মেঘ চক্রবর্তী; একদিন হঠাৎ করেই খবরটা বিস্ফোরণের মতো সামনে এল, ‘‘বিয়ে করেছেন দিলীপ ঘোষ’’। অনেকেরই চক্ষু চরকগাছ। কানাঘুঁষো শুরু হল, ‘‘এই বয়সে বিয়ে?’’ তার মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আরও একটি খবর। আজ বৃহস্পতিবার এল একই রকম আর একটি বিস্ফোরক খবর। তবে কিছুদিন আগেই দিলীপ ঘোষের খবরে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে আধা মডার্ন হওয়া সোসাইটি। তাই হয়তো কিছুটা আলোচনা কম। এটা আমি বলছি, সোশ্যাল মিডিয়ার রিঅ্যাকশন। বরং অনেকেই ছবি পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তবে দিলীপ বাবু এই কলকাতা শহরে, নিজের বাড়িতেই ঘটা করে বিয়ে সেরেছিলেন। কিন্তু নব্য বিবাহিত দম্পতি কিন্তু বেছে নিলেন ডেস্টিনেশন ম্যারেজকে। বার্লিনে বিয়ে সারলেন তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেত্রী (Politician) মহুয়া মৈত্র। বিয়ে করলেন প্রাক্তন বিজেডি নেতা পিনাকী মিশ্রকে। যে ছবি সামনে এসেছে তাতে গা ভর্তি গয়নায় সাবেকি সাজেই সেজেছেন বাংলার নেত্রী। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই যে বেজায় খুশি তা ওই স্থির চিত্রেও ধরা পড়েছে দারুণভাবে। ঠিক যেমনটা দিলীপ ও রিঙ্কুর বিয়েতে দু’জনকে দেখে মনে হয়েছিল।
এবার আসি আসল কথায়, দু’জন রাজনীতির দুনিয়ার বিখ্যাত মানুষ সদর্পে নিজেদের জীবনসঙ্গীকে বেছে নিয়েছেন। সমাজ কী বলবে, পাড়া-প্রতিবেশী কী বলবে, পরিবার কী বলবে—এই সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে যাঁর নিজের জগতের মানুষকেই বেছে নিয়েছেন বাকি জীবনটা জীবনসঙ্গীর হাত ধরে কাটানোর জন্য। এতে তো কোনও অন্যায় নেই। তাহলে কী এই সমাজ বড় হচ্ছে? নাকি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টা এতটাও সহজ হবে না?
এটা তো ঠিকই, সেলিব্রিটিরা যত সহজে নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে তত সহজে সাধারণ মানুষ পারে না। কারণটা সেই সমাজ। কিন্তু কেউ খারাপ থাকলে এই সমাজ যে পাশে দাঁড়াবে না সেটা ভেবে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সত্যিই সাধারণ মানুষের কমই আছে। সে বিয়ে হোক বা বিবাহ বিচ্ছেদ বা বেশি বয়েসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সেলিব্রিটিরা যেভাবে পারে সাধারণ মানুষ পারে না। ভাল থাকুক বা খারাপ, নিত্যদিনের চেনা ছকের বাইরে বেড়তে পারে না কেউ। আর যারা পারেন তারা সমাজ, পরিবার, চেনা জগতে কিছুদিনের জন্য ব্রাত্য হয়ে যায়। আর এই ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার ভয়েই ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকে না। পর পর দুটো বিয়ে কিন্তু বাংলার বুকে এই ট্যাবুকে ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মহুয়া মৈত্র ও পিনাকী মিশ্র আগেও বিয়ে করেছিলেন তবে দু’জনেরই আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষের ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টা একটু আলাদা। দিলীপ ঘোষের স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছিন্না হলেও দিলীপ ঘোষ কিন্তু এই প্রথম বিয়ের পিড়িতে বসলেন। তবে সে যাইহোক না কেন, দুটো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একে অপরকে যখন জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়, সেটাই সব থেকে শুভ সময় বা সেটাই সঠিক সময় বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
তবে হ্যাঁ, নোংড়া মানসিকতা যাবে কোথায়? দিলীপ ঘোষকে নিয়েও একটা গোষ্ঠীর মানুষ নানান রসিকতা, বাজে কথা বলেছিলেন, মহুয়াকেও নিয়েও বলবেন, কিন্তু তাতে তাঁদের বয়েই গিয়েছে। আর এই বয়ে যাওয়াটাই ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ুক মানুষের মধ্যে। নিজের জন্য বাঁচা, ভালো থাকার জন্য বাঁচা, ভালবাসার জন্য এগিয়ে যাওয়া। সবাইকে ভালো রেখেও নিজেকে ভালো রাখা যায়। কারও ক্ষতি না করে নিজের ভালো থাকাটা যে বড্ড জরুরী। তবেই ভালো থাকবে সমাজ। আর কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে বলে দিন, ‘‘নিজের চরকায় তেল দিন’’।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google