Borong-এ অচেনা পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে, উঁকি দেয় পাহাড়

Borong

সেবার হঠাৎই নামটা কানে এসেছিল। তাই খোঁজ নিয়ে রওনা দিয়ে দেওয়া। দক্ষিণ সিকিম মানেই রাবাংলা বা নয়। দক্ষিণ সিকিম মানে Borong-ও। নাম শুনে বোরিং ভাবার কোনও কারণ নেই। নির্জন জঙ্গলে নানারকমের পাখির দেখা পেতে পৌঁছে যাওয়া যেতেই পারে দক্ষি সিকিমের শেষ প্রান্তে। ঘুরে এসে লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


সময়টা বর্ষা। এমনিতেই পাহাড় প্রায় ফাঁকা। ধসের ভয়ে কেউ সে মুখো হয়নি। আর বোরোং তো জনমানবশূন্য। হোম স্টে-র কর্মীরা ছাড়া ত্রিসীমানায় আর কেউ নেই। সারাদিন বিভিন্নরকের পাখির ডাক সঙ্গী হবে এই এলাকায়। নিউ জলপাইগুড়িতে নেমে বোরোং পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে গেল। রাবাংলার চেনা বাজার পেড়িয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে জঙ্গলের অন্দরে। কিছুটা ভাঙাচোড়া রাস্তা। তা পেরিয়েই পৌঁছে গেলাম বোরোং হোম স্টে-তে। চারদিকে ঘন জঙ্গলের মাঝখানে সেই সময় ওই একটিই থাকার জায়গা ছিল।  পাহাড়ের ধাপে ধাপে ছোট ছোট কটেজ। সঙ্গে ঘর লাগোয়া ছোট্ট ব্যালকনি।

প্রথম দিন কেটে গেল গুছিয়ে বসতে বসতেই। তাতে যদিও কোনও আফশোস নেই। কারণ ওই পরিবেশে ব্যালকনিতে বসেই সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে এসে দেখলাম চা আর পকোড়া ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে। জঙ্গলের গহীনে তখন ধিরে ধিরে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। পাতার ফাঁক দিয়ে আসছে পড়ন্ত সূর্যের আলো। পাহাড়ে অন্ধকার নামে ঝুপুৎ করে। হঠাৎই চরাচর অন্ধকারে ঢেকে গেল। জলে উঠল পাহাড়ের ধাপে ধাপে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুৎ বাতি স্তম্ভ।

Borong

রাত বাড়তেই বর্ষার পাহাড়েও ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসল। পাহাড়ে রাতও হয় তাড়াতাড়ি। তাই দ্রুত ডিনার সেরে কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে গেলাম। বেশি রাতের দিকে ঝেপে বৃষ্টি এল। টিনের ছাদে রীতিমতো ঝমঝম শব্দের লিরিক লেখা হল রাতভোর। ভোর হতেই অবশ্য বৃষ্টি গায়েব। তবে মেঘেরা তখনও খেলা করছে হোম স্টের আনাচ কানাচ। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। মেঘের মধ্যে ভাসতে ভাসতেই সকালের চা পান সেরে গ্রামের রাস্তায় শুধুই হেঁটে বেড়াতে বেরিয়ে পড়লাম। গ্রামটা যেখানে শেষ হচ্ছে সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছে এই পাহাড়টা। আর সেখানেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুটো ব্রিজ। একটা পরিত্যক্ত আর একটা নতুন ব্রিজ যার তখনও কাজ চলছিল। সেই ব্রিজ পেরিয়েই ভবিষ্যতে অন্য পাহাড়কে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সেই পথে শুধু গ্রামের মানুষেরই পায়ে পায়ে তৈরি হয়েছে পথ। বেশি  দূর যাওয়া গেল না অবশ্য। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় রীতিমতো কাঁদা আর পিচ্ছিল সেই পথ। পা ফসকালে সোজা খাদ। তাই ফিরতেই হল। লাঞ্চ সেরে এদিনই দেখতে যাওয়ার কথা পুরনো বোরোং মনাস্ট্রি। তৈরি হয়েছিল ১৭৩০-এ। সিকিমের সব থেকে পুরনো মনাস্ট্রি এটিই। কাছাকাছিই তৈরি হয়েছে নতুন বোরোং মনাস্ট্রি। যার আর একটি নাম রালং মনাস্ট্রি। দুই মনাস্ট্রির মধ্যের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার।

Borong

লাঞ্চ সেরেই বেরিয়ে পড়লাম। বোরোং গ্রাম থেকে খুব বেশি দূর নয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে দেখা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাউন্ট পান্ডিম, মাউন্ট নারসিং, ব্ল্যাক কাব্রুর মতো শৃঙ্গ। আর মার্চ-এপ্রিলে ফুলের সময় গোটা এলাকা ঢেকে যায় রডোডেনড্রনে। সঙ্গে চেরিব্লস। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। মনাস্ট্রি দেখা শেষ করে ঘুরে আসা যায় রাবাংলা। অপূর্ব সুন্দর করে সাজানো রাবাংলার মল রোড। যেখানে হেঁটে, বসে সময় কেটে যায়। বর্ষাকাল হওয়া রাস্তার ধারে ধারে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সব ঝর্ণা। পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে রাস্তায়, রাস্তা পেড়িয়ে নেমে যাচ্ছে খাদে।

বোরোং মানে পাহাড়, জঙ্গল, ফুল, পাখি আর শান্তির ঠিকানা। রাবাংলা থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার। মাইনা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে ঘেরা বোরোং। এই জঙ্গলে রয়েছে বেশ কিছু মেডিসিনাল প্ল্যান্ট। যে কোনও সময়ে বোরোংয়ে যাওয়াই যায়। এক একটি সময়ের সৌন্দর্য এক এক রকম। তাই মন চাইলেই দু’হাত বাড়িয়ে আহ্বান জানাবে দক্ষিণ সিকিমের এই গ্রাম।

Borong

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)