অবসর নিলেন মেহতাব হোসেন, আর দেখা যাবে না মিডফিল্ড জেনারেলকে

মেহতাব হোসেন ফুটবলের মূল স্রোতে

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: অবসর নিলেন মেহতাব হোসেন । দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে কেটে গিয়েছে ২১টা বছর বুঝতেই পারেননি। একটা সময় এসে মনে হয়েছিল আর নয়, এ বার থামতে হবে। সেই মতো ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ১০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছিলেন। অনেকের মতই ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর হাতে উঠেছে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়কত্বও। কিন্তু একটা চাপা কষ্ট কাজ করছিল মিডফিল্ড জেনারেলের, ‘‘ক্লাবকে সব দিলাম শুধু আই লিগটা দিতে পারলাম না। ব্যর্থতা তো আমারও। তাই সেই দায় নিয়ে সরে গেলাম।’’

তখনই ভেবেছিলেন পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে নেবেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে আগেই বিদায় জানিয়েছিলেন। কিন্তু অবসর নিয়েও নিতে পারলেন না মেহতাব হোসেন। ডাক এল মোহনবাগান থেকে। ফেরাতে পারেননি প্রথম যে বড় ক্লাবের হয়ে নেমেছিলেন তার ডাক। অবসর ঘোষণা করেও তা ভেঙে যোগ দিয়েছিলেন মোহনবাগানে। একটা বছর খেললেন। কিন্তু সেই হতাশাটা থেকেই গেল। আই লিগটা আর পাওয়া হল না।

আগামী বছর থেকে হয়তো আর আই লিগ থাকবে না। তাই সেই হতাশা বুকে নিয়েই শেষপর্যন্ত পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানালেন। বৃহস্পতিবারই ঘরের মাঠে খেলে ফেললেন জীবনের শেষ ম্যাচ। এটাই চেয়েছিলেন তিনি। ঘরের সমর্থকদের সামনে ফুটবলকে বিদায় জানাবেন। এই শহর অনেক ভালবেসেছে তাঁকে। সে তিনি যে জার্সিতেই নামুক না কেন। মেহতাব হোসেন সেই সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে গিয়েছে কখন। আর মেহতাবকে দেখা যাবে না ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের জার্সিতে মাঝমাঠ কাঁপাতে।

শেষ অনুশীলনে মেহতাব হোসেনকে গার্ড অব অনার

বুধবারই মোহনবাগানের হয়ে শেষ অনুশীলনে নেমেছিলেন মেহতাব। সেই কবেকার কথা, এই ক্লাবটায় দুরুদুরু বুকে পা রেখেছিলেন কালীঘাট থেকে আসা ছোট ছেলেটি। তার যে কখন তারকা হয়ে উঠেছিলেন তাঁর নিজেরই মনে নেই। সাফল্যের তুঙ্গে থেকেই মোহন‌বাগান ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন। মোহনবাগান থেকে আঘাত পেয়েছিলেন। যতদিন ইস্টবেঙ্গলের ছিলেন মোহনবাগানের ত্রিসীমানায় পা রাখেননি কখনও। কিন্তু ভাগ্য, শেষটা করতে হল সেখান থেকেই।

তবে মেহতাব একথায় স্বীকার করেন,তাঁর সেরা সময় কেটেছে ইস্টবেঙ্গলেই। কোনও একজন কোচকে বেছে না নিলেও রাইডার থেকে মর্গ্যান সব কোচের ভরসার কেন্দ্রে ছিলেন এই মিডিও। কারও কাছে ম্যাকালেলে, কারও কাছে শুধুই মেহেতাব, কারও জন্য দলের ভরসা। শুধু বলে যান একটাই কথা, ‘‘আই লিগটা জেতা হল না এটাই যা আফশোস থেকে গেল। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি ওরাও আমার সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে। এটাই সঠিক সময় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জায়গাটা খালি করে দেওয়ার।’’

মেহতাবের সন্মানার্থে এ দিন দলের অধিনায়কত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতে। প্রথম থেকে মাঠে নামলেন। যদিও ইন্ডিয়ান অ্যারোজের কাছে ৩-১ গোলে হারতে হল মোহনবাগানকে। শেষটা এখানেও ভাল হল না। তবে এখন ফুটবল থেকে দূরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান মেহতাব।

এর পর কী, জানতে চাইলে মেহতাব বলেন, ‘‘খেলার জন্য ওদের একদম সময় দিতে পারিনি। আপাতত আগামী একটা বছর পুরো সময়টা আমার পরিবারের। তার পর ভাবব কী করব। কোচিং নিয়ে ভাবনা-চিন্তা তো আছেই।’’ নিজের অ্যাকাডেমিও শুরু করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করবেন একজন প্রাক্তন তার থেকে আর বেশি কী পাওয়ার থাকতে পারে বাংলার ফুটবলের। আর সেটা যদি হন মেহতাব হোসেন তাহলেতো কথাই নেই।

(খেলার আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)