Kalka-Shimla Toy Train: কালকা থেকে টয় ট্রেনে শিমলা, প্রথম পর্ব

Kalka-Shimla Toy Train

সুচরিতা সেন চৌধুরী: শিমলা ট্যুরের ভূমিকা হল এই কালকা-শিমলা টয় ট্রেন (Kalka-Shimla Toy Train)। তাই তা দিয়েই শুরু হোক এই পর্বের পথ চলা। শিমলা-কুলু-মানালি, খুব চেনা ট্যুর প্রোগ্রাম। এক ঘেয়ে, খানিকটা ঘ্যানঘ্যানে। তবুও বাঙালি থেকে ভিনরাজ্য আর বিদেশিদের কাছে তো এই তিন জায়গার মাহাত্মই অন্যরকম। তাই যতই যাই হোক না কেন, এই ট্যুর প্রোগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। আমিও ব্যতিক্রম নই। তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। সালটা ১৯৯৯। তার পরও গেছিলাম ঠিক ২০ বছর পর। তবে আমি আজ বলব ১৯৯৯-এর অভিজ্ঞতা। ভড়া বর্ষায় পাহাড়ি ধস, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে হিমাচল বেড়ানোর গল্প।

হাওড়া থেকে কালকা মেল কাক ভোড়ে পৌঁছে দিল কালকা স্টেশনে। তখনও ভোড়ের আলো ফোটেনি। এখানে বলে রাখি আমরা ট্রেনটি ধরেছিলাম পুরানো দিল্লি স্টেশন থেকে। কারণ সেই সময় কলেজ শেষ করে আমরা বন্ধুরা মিলে দিল্লি পৌঁছেছিলাম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। চাকরি হয়নি তবে অপূর্ব একটা বেড়ানোর স্মৃতি তৈরি হয়েছে।

বেশ বেশি রাতেই দিল্লি থেকে কালকা মেল ছাড়লো। ট্রেনে উঠেই ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া কাজ ছিল না। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা হল আমরা কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই বেরিয়ে পড়েছিলাম। ট্রেনের টিকিট আগাম বুকিং ছিল না, না ছিল কোনও হোটেল বুকিং। ওই বয়সে যা হয়। তবে সবই পেয়ে গিয়েছিলাম সহজেই। সেই গল্পে ক্রমশ আসব।

Kalka-Shimla Toy Train

কালকা স্টেশনে পৌঁছে আলো আঁধারিতে বুঝতে পারলাম হালকা পাহাড়ের রেখা দেখা যাচ্ছে। কালকা স্টেশনটা আমার খুব প্রিয় হয়ে গিয়েছিল ঠিক সেই সময় থেকেই। ছিমছাম, ঝা চকচকে, পরিষ্কার রেল স্টেশন খুব কমই দেখা যায়। কালকা তার মধ্যে একটি বলে আমার মনে হয়। আমরা তখনও জানতাম না কালকা থেকে কীভাবে শিমলা পৌঁছবো। স্টেশনে নেমেই চোখে পড়েছিল কালকা-শিমলা টয় ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইচ্ছেটা জাঁকিয়ে বসল ওই ট্রেনে করে শিমলা পৌঁছনোর। কিন্তু টিকিট?

তখনও অনলাইন টিকিট আসেনি। এলেও আমরা তাতে সরগর নই। এক বন্ধু ছুটল টিকিট কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে জানা গেল ট্যুরিস্ট ট্রেন যেটা নাম শিবালিক এক্সপ্রেস সেটা পুরো ভর্তি। যেতে হলে একটাই উপায় লোকাল ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেনী। তাই সই। বলে টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। লোকাল ট্রেনের মতই সিট। ততক্ষণে আকাশ থেকে রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে ভোর হচ্ছে। সামনের পাহাড়ের হাতছানি যেন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

Kalka-Shimla Toy Train

সকাল ৭টা নাগাদ কালকা স্টেশন থেকে মন্থর গতিতে ছাড়ল ট্রেন। আমাদের সঙ্গিরা সবাই এই পথের নিত্য যাত্রী বোঝাই গেল। বেশ ভিড়। আমরা অবশ্য জানলার পাশে জায়গা পেয়ে গিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে কালকা ছেড়ে ট্রেন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হল। ছোট ছোট পাহাড়ি স্টেশনগুলো যেন এক একটা রূপকথার গল্প। একটা স্টেশনকে নিয়ে লিখে ফেলা যায় একটা আস্ত উপন্যাস। ছোট ছোট স্টেশনের বেঞ্চগুলোতে কখনও রোদ তো কখনও নেমে আসছে মেঘ। সেখানেই স্থানীয় প্রেমিক, প্রেমিকার অবসর যাপন। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলাম কত কত নাম না জানা স্টেশন আর টানেল।

এই পথে রয়েছে ১০৩টি টানেল। তার মধ্যে একটি বন্ধ করে পাস দিয়ে লাইন তৈরি করা হয়েছে। আপাতত ১০২টি টানেলের মধ্যে দিয়েই যায় ট্রেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় টানেল বারোগ। ৩৩ নম্বর টানেল এটি। পেড়তে হয় ৩৭৫২ ফিট রাস্তা। এখানে সব ট্রেন দাঁড়ায়। এই বারোগ টানেল আর স্টেশন নিয়ে রয়েছে রোমহর্ষক গল্প। একবার তো এমন হল পাশাপাশি গা ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে পড়ল দুটো ট্রেন। মাঝে এক ফালি জায়গা। এক ট্রেন থেকে আর এক ট্রেনে লাফিয়ে চলে যাওয়া যায়। স্থানীয়রা অনেকেই তেমনটাও করলেন। আর এই পথে প্রকৃতি পুরো সময়টাই উজাড় করে দেবে। শুধুই সবুজের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলা।

Kalka-Shimla Toy Train

লাইনের ধার ধরে রয়েছে পাইন গাছের জঙ্গল। কোথাও কোথাও লাইনের গা দিয়েই চলে গিয়েছে রাস্তা। সেখানে কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে। কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে রোদে পিঠ দিয়ে। দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যায়। গন্তব্যের দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলি। কখনও কখনও দেখা হয়ে যায় শিমলাগামী রাস্তার সঙ্গে। সরক পথে তখন কত গাড়ি ছুটে চলেছে পাহাড়ের রানির উদ্দেশে। আমরাও চলেছি।

আমার সব সময় ভাল লাগে এই চলাটাই। ডেস্টিনেশন যত দেড়িতে আসে ততই ভাল। শুধুই চলা। আর সে পথ যদি হয় এমন সুন্দর তাহলে ডেস্টিনেশনের কী দরকার। কিন্তু কোথাও না কোথাও পৌঁছতেই হয় একটা সময়ের পর আবার নতুন পথে বেরিয়ে পড়ার জন্য। আমরাও পৌঁছে গেলাম অসাধারণ সুন্দর শিমলা স্টেশনে। সেখানে তখন মেঘ নেমেছে চরাচর জুড়ে।

Kalka-Shimla Toy Train

ছবি—লেখক

(প্রথম পর্ব)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle