কলকাতার ট্যাক্সিচালক জালালউদ্দিন এ বার কৌন বনেগা ক্রোড়পতিতে, সামনে অমিতাভ, পাশে আমির

কলকাতার ট্যাক্সিচালক জালালউদ্দিন গাজিঅমিতাভ বচ্চন এবং আমির কানের সঙ্গে জালালউদ্দিন গাজি। ছবি: অমিতাভ বচ্চনের টুইটার থেকে।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কলকাতার ট্যাক্সিচালক জালালউদ্দিন গাজি, তাঁকে আগামী শুক্রবার ২ নভেম্বর টিভির পর্দায় দেখা যাবে কৌন বনেগা ক্রোড়পতি-র কর্মবীর অনুষ্ঠানে। তাঁর সামনের আসনে বসে স্বয়ং বিগ বি। জালালউদ্দিনের সঙ্গে গোটা দুনিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে জালালুদ্দিনকে করেছেন একের পর এক প্রশ্ন। আর সেই সব প্রশ্নের উত্তর জালালউদ্দিন গাজির পাশে বসে দিয়েছেন আমির খান

জালালউদ্দিন গাজি কিন্তু অন্য ট্যাক্সিচালকদের থেকে অনেকটাই আলাদা। আর সে কারণেই কৌন বনেগা ক্রোড়পতি থেকে ডাক এসেছে। কিন্তু, সেই আমন্ত্রণে প্রথমে না করে দিয়েছিলেন জালালউদ্দিন। কারণ তিনি তো লেখাপড়াটাই শেখেননি তেমন করে। তৃতীয় শ্রেণি অবধি কোনও রকমে… তিনি কী করে কৌন বনেগা ক্রোড়পতির হটসিটে বসে অমিতাভ বচ্চনের একের পর এক বল সামলাবেন? উপায় বাতলে দিয়েছিলেন উদ্যেক্তারা। জালালউদ্দিনের হয়ে অমিতাভের প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যাট ধরবেন আমির খান। তিনি কৌন বনেগা ক্রোড়পতি-র ওই এপিসোডের অতিথি।

কিন্তু এই শহরে এত ট্যাক্সিচালক থাকতে হঠাৎ জালালউদ্দিন কেন? কী তাঁর বিশেষত্ব?

ছোট্ট শিশুকে সঙ্গে নিয়েই থানায় ডিউটি করেন মা

জালালউদ্দিন এক গরিব পরিবারের ছেলে। ছোটবেলায় তাঁকে স্কুলে পাঠানোর মতো সামর্থ ছিল না তাঁর পরিবারের। তাই তৃতীয় শ্রেণির পর আর পড়াশোনাই করতে পারেননি তিনি। অভাব তাঁকে স্কুলছুট করেছিল। ছোটবেলায় ঠিকানা ছিল ফুটপাথ। প্রথমে রিকশা, পরে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবনযাপন করার চেষ্টা করেছেন। আর সেই রোজগারের একটা বড় অংশ খরচ করেছেন নিজের স্বপ্নপূরণে।

কী সেই স্বপ্ন? দারিদ্রতার কারণে কোনও শিশু যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। আর সে কারণেই নিজের রোজগারের টাকায় গড়ে তুলেছেন দু’টি স্কুল এবং একটি অনাথ আশ্রম! নিজের রোজগারের পাশাপাশি তাঁর ট্যাক্সিতে ওঠা যাত্রীদের কাছেও হাত পেতেছেন। এ ভাবে অর্থ জোগাড় করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের উত্তর ঠাকুরচক এবং পূর্ব ঠাকুরচক গ্রামে ‘ইসমাইল ইসরাফিল ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’, ‘সুন্দরবন শিক্ষায়তন’ এবং ‘সুন্দরবন অরফানেজ মিশন’ গড়ে তুলেছেন জালালউদ্দিন গাজি। বাইশ জন শিশু নিয়ে শুরু করেছিলেন। আজ ওই স্কুল দু’টিতে প্রায় সাড়ে চারশো শিশু বিনা খরচে পড়াশোনা করছে। তাদের বই, খাতা, পেন, খাওয়াদাওয়া— সবটাই জালালউদ্দিনের জোগাড় করা পয়সায়।

গত ২৪ অক্টোবর স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার ট্যাক্সিচালক জালালউদ্দিন গাজি মুম্বইয়ের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। পরের দিনই শুটিং ছিল। ওই অনুষ্ঠান থেকে জেতা পুরস্কারের অর্থ তিনি স্কুলের কাজেই দেবেন বলে জানিয়েছেন জালালউদ্দিন গাজি।