Shimla Sightseeing: ঘোরার পিঠে পাহাড়ি পাকদণ্ডী, তৃতীয় পর্ব

Shimla Sightseeingশিমলা ম্যাল থেকে সূর্যাস্ত

সুচরিতা সেন চৌধুরী: খুব বেশি ধকল নিতে না চাইলে শিমলা ম্যাল, তার পাশের রাস্তা, চার্চেই সময় কাটিয়ে দেওয়া যায় দারুণভাবে। তবে সব দেখারই একটা মাহাত্ম্য রয়েছে (Shimla Sightseeing)। সবটাই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এক একটা সংগ্রহ। এই এত বছর পড়ে লিখতে বসে বুঝতে পারছি কিছু অভিজ্ঞতার ঝুলি কখনও খালি হয় না। সেটা থেকে যায় চোখের ক্যামেরায় মনের ফ্রেমে। তেমনই শিমলার সাইট সিন। এতগুলো কথা বললাম কারণ আমি কখনওই খুব বেশি সাইট সিন নিয়ে উৎসাহত নই। প্রতিদিন এদিক ওদিক না করে বরং একটা জায়গাকে আঁকড়ে ধরতে ভালবাসি। অনেক কিছু এক সঙ্গে ঝুলিতে চলে এলে আমি রীতিমতো ঘেঁটে যাই। যেমন খাওয়ার পাতে যদি অনেক আইটেম থাকে তাহলে আমার খাওয়ার পুরো ১২টা বেজে যায় ঠিক তেমনই।  তবে এবার সাইট সিনে গেছিলাম।

ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়ি আগে থেকেই এসে দাঁড়িয়েছিল। আসলে হিমাচলের সবুজ এতটাই আকর্ষনীয় যে রাস্তার প্রতিটি মোরে মোরে মনে হবে এটাই এই পথের সাইট সিন। দূরে সবুজ ভ্যালি, পাইনের বন, ছোট ছোট বাড়ি—সবটা নিয়েই গোটা হিমাচল। তবে হ্যাঁ, জায়গা বিশেষে হিমাচলের সৌন্দর্য এক এক রকম। যেমন শিমলা-কুলু-মানালির সঙ্গে কখনওই সৌন্দর্যে মেলানো যাবে না ডালহৌসি-খাজিয়ার-চাম্বাকে। এই তিন জায়গার গল্প অন্য কোনও সিরিজে বলব। এবার শুধু শিমলা-কুলু-মানালি। শুরু হল ফাগুর আপেল গার্ডেন দিয়ে। এর আগে গাছ ভর্তি আপেল দেখার কোনও সুযোগ হয়নি। আপেল বাগান শুরুতেই মুগ্ধ করল। তার পাশেই রয়েছে অর্কিড গার্ডেন।

জাখু হিলসের কাছে পৌঁছ‌নোর অনেক আগে থেকেই দেখা যায় বিশালাকার হনুমান মূর্তি। আর তাঁকে ঘিরে রেখেছে সবুজ পাইনের ঝাকড়া মাথা। এটি শিমলার সব থেকে উঁচু জায়গা, প্রায় ৮ হাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। যেখান থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে বরফঢাকা শিবালিক রেঞ্জ দখা যায়। এই হনুমান মূর্তি নিয়ে লোক কথায় আছে, লক্ষ্মণের জন্য সঞ্জীবনী বুটি আনতে গিয়ে এখানেই বিশ্রাম নিয়েছিল হনুমান। এই সাইটসিনের সব থেকে আকর্ষনীয় দুটো জায়গা হচ্ছে নালদেরা ও কুফরি। কুফরি ভ্যালি যখন বরফে ঢেকে যায় তখন সেই জায়গা আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। তখন সেখানে স্কেটিং, স্কি-র মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে মেতে ওঠেন ট্যুরিস্টরা।

Shimla Sightseeing

রাতের শিমলা

এখান থেকেই চলে যাওয়া যায় নালদেরা। আর এই নালদেরা থেকেই ঘোরায় চেপে ঘুরে নেওয়া যায় পাহাড়ের একটা অংশ। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পাহাড়ের গা ঘেষে যখন ঘোরা কাদা মাখা পথে এগিয়ে চলে তখন মনে হয় যে কোনও সময় গড়িয়ে খাদে পড়ে যেতে পারি। এমনি আমি শুনেছি, ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে ঘোরাও পা পিছলে পড়েছে যাত্রীসহ। তবে আমাদের ভাগ্য ভাল তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। এখান থেকেই রাস্তার আর এক প্রান্তে দাঁড়ালে চোখ ভড়ে দেখা যায় গ্রিন ভ্যালি। স্বর্থক এই নাম। এখানের সবুজ কখনও কম হয় না। শুধুই সবুজ আর সবুজ। এখানে আরও একটি মন্দির খুব বিখ্যাত সেটি হল তারাদেবী মন্দির। জানা যায় এখানে যে কাঠের দূর্গা মূর্তিটি রয়েছে সেটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে এই মন্দিরের আর্কিটেকচার দেখার মতো।

বর্ষায় গেলে আরও একটি সুন্দর দৃশ্য দেখা যাবে শিমলার সাইটসিনে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তীব্র গতিতে নেমে আসছে জল। পাথরের গায়ে ধাক্কা খেতে খেতে গিয়ে পড়ছে গভীর খাদে। নাম চাদউইক ফলস। বর্ষায় এখানে জল থাকে অন্য সময় গেলে হতাশ হতে হবে কিন্তু। সাইট সিনের পাশাপাশি বার বার রাস্তায় দাঁড়াতেই হবে প্রকৃতিকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য। সাইট সিন সেরে যখন শিমলা শহরে পৌঁছলাম তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। মেঘের শরীর চিরে ঠিকড়ে বেড়িয়ে আসছে সূর্যের শেষ বেলার ছটা। ম্যাচ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোধূলির আলো।

Shimla Sightseeing

আপেল বাগান

আসতে আসতে অন্ধকার নামছে শিমলার বুকে। সাইটসিনের ক্লান্তি কাটাতে আমরা হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। গতকাল খোলা না থাকলেও এদিন খোলা ছিল উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন এই ক্রাইস্ট চার্চ। চার্চের ভিতরের পরিবেশ আমার সব সময়ই খুব ভাল লাগে। মনটা শান্ত হয়ে যায়। প্রতিদিনের দৌঁড় ঝাপের জীবন, অসংখ্য শব্দের বেড়াজাল থেকে নিজেকে মুক্ত মনে হয় তখন।

চার্চ থেকে বেরিয়ে হাঁটা লাগালাম কালিবাড়ির উদ্দেশে। পাহাড়ি পাকদণ্ডি পথে অনেকটা হাঁটা। তবে ওই পথে রাস্তা একদম ফাঁকা। ম্যাল রোডের ঠিক পাশ দিয়ে ওপরে উঠে গিয়েছে রাস্তা। কিছুটা আলো আধারি পেরিয়ে যখন কালিবাড়িতে পৌঁছলাম তখন কাসর-ঘণ্টার শব্দে গমগম করছে এলাকা। ঠিক যেমনটা আমাদের একানে দূর্গা পুজো বা কালীপুজোর সময় হয় তেমন। ধূপকাঠির গন্ধ মম করছে গোটা চত্তর। বিশাল চত্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাঙালি। এই কালিবাড়িতে থাকারও জায়গা আছে। কালিবাড়ির চাতাল থেকে দূরের পাহাড়ের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ঝুপুৎ করে আকাশ থেকে নেমে আসে রাশি রাশি মেঘ। যেন সন্ধে পুজোর আসরে ওরাও অতিথি।

Shimla Sightseeing

শিমলা কালিবাড়ি

সেই পর্ব সেরে আবার ম্যালের পথ ধরি। শিমলার ম্যাল মার্কেট খুবই আকর্ষনীয়। কিন্তু আমাদের ট্যাক ফাঁকা। তাই শখ পূরণ করার উপায় নেই। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কেনা আর রাতের খাবার সেরে নেওয়া পর্যন্তই থামতে হল। কারণ পর দিন আমাদের গন্তব্য মানালি। খবর নিয়ে জানলাম সেখানে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে তাই ঠান্ডাও বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। সেই ঠান্ডা সামলানোর মতো গরম পোষাক আমাদের কাছে ছিল না আগেই বলেছিলাম। তাই কিনতেই হল। আর তাতেই বাজেটে বেশ খানিকটা টান পড়ল।

বাকি ট্যুরটা খুব সামলে চলতে হবে বুঝেই গিয়েছিলাম আমরা। তবে এসে যখন পড়েছি তখন কুলু-মানালি ঘুরেই ফিরব। আচ্ছা এখানে বলে রাখি, শিমলা থেকে মানালিতে হিমাচল ট্যুরিজমের হোটেল বুকিং করে নিয়েছিলাম। ভোর ভোর বেরতে হবে, অনেকটা রাস্তা। তাই রাতের শিমলার সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরতে হল।

Shimla Sightseeing

ঘোরার পিঠে পাহাড় দেখা

ছবি—লেখক

(তৃতীয় পর্ব)

Alone In Shimla: কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, দ্বিতীয় পর্ব

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle