কেমন আছে আমেরিকা, যেখানে করোনাভাইরাসে এখনও পর্যন্ত ২,৫০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। খুব কাছ থেকে আমেরিকাকে দেখার গল্প, আমেরিকার আসল চেহারা কেমন, লিখলেন ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
আমেরিকায় যাঁরা আসেননি, থাকেনি, এবং থাকলেও দীর্ঘদিন কাটাননি, তাঁরা ঠিক বুঝতে পারবেন না আমেরিকার আসল চেহারাটা কী। আমেরিকা সম্পর্কে আমাদের দেশের মিডিয়া এবং আমেরিকার মিডিয়া একটা স্বপ্নরাজ্যের ছবি মানুষের কাছে তুলে ধরেছে। তারা চায় না মানুষ এই দেশের বাস্তব চেহারাটা জানুক। কারণ, এই দেশটাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে তুলে ধরলে এ দেশের সিস্টেমকেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সিস্টেম হিসেবে তুলে ধরতে এবং চাপিয়ে দিতে খুব সুবিধে হবে।
বেশির ভাগ মানুষের জ্ঞান মিডিয়া প্রচারের দ্বারাই চালিত হ ও সীমাবদ্ধ থাকে। কর্পোরেট মিডিয়াই ঠিক করে দেয়, আজকে এই মুহূর্তে কোনটা ইস্যু, আর কোনটা নয়। কী নিয়ে আমাদের আলোচনা করা উচিত সারাদিন। তারাই বলে দেয় মনস্যান্টো কৃষক-আত্মহত্যা আমিরশাহীতে আইপিএল-এ মুম্বইয়ের জয়ই আসল খবর। তারাই বলে দেয়, মানুষের দারিদ্র্, রোগ শোক, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা বা বেকারত্বের জ্বালা বা নারীধর্ষণ আসল খবর নয়, আসল খবর হল রামমন্দির নির্মাণ, নরেন্দ্র মোদীর স্বামী বিবেকানন্দের নতুন স্ট্যাচু উদ্বোধন। তারা বলে দেয়, বারান্দায় বা ছাতে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে থালা বাজালে আত্মশক্তির উদ্বোধন হবে এবং করোনাভাইরাস মহাসঙ্কট দূর হবে।
আমেরিকাতেও ঠিক সেই একই ভাবে মানুষের মগজধোলাই করে রেখেছে এই দেশের কর্পোরেট মিডিয়া। এই প্রথম বোধহয় মানুষ একটু একটু বুঝতে পারছে আমেরিকার আসল চেহারাটা কেমন।
দু’লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মানুষ শেষ হয়ে গেল গত সাত আট মাসে। কালো মানুষদের শুধুমাত্র কালো হওয়ার অপরাধে রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ নির্বিচারে হত্যা করছে। সারা পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ কয়েদী আজ আমেরিকার জেলে বন্দী। আমেরিকার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ কখনও কলেজে পড়েননি। আমেরিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চার বছর ধরে ট্রাম্প নামক এক দুশ্চরিত্র লোককে প্রেসিডেন্ট করে রেখেছে এবং এখন সে ২০২০’র নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও গদি ছাড়তে অস্বীকার করছে। তার হিংস্র, অশিক্ষিত, বন্দুকধারী বর্ণবিদ্বেষী, ইমিগ্রেন্টবিদ্বেষী মিলিশিয়া রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে।
আমরা এই আমেরিকায় থাকি। আজকাল মনে হয়, আমেরিকার স্বপ্ন ঘোর দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। যদিও মিলিয়নেয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আর নব্বই শতাংশ ভারতীয় কিংবা বাঙালির মতো আমরা কখনওই এ দেশে আসিনি। কিন্তু সৎভাবে, মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার মানবিক স্বপ্ন ছিলই। যোগ্যতার, পরিশ্রমের সম্মান পাওয়ার স্বপ্ন। আজ এখানে এমন অবস্থা, বেঁচে থাকাই ক্রমে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। করোনাভাইরাসে মৃত্যু যদি নাও হয়, হিংস্র বর্ণবিদ্বেষীদের অস্ত্রের আঘাতে, কিংবা অশিক্ষিত গুন্ডাদের আক্রমণে মৃত্যু হতে পারে।
এই দেশে পঁয়ত্রিশ বছর কেটে গেল। শিকড় মাটির অনেক ভেতরে প্রবেশ করেছে আমাদের দুর্বল, ক্ষণস্থায়ী চারাগাছের। এখন সে বৃক্ষ। উপড়ে ফেলে আবার অন্য দেশে নতুন করে সে গাছকে বাঁচিয়ে রাখা এখন অসম্ভব।
(বিদেশের আরও খবরের জন্য এখানে ক্লিক করুন)
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)