কাঠমান্ডু প্যালেসের শহর, যেখানে ইতিহাস কথা বলে, দ্বিতীয় পর্ব

কাঠামান্ডু প্যালেসের শহরকাঠমান্ডু শহর

কাঠামান্ডু প্যালেসের শহর, যেখানে প্রতিটি দেওয়ালে লেখা রয়েছে ইতিহাস। কোথাও সেই ইতিহাস গর্বের কোথাও বা রক্তের। যে ইতিহাসে ভর করে সে দেশে রাজতন্ত্র চলেছে যুগের পর যুগ। প্রথম দিন ছিল কাঠমান্ডুর খাবার খবর আর আজ শুধুই প্যালেসের কথা লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


সময়টা দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে ৯টা বছর। সব যে খুটিনাটি মনে রয়েছে এমনটাও নয়। তবে অনুভূতিগুলো আজও একইরকমভাবে তাজা। কাঠমান্ডুর কথা উঠলে ঠিক যেভাবে ভেসে ওঠে সেখানকার ফুটবল স্টেডিয়াম, ঝাচকচকে থামেল, তেমনই মনে পড়ে যায় অসাধারণ আর্কিটেকচারের সব প্যালেস। কোনওটা দেখেছি কাজের পথে, কোনওটা রাতের অন্ধকারে আবার কখনও ভোরের আলোয়। যার মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধনাথ স্তুপ, সয়ম্ভুনাথ মন্দির, পশুপতিনাথ মন্দির, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়্যারের মতো সব অনবদ্য জায়গা।

প্রথমদিনই দেখা হয়ে গিয়েছিল বৌদ্ধনাথ স্তুপের সঙ্গে। টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। কত লেগেছিল মনে নেই। স্তুপের চারদিকে বাস করে প্রচুর টিবেটিয়ান পরিবার। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি খুব বিখ্যাত ধর্মীয় জায়গা। বুদ্ধিষ্টরা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে এই ধর্মস্থানকে। এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেড সাইটেরও তকমা দেওয়া হয়েছে। মন্দির চত্তরের মাঝখানে রয়েছে বিশাল সাদা স্তুপ। তার মাথায় সোনালি রঙের গম্বুজ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও ছোট-বড় নানা আকাড়ের স্তুপ। স্তুপের মাথা থেকে নেমে এসেছে নানা রঙের রঙির প্রেয়ার পতাকা।

এর পর রয়েছে সয়ম্ভুনাথ মন্দির। ভগবানে বিশ্বাস না থাকলেও এখানে যেতেই হবে সেখানকার আর্কিটেকচারের জন্য। রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছতে হয় সেখানে। পথে দেখা হয়ে যাবে হনুমানের দলের সঙ্গে। আপনার হাতে চিপসের প্যাকেট বা কোল্ড ড্রিঙ্কস থাকলে আপনার থেকে চেয়ে নেবে তারা। কিছু করার নেই দিতেই হবে। এই মন্দিরটি রয়েছে কাঠমান্ডু শহরের একদম মাঝখানে। যেখানে বৌদ্ধ ও হিন্দু দুই ধর্মের মিলন ঘটেছে।

কাজের ফাঁকে পুরো কাঠমান্ডুকে দেখে নেওয়াটা খুব কঠিন নয়। কখনও পায়ে হেঁটে আবার কখনও লোকাল গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়া যায়। নেপালের বিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দির না দেখলে আপনার কাঠমান্ডু যাওয়া বৃথা। এর ভিতরে রয়েছে শিবলিঙ্গ। নেপালের সব থেকে পুরনো মন্দির এটি। বিশাল মন্দির চত্তর বাগমতি নদীর পার ধরে। মূল মন্দিরের চারদিক ঢাকা রয়েছে রুপোর আস্তরণে। বেনারস, হরিদ্বারের মতো এখানেও নদীর ধারে দেখা যায় সন্ধ্যারতী। পুরো মন্দির চত্তরে রয়েছে ৪৯২টি মন্দির। তার মধ্যে ১৫টি শিব মন্দির ও ১২টি জ্যোতির্রিঙ্গা রয়েছে। যেখানে আগুন কখনও নেভে না। রয়েছে বিখ্যাত শ্মশান।

কাঠমান্ডুর আরও একটি বিখ্যাত জায়গা হল দরবার স্কয়্যার। আমার মনে আছে আমরা দরবার স্কয়্যারে যখন পৌঁছেছিলাম তখন অন্ধকার নেমেছে। সেখানে বিশেষ আলো নেই। দরবার স্কয়্যারের বাইরে রীতিমতো মেলা বসেছে। স্থানীয় মানুষরা জিনিসপত্র কিনছেন। আমরা যখন পায়ে পায়ে ভিতরে ঢুকলাম তখন সেখানটা প্রায় জনমানব শূন্য। বেশ একটা গা ছমছমে ব্যাপার রয়েছে। অনেক ঘরই বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। যার ভিতরে একদম মাঝখানে রয়েছে শিব-পার্বতীর মন্দিরসহ আরও বেশ কিছু মন্দির। ২০১৫-র ভূমিকম্পে এই দরবার স্কয়্যারের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখান থেকেই মল্ল ও শাহ রাজারা দেশ চালাত। আজও রাজ পরিবারের নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এখানেই।

এছাড়া পুরো কাঠমান্ডু জুড়ে রয়েছে একাধিক ছোট-বড় প্যালেস। যার অনেকেরই ইতিহাস জানা নেই স্থানীয়দেরও। রয়েছে একাধিক মন্দির। নেপালি রাজাদের আর্কিটেকচারে রয়েছে জগন্নাথ মন্দির। যদিও সেই মন্দির কিন্তু কৃষ্ণের। রয়েছে কালভৈরব মন্দির। রয়েছে বিখ্যাত হোয়াইট মনাস্ট্রি। ন্যাশনাল মিউজিয়ামে গেলে নেপালের ইতিহাসের সঙ্গে ভালভাবে পরিচয় করা যাবে। এই সব প্যালেস এবং মন্দির চত্তরে রয়েছে স্থানীয় জিনিসের বাজার। সংগ্রহে রাখা যেতেই পারে। তবে এখানে বলে রাখা ভাল, যাঁরা আগে কাঠমান্ডু গিয়েছেন তাঁরা এখন গেলে আর পাঁচ মাথার মাঝখানে দেখতে পাবেন না বিখ্যাত গোলাকৃতি ২২ তলার ধারাহারা বাড়িটি। তার ভিতরে ছিল ঘোরানো প্রাচীন আমলের সিঁড়ি। তবে ২০১৫-র ভূমিকম্পে তা প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়।  ভিতটা রয়ে গিয়েছে শুধু। আজ এই টুকুই, কাল লিখব সূর্যদয় দেখা আর ক্যাসিনোর কথা।

ছবি— লেখক

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)