Sandakphu Trekking 5: স্মৃতির পাতা থেকে, শ্রীখোলা টু রিম্বিক

Sandakphu Trekking 5রিম্বিকের পথে

কতটা পথ পেড়লে তবে পথিক বলা যায়? এই প্রশ্নটা সারাক্ষণই ঘোরে মনে, মাথায়। আদৌ কি আমি পথিক? নাকি শুধুই সুখি ভ্রমণার্থী (Sandakphu Trekking 5)। তবে যাই হই না কেন সব চিন্তাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতির টানে বেরিয়ে পড়তে কার না ভাল লাগে। যেন সেই স্বপ্নই বুনতে থাকে মানুষ দিনের পর দিন। তার পর একদিন হঠাৎ করে সুযোগটা চলে আসে। আসলে মন থেকে চাইলে একদিন স্বপ্নটা সত্যি হয়। গত দু’বছর গৃহবন্দি থাকা মানুষ আবার নতুন করে ডানা মেলতে শুরু করেছে। ঘর ছেড়ে কেউ পরিবার, কেউ বন্ধু আবার কেউ একাই বেরিয়ে পড়েছে চেনা গণ্ডির বাইরে। তার আগে একটু স্মৃতির পাতা উল্টে দেখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


শ্রীখোলায় আমাদের জন্য ছিল একটা বিশাল ডর্মিটরি। কাঠের ঘর। কয়েকটা খাট আর কয়েকটা নিচে গদি। ট্রেকারদের জন্য এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে। প্রথম রাতে যতক্ষণ জেগে ছিলাম নদীর গর্জন শুনতে পেয়েছি। গেস্ট হাউসের গা ঘেষেই বয়ে চলেছে নদী। ভেবেই রেখেছিলাম সকালে উঠেই আগে নদী দেখব তার পর সব কিছু। যে কারণে অনেক সকালই ঘুম ভেঙে গেল। উঠেই সোজা জানলার পাশে। পথের জঙ্গলের পর নদীর সৌন্দর্যের প্রেমে না পড়ে পারলাম না। ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চলে গেলাম একদম নদীর পারে। ততক্ষণে উঠে পড়েছে দলের সকলেই। আগের রাতে জায়গাটা বুঝতেই পারিনি। সকালে বুঝলাম পুরো ট্রেক রুটের সেরা জায়গা এটাই। সৌন্দর্যে যে কোনও জায়গাকে বলে বলে ১০ গোল দেবে।

এখানেও আশপাশে কোনও বাড়ি-ঘর নেই। চারদিকে ঘন জঙ্গল। আরও ভাল হচ্ছে প্রবল ঠান্ডাটাও এখানে নেই। কারণ উচ্চতা ৬৯০০ ফিট। সান্দাকফু থেকে এক ধাক্কায় ৪ হাজার ফিট নেমে আসার পর রীতিমতো গরম লাগছে। তাও নদীর কোলে ছড়িয়ে থাকা পাথরের উপর বসেই সময় কেটে গেল। কখনও কড়া রোদ তো কখনও মেঘের দল ছুঁয়ে চলে গেল। কিন্তু আমাদের ওখান থেকে সরানো গেল না। সত্যি কথা বলতে কী পুরো ট্রেকিংয়ে ভাল মতো কেউ স্নান করতে পারেনি। এটাই মোক্ষম জায়গা। তবে পাহাড়ের সর্বত্র জলের বেশ অভাব। তার মধ্যেই সকলে স্নান সেরে নিল। তার পরই লাঞ্চ। লাঞ্চটাও নদীর পাড়ে বসেই করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু দিল না। তাই খাওয়া শেষ করে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াইনি।

Sandakphu Trekking 4: স্মৃতির পাতা থেকে, সান্দাকফু টু শ্রীখোলা

Sandakphu Trekking 5

ট্রেক রুটের এটাই শেষ আস্তানা আমাদের। সে কারণেই যেন সব ভাললাগাকে নিঃশ্বাসে, প্রশ্বাসে ভরে নিতে চাইছিলাম আমরা। তখন হয়তো এভাবে ভাবিনি। তবে আজকে দাঁড়িয়ে তেমনটাই মনে হয়। এক মুহূর্তও নষ্ট করা চলবে না। প্রকৃতির মধ্যে থাকার প্রতি সেকেন্ড উপভোগ করতে হবে। আজও পাহাড়ে গেলে একই অনুভূতি হয়। মনে আছে শ্রীখোলার কনকনে ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে বসেছিলাম দীর্ঘ সময়। দু’দিন আগেই যে ধুম জ্বর এসেছিল সে কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। না, তাতে কিন্তু আর অসুস্থ হইনি। বিকেলের চা-টাও জলে পা ডুবিয়েই পান করেছিলাম। এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা নেই, স্লিপিং বুদ্ধ নেই, পাহাড় চূড়ায় তুষার জমে থাকা নেই। সূর্যদয়, সূর্যাস্ত দেখা নেই। তবুও যা আছে তা এই সবেরই পরিপূরক। ঘন জঙ্গল, খরোস্রোতা নদী, নানা রকমের পাখির ডাক—আর কী চাই?

পরদিন শ্রীখোলা ছাড়তে মন খারাপ হয়েছিল। পিছন ফিরে বার বার দেখছিলাম প্রিয় নদীকে যতদূর দেখা যায়। শুনছিলাম তার ডাক। ট্যুরের শেষ ট্রেকিং রিম্বিক। একদিন সব ভাললাগা এভাবেই শেষ হয়। যার রেশ থেকে যায় সারাজীবন। যেভাবে গত ২০ বছর ধরে থেকে গিয়েছে এই সান্দাকফু ট্রেকিংয়ের স্মৃতি। ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি মনে মনে দিলেও কোথাও এখনও ফিরে যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি ফালুট। যে ইচ্ছে এখনও আছে। ট্রেকিং করে অতদূর পৌঁছনোর আত্মবিশ্বাস আর নেই। তবে শুনেছি এখন গাড়ি চলে ওই পথে। তাই আশাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। শুনেছি ফালুটের অবস্থানের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সান্দাকফুর থেকেও বেশি কাছ থেকে দেখা যায়। মনে হয় হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। সেই স্পর্শের অপেক্ষায় আজও আছি। শ্রীখোলা থেকে রিম্বিক সহজ ট্রেকিং। বেশ গরম। দ্রুতই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। বাসের টিকিট আগের দিনই গিয়ে করে এনেছিল আমাদে গাইড। তাই চিন্তা নেই এই বাসই আমাদের পৌঁছে দেবে দার্জিলিং। তার পর নিজের শহরের নিত্য নৈমিত্তিক জীবনে ঢুকে পড়তে হবে। অবসরে স্মৃতি রোমন্থন। থেকে যাবে মুহূর্তগুলো।

Sandakphu Trekking 5

শ্রীখোলায় নদীর বুকে বসেই কেটেযায় সময়

(যে গাইড গত ৭ দিন আমাদের জীবনের সঙ্গে জরিয়ে গিয়েছিল তিনি তার কয়েক বছরের মধ্যেই এক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন। ট্যুরিস্ট নিয়েই ফিরছিলেন। অদ্ভুত মিষ্টি ব্যবহার, সব সময় সাহায্যের জন্য তৈরি মানুষটার নামটা আজ আর মনে নেই কিন্তু মানুষটাকে ভুলতে পারিনি আমরা কেউ। যেখানে আছ ভাল থেকো গাইড। তুমিই আমাদের নতুন বেড়ানোর স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিলে। তোমার দেশে কি ট্রেকিং হয়? তাহলে চুটিয়ে পর্যটকদের ট্রেকিংয়ে নিয়ে যাও। সময় হলে আমিও যাব। তার আগে ফালুটটা ঘুরে আসতে হবে।)

(সান্দাকফু ট্রেকিং শেষ)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)