জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ওরা যুদ্ধ করে। ওরা দেশকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দেয়। আবার ওরা ফুটবলও খেলে। ইউক্রেনের পরিস্থিতি এখন অনেকটা এরকমই। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যেও লড়াইটা ছাড়েনি ফুটবল ক্লাবগুলো। ইউক্রেনের বিখ্যাত ক্লাব শাখতার ডনেস্ক। ২০০৯ –এ উয়েফা ক্লাব প্রতিযোগিতায় জিতে দেশের সেরা ক্লাবের মর্যাদা পেয়েছিল। এবার দেশের সেনাদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে শাখতার। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। তার পর থেকে চলছে যুদ্ধ। যার ফলে সমস্যায় ইউক্রেন। অনেক জায়গায় খাবার নেই, বাসস্থান নেই, টাকা নেই। শুধু বেঁচে থাকার লড়াই রয়েছে।
সেই সময় থেকেই ইউক্রেন সেনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে শাখতার ডনেস্ক। ১০০,০০০ ইউরো খরচ করে পাঁচ জন গুরুতর আহত সেনা জওয়ানকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে। কারও চিকিৎসা হয়েছে ইজরায়েলের হাসপাতালে তো কাউকে পাঠানো হয়েছে আমেরিকা ও স্পেনে। শাখতার সিইও সার্জি পালকিন এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না কী ধরনের আঘাত রয়েছে তাঁদের। তাঁদের মধ্যে দু’জন পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে গিয়েছেন। বাকিরা রকেটের আঘাতে বিপর্যস্ত। তাঁদের দেখার পর আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল।’’
যাঁরা দেশের জন্য লড়ে নিজেদের জীবনকে এই পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখতে চায় না শাখতার কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা সুযোগ দিতে চাই। এই হাসপাতালগুলোতে খুব ভাল ব্যবস্থা। তবে তাঁদের পরিবারের পক্ষে এই খরচ বহন করা সম্ভব নয়। সরকারেরও সেই ক্ষমতা নেই তাঁদের সহায্য করার মতো।’’
শুধু কী আহত সৈনিক? দেশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অনাথ শিশু। কেউ কেউ যুদ্ধের ভয়বহতার প্রাণ হারিয়েছে। কেউ হারিয়ে ফেলেছে গোটা পরিবার। কাউকে কাউকে জোড় করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পালকিন বলেন, ‘‘আমরা ৩১ জন শিশুর খেয়াল রাখছি যারা তাদের বাবা-মাকে যুদ্ধের জন্য হারিয়েছে। ওদের জন্য ১৭টি পরিবার খুঁজে দিয়েছি। আমরা ওদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি ওদের আইপ্যাড দিয়েছি যাতে স্বাভাবিক জীবনে ওরা ফিরতে পারে।’’
এই শিশুরা চোখের সামনে তাদের বাবা-মার প্রাণ যেতে দেখেছে। দেখেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা। এখনও ভয়ঙ্করভাবে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে সকলে। শাখতারের আন্তর্জাতিক ডিফেন্ডার ইভান পেট্রিয়াক জানেন পরিবারকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা। তাঁর শ্বশুর গতবছর মে মাসে যুদ্ধের মধ্যে প্রাণ হারান। পেট্রিয়াক বলছিলেন, ‘‘তাঁর সঙ্গে সে সময় যিনি ছিলেন তিনি দেখেছিলেন তাঁকে মৃ্ত্যুর কোলে ঢলে পড়তে। আমাদের পরিবারের জন্য খুব কঠিন সময় ছিল। আমরা তাঁর দেহ খুঁজে পাইনি, তাঁর শেষকৃত্য করতে পারিনি। আমরা বুঝতেই পারছিলাম না আমাদের কী করা উচিত।’’
শাখতারকে যুদ্ধের জন্য স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। ২০১২তে তারা শেষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ আয়োজন করেছিল। তার পরই ক্রিমিয়ার দখল নেয় রাশিয়া। সেই সময় তারা ক্রিমিয়া ছেড়ে কিভে চলে যায়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার সব থেকে আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল কিভ। সেই সময় তারা কিভ ছেড়ে লেভিভে চলে যায়।
পালকিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পূর্বপ্রান্ত থেকে দু’হাজারের উপর উদ্বাস্তুকে তারা আশ্রয় দিয়েছিল। তাঁদের খাবার, চিকিৎসা, মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি এর পর তাঁরা জীবনে কী করতে চায় সেদিকেও খেয়াল রেখেছিল ক্লাব। অনেকের বাড়ি চলে গিয়েছিল, সঙ্গে পাসপোর্ট, ব্যক্তিগত নথি সব হারিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্রীড়াক্ষেত্রে রাশিয়ানদের সুযোগ দেওয়ার বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন তিনি। অলিম্পিকে রাশিয়ানদের জন্য দরজা খোলা রাখার প্রস্থাবের সমালোচনা করেছেন তিনি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘২০০-র উপর অ্যাথলিটের মৃত্যু হয়েছে আর সেই পরিস্থিতিতে আইওসি প্রেসিডেন্ট থমাস বাচ বলছেন রাশিয়া ও বেলারুস অলিম্পিকে অংশ নেবে। কী করে এটা সম্ভব? আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য। সার্কাস চলছে।’’
পেট্রিয়াক তাঁদের ক্লাব নিয়ে গর্বের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্রাজিলিয়ান প্লেয়াররা ক্লাব ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পরও ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গ্রুপ পর্বে তিন নম্বরে শেষ করেছে এবং এই মরসুমে ইউরোপিয়ান লিগের শেষ ১৬-তে পৌঁছছে। তিনি জানিয়েছেন, অনেক অ্যাথলেট বন্দুক তুলে নিয়েছে হাতে। পেট্রিয়াক বলেন, ‘‘যাঁরা বন্দুক তুলে নিয়েছেন তাঁদের আমি সমালোচনা করছি না। তবে ভাল হয় যদি আমরা খেলি। তাহলে আরও বেশি টাকা আমরা সেনাবাহিনীকে পাঠাতে পারব। আমরা দেশের পাশে থাকব টাকা দিয়ে। আর বেশি করে দেব। আমরা একটা বড় পরিবার।’’
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে