ওদের শিবির এখন খুবই সুখের। তবে আমাদের নিজেদের খেলায় ফোকাস করতে হবে, যাতে তিন পয়েন্ট পাওয়া যায়।
প্রথম লেগের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল দুই দলের মধ্যে। এ বারও কি সে রকমই আশা করছেন?
তখনকার সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির ফারাক অনেক। এখন অনেক দলের খেলোয়াড়রাই কোভিড, কোয়ারান্টাইনের ফলে মানসিক ভাবে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কোভিডের প্রভাব সব দলের ওপরই পড়েছে। সব দলের মধ্যেই এখন সমস্যা রয়েছে। প্রতিদিন বা প্রতি অনুশীলনে ক্রমশ উন্নতি করা এখন সম্ভব নয়। তাই গতবারের চেয়ে এ বারের ম্যাচটা অন্য রকম হতে পারে। এ বার আমরা ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে অনেক বেশি জোর দিচ্ছি। ফলে বাড়তি কিছু দেওয়ার চেষ্টা করব।
আগামী ২০ দিনে ছ’টি ম্যাচ খেলতে হবে আপনাদের। কতটা কঠিন এই পরিস্থিতি সামলানো?
সত্যিই কঠিন। কারণ, এখন চোট পাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তার ওপর কেউ যদি পরিকল্পনা বদলে বা স্টাইল বদলে খেলতে চায়, তাও কঠিন। কারণ, সেটা নতুন করে বোঝানোর বা তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় পাওয়া যাবে না। মানসিক ভাবেও খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে উঠছে, কিন্তু সেই তুলনায় যথেষ্ট বিশ্রাম পাচ্ছে না। ফলে রিকভারও করতে পারছে না ঠিকমতো। একটা ম্যাচে পারফরম্যান্সে বা কৌশলে যা ভুলভ্রান্তি থাকে, সেগুলো শুধরে নেওয়াও এই অল্প সময়ে বেশ কঠিন। তবে আমাদের সামনে এ ছাড়া উপায় নেই। যেটা করা দরকার, সেটা আমাদের করতেই হবে। দলের একে অপরকে সাহায্য করতে হবে।
সন্দেশ ঝিঙ্গন গত ম্যাচে ৪৫ মিনিট ভালই খেলেছে। ওঁকে কি এই ম্যাচে শুরু থেকে দেখা যাবে?
দেখা যাক কী হয়। ওর অনুশীলনে আমি খুশি। ও ক্রমশ চোটের প্রভাব কাটিয়ে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে পারেছ। তবে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। ম্যাচের আগে দেখতে হবে ও কী অবস্থায় রয়েছে। তার পরে ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
এফসি গোয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড় কে বলে আপনি মনে করেন?
ওদের নাম্বার নাইন উদান্ত সিংয়ের কথা বলতেই হবে। ওদর দলের সবচেয়ে বড় শক্তি বলা চলে। তবে ওরা দল হিসেবে খেলে ও প্রস্তুতি নেয়, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
লিস্টন ছ’গোল দিয়ে আপনার দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার কী মনে হয়?
ও এখন ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সাফল্য পাচ্ছে। তবে এই সাফল্যের মধ্যে একজন খেলোয়াড়ের ভাবা উচিত সে আরও ভাল কী করে করতে পারে। আমাদের দলে এটাই হয়। যে ভাল খেলে, তাকে আরও ভাল খেলার একটা লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়। প্রতি ম্যাচে কে কী ভাবে আরও উন্নতি করতে পারে, সেই ব্যাপারে তাদের সাহায্য করা হয়। পরে প্রতি মরশুমে উন্নতির পথও দেখানো হয়।
এফসি গোয়াকে হারাতে পারলে কি সেরা চারে আপনাদের জায়গা পাকা হয়ে যাবে বলে মনে হয়?
সত্যি বলছি, আমার কাছে প্রতিটা ম্যাচই ফাইনাল। এই মুহূর্তে আমার কাছে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরের শুক্রবার যখন কেরালার বিরুদ্ধে খেলতে নামব, তখনও একই কথা বলব। পরের ছ’টি ম্যাচই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে তিন পয়েন্ট পাওয়া মানে আর কারও দিকে তাকাতে হবে না। তবে এই ম্যাচই এখন আমাদের কাছে পাখীর চোখ। তিন পয়েন্ট পেতে হবে। তার পরে পরবর্তী ম্যাচ নিয়ে ভাবা শুরু করব।
আপনারা অনেক গোল করলেও কোনও ম্যাচে ‘ক্লিন শিট’ রাখতে পারছেন না। এই অল আউট যাওয়াটা কি আপনাদের কৌশলেরই অঙ্গ?
আমাদের উদ্দেশ্য ম্যাচ জেতা। সে ১-০ হোক বা ৩-০। অনেকেই অবশ্য ৫-০-য় জেতা আরও বেশি পছন্দ করবে। তবে এটা স্বপ্ন, বাস্তব নয়। প্রিমিয়ার লিগ বলুন বা বুন্দেশলিগা, স্প্যানিশ লিগ—বেশির ভাগ লিগেই ২-০, ৩-০ কমই হয়। বেশির ভাগ ম্যাচেই ২-১, ৩-১ এরকমই ফল হয়। কারণ, সব দলেরই খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও কোচিং স্টাফ প্রায় সমান হয়। সব দলই প্রায় সমান হয়। আইএসএলেও সেরকমই হচ্ছে। যে ৬-৭টা দল সেরা চারে থাকার দৌড়ে আছে, তারা প্রায় সমান দক্ষ। প্রতি ম্যাচে দু’পক্ষই গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে এটিকে মোহনবাগান ছাড়া আর কোন দলকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখছেন?
হায়দরাবাদ, মুম্বই, কেরালা, জামশেদপুর শক্তিশালী দল। হায়দরাবাদ তো প্রায় প্রতি ম্যাচে তিন পয়েন্ট তুলছে। জামশেদপুর গত ম্যাচেই কেরালাকে ৩-০-য় হারিয়েছে। মুম্বই গত পাঁচ ম্যাচে রীতিমতো ফর্মুলা ওয়ানের গতিতে এগিয়েছে। কেরালা এখন লিগের শেষ দিকে এসে নিজেদের একশো শতাংশ দেওয়ার জন্য মরিয়া। বেঙ্গালুরুর কথাও ভুললে চলবে না। ওদের এখন ১৬টা ম্যাচ হয়েছে। তবে যাদের কথা আগে বললাম, তাদের সেরা চারে থাকার প্রবল সম্ভাবনা আছে।
আপনার দল অনেক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করছে। এই সমস্যার কী সমাধান আছে আপনার কাছে?
এই সমস্যার কথা জানি। তবে আমি এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় নেই। আমার দল যদি গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পারত, তা হলে সেটা বড় সমস্যা হত। তবে এই জায়গায় অবশ্যই উন্নতি করতে হবে। আরও ফোকাস চাই। টাইমিংয়ে উন্নতি করতে হবে। ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে আরও উন্নতি দরকার, যেগুলো অনুশীলনে করা যায়। কিন্তু আমরা তো বেশি অনুশীলনের সুযোগই পাচ্ছি না। গত চার-পাঁচটা ম্যাচে আমরা গড়ে প্রতি ম্যাচে ৬-৭টা করে শট গোলে রাখতে পেরেছি। এটা খুবই ভাল। এই জায়গা থেকেই উন্নতি করতে হবে। ৫-৬টা গোল পেতে হবে। এটাই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)