বেধে দেওয়া হচ্ছে AC-র তাপমাত্রা, স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো

AC

পারদ চড়ছে বেশ কয়ে সপ্তাহ ধরে। সে উত্তর হোক বা দক্ষিণ, পূর্ব হোক বা পশ্চিম, গরমে নাজেহাল গোটা দেশ। তার মধ্যেই হুহু করে চড়ছে AC-র চাহিদা। দিল্লি-সহ ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে তাপপ্রবাহের সতর্কতা অব্যাহত রয়েছে, তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছে। বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও। এই পরিস্থিতিতে এসি চালানো নিয়ে নতুন নিয়মের কথা বলা হচ্ছে। এসির তাপমাত্রা নির্ধারণের বিষয়ে একটি নতুন সরকারি উদ্যোগ কেবল বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই নয়, জনস্বাস্থ্য রক্ষার দিকেও একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

কেন্দ্রীয় গৃহায়ন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে শীঘ্রই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এয়ার কন্ডিশনারের জন্য একটি মানসম্মত তাপমাত্রা পরিসীমা বেধে দেওয়া হবে। সেই নতুন নিয়মের অধীনে, ব্যবহারকারীরা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ঘরের ভিতরের রাখতে পারবেন না বা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গরম করতে পারবেন না।


ভবন এবং যানবাহন উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এই নিয়মটি অতিরিক্ত শক্তি খরচ রোধ এবং পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করার লক্ষ্যে করা হচ্ছে। এটি একটি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ, যাতে পুরো দেশে ঘরের অন্দরের তাপমাত্রা একইরকম থাকে।

জলবায়ু উদ্বেগ এবং ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই পদক্ষেপটির কথা ভাবা হলেও, ডাক্তাররা বলছেন যে এই সিদ্ধান্ত শরীরের জন্য ভালো, বিশেষ করে তীব্র গ্রীষ্মের মাসগুলিতে যখন মানুষ আরামে থাকার জন্য এসির উপর নির্ভরশীল।

কেন ২২ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এসি স্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ?

অতিরিক্ত কম তাপমাত্রায় সেট করা এয়ার কন্ডিশনার শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে। যখন আপনি খুব ঠান্ডা পরিবেশে থাকেন এবং হঠাৎ করে ৪৪ বা ৪৫ ডিগ্রিতে বাইরে চলে যান, তখন আপনার শরীর তাপমাত্রার ধাক্কা সহ্য করতে পারে না। এই পরিবর্তন ঠান্ডা লাগা, ক্লান্তি, এমনকি অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাতে আপনি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সে কারণেই খুব গরম থেকে হঠাৎ করে ঠান্ডায় বা খুব ঠান্ডা থেকে হঠাৎ করে গরমে যাওয়াটা উচিত নয়।

যদি আপনার শরীরকে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সময় না দেওয়া হয়, তবে এটির প্রতিক্রিয়া খারাপ হয়। এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের বা হৃদরোগ, লিভার বা কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়া আরও বেশি হয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকার নতুন সীমা বেধে দিচ্ছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সীমা আদর্শগতভাবে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখাটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যা ঘরের ভিতরের এবং বাইরের তাপমাত্রার মধ্যের পার্থক্য কম রাখতে সাহায্য করে। ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার যত কাছাকাছি হবে, আপনার শরীর তত ভালোভাবে সামঞ্জস্য রাখতে পারবে। আর এই সামঞ্জস্যের তারতম্য হলে ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। খুব ঠান্ডার থেকে একটু উষ্ণ ঘরে ঘুমনো সব সময় ভালো। উষ্ণ পরিবেশ আপনার পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।

সরকারের এই আদেশ ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (BEE)-এর দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টার সঙ্গেও সম্পর্কিত, যা ২০২০ সালে ঘরের এয়ার কন্ডিশনারের জন্য ডিফল্ট সেটিং হিসাবে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করেছিল।

শীতলতার চাহিদা কমানো কেবল ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ বিলকেই সাহায্য করে না বরং গ্রীষ্মের তীব্র সময়ে বিদ্যুৎ গ্রিডের উপর চাপও কমায়। চরম শীতলতা প্রয়োজনীয় বা উপকারী নয়। আদর্শ হল একটি মাঝারি, সামঞ্জস্যপূর্ণ তাপমাত্রা যা আরাম এবং শক্তি সংরক্ষণ উভয়কেই সছিক পথে চালিত করে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle