জয় ভিলা মহল, ৪ হাজার কোটির জীবন্ত ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আজও

জয় ভিলা মহল

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: জয় ভিলা মহল আজও গম গম করে রাজ পরিবারের বাসিন্দাদের আনাগোনায়। যা ভারতের জীবন্ত ইতিহাস নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে গোয়ালিয়রে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মহল দেখতে যাই। রাজস্থান তো মহলেরই শহর। দিল্লি, হায়দ্রাবাদ শহরের আনাচ-কানাচ ছড়িয়ে রয়েছে কত কত মহল। তবে সবই আজ মৃত ইতিহাস। কত কত বছর আগে নিঃশ্বেস হয়ে যাওয়া কাহিনীর অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সব মহল। যার দেওয়ালে লেখা রয়েছে জন্ম-মৃত্যুর অনেক কাহিনী। ঘুরে তা শুনিয়ে চলেন সেখানকার গাইডরা। কোনও কান দিয়ে সরাসরি পৌঁছে যায় মনের গভীরে। আবার কোনওটা শিহরণ জাগায় শরীরে। কিন্তু জয় ভিলা মহল চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক বর্তমান যার একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই মহলে থাকেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

জয় ভিলা মহলকে জয় ভিলা প্যালেসও বলা হয়। উনবিংশ শতাব্দির এই মহল ঘিরে রয়েছে প্রচুর কাহিনী। মহারাজাধিরাজ শ্রীমন্ত জয়াজিরাও সিন্ধিয়া আলিজা বাহাদুর তৎকালীন গোয়ালিয়রের রাজা ১৮৭৪-এ তৈরি করেছিলেন এই মহল। এখন এই মহলের বেশিরভাগ অংশেই রয়েছে মিউজিয়াম, যার নাম জিয়াজিরাও মিউজিয়াম। ১৯৬৪-তে সাধারণের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল মিউজিয়ামটি। আর বাকি অংশে এখনও থাকেন  সিন্ধিয়া বংশের মানুষরা। এখন এই মহলের মালিকানা রয়েছে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার হাতে।

তিনতলা এই প্রাসাদের সীমানা ১২,৪০,৭৭১ স্কয়্যার ফিট। পুরো মহল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাসকান, ইটালিয়ান ও কোরিন্থিয়ান কারুকার্য। যা দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজের প্রাসাদ সাজিয়েছিলেন তৎকালীন মহারাজা। মহলের আনাচ-কানাচে পাওয়া যাবে ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের ছোঁয়া।  ৪ হাজার কোটির এখ জয় ভিলা মহল ঘিরে রয়েছে নানান জানা-অজানা কাহিনী।

ডাইনিং টেবিলে এই সেই রূপোর ট্রেন

সিন্ধিয়া পরিবার একটা সময়ের পর থেকে দেশের রাজনীতিকে বড় নাম হয়ে উঠেছিল। রাজত্ব, রাজপাট বজায় রেখেই দেশের রাজনীতির সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন মাধব রাও সিন্ধিয়া, যিনি  জিয়াজিরাও সিন্ধিয়ার ছেলে। মাধব রাও সিন্ধিয়ার পর রাজ পরিবার তথা সিন্ধিয়া পরিবারের রাজনীতির ব্যাটন এখন মাধব রাও সিন্ধিয়ার ছেলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার হাতে।

জয় ভিলা তৈরি করার পিছনে অবশ্য অন্য একটি কারণের কথা জানা যায়। ওয়েলসের রাজা প্রিন্স জর্জ ও রানি প্রিন্সেস মেরি ১৮৭৬-এ এসেছিলেন ভারত ভ্রমণে। আর তাঁদেরই আহ্বানে এই প্যালেস তৈরি করেছিল জোয়ালিয়র রাজা। আজ যেটা সিন্ধিয়া পরিবারের বাসস্থান। যে মহলের একটা অংশ সোনায় মোরা। জয় ভিলা প্যালেস হলে রয়েছে ৫৬০ কেজি সোনার রূপসজ্জা। এখানেই রাজা সব ধরণের আলোচনা সারতেন।

ড্রইংরুমের বিশালাকার জোড়া ঝাড়বাতি

এই মহল ডিজাইন করেছিলেন ব্রিটিশ লেফটেন্ট কর্নেল স্যার মাইকে‌ল ফিলোস। এই মহলের ভিত্তিপ্রস্থ স্থাপন হয় ১৮৭৪-এ। সেই সময় এই মহল বানাতে খরচ হয়েছিল ১ কোটি টাকা। আর আজ তাঁর মূল্য ৪ হাজার কোটি। পুরো মহলে রয়েছে ৪০০ ঘর।  তার মধ্যে ৩৫ ঘর ব্যবহার করা হয়েছে মিউজিয়ামের কাজে। এই মিউজিয়াম তৈরি করেন রাজমাতা বিজয়রাজে সিন্ধিয়া। রাজ পরিবারের নানা ঐতিহ্য দিয়ে সাজানো এই মিউজিয়াম।

এখানে রয়েছে ঝাঁসির রানির ব্যবহার করা ঢাল এবং ঔরঙ্গজেব, শাহ জাহান রাজত্বে তরোয়াল। রয়েছে লাইব্রেরি, আর্ট গ্যালারি। যেখানে নবাগত আর্টিস্টরা তাঁদের আঁকা ছবি রাখতে পারেন দর্শকদের জন্য। রাজবাড়িতে রূপোর তৈরি একটি ট্রেন রয়েছে এখনও যা ডাইনিং টেবলে চলে। এত বড় ডাইনিং টেবল যে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জিনিস পৌঁছতে ট্রেনের প্রয়োজন হয়। আসলে সেই ট্রেনে থাকে অতিথিদের জন্য ব্র্যান্ডি, সিগারেট মতো বিভিন্ন জিনিসের পসরা।

মাধব রাও সিন্ধিয়ার ঘর

প্যালেসের ড্রইংরুমে রয়েছে বিশালাকার দুটো ঝাড়বাতি। যার উচ্চতা ১২.৫ মিটার এবং ওজন ৩৫০০ কেজি। যার মধ্যে লাগান‌ো রয়েছে ২৫০টি বাল্ব। এই বিপুল ভারী ঝাড়বাতিটি দিনের পর দিন ঝুলছে একতলার ঘরে। শোনা যায় যখন এই মহল  তৈরি হচ্ছিল তখন ছাদের ক্ষমতা মাপতে সেখান তোলা হয়েছিল আটটি হাতিকে।  তার পরই নিশ্চিত হয়েছিলেন রাজা। তিনতলা মহলকে তিন রূপে সাজানো হয়েছে। মহলের ভিতরে রয়েছে বিশাল মাচঘর। বাথরুম, বিছানা, স্নানের জন্য ব্যবহার করার জিনিস, সব রূপোর তৈরি। মাধাব রাও সিন্ধিয়ার রূমকে দেখার জন্য রাখা হয়েছে আলাদা করে। সে ঘর কেউ ব্যবহার করেন না। আজও তিনি বাস করেন সবার মনে, এক জীবন্ত ইতিহাসের মধ্যে। যা বাঁচিয়ে রেখেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)