যদি আপনি যে কোনও প্রতিষ্ঠানের যে কোনও পদে থাকা একজন বস হন, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য নয়, কারণ আপনার এই সত্যিটি পছন্দ হবে না। আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যা কোনও বসের ভালো লাগার কথা নয়, তবে কোনও সংস্থা ও তার কর্মীদের জন্য খুবই ভালো ফল নিয়ে আসবে। আমরা কথা বলছি Power Nap নিয়ে।
ধরুন এখন দুপুর বিকেল তিনটে, আপনি সবেমাত্র দুপুরের খাবার শেষ করেছেন এবং বিকেলে আবার কাজ শুরু করার জন্য আপনার ডেস্কে ফিরে গেছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখবেন আপনার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আপনার চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে, এবং ধীরে ধীরে একই গতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে আরও কঠিন হয়ে উঠছে। একমাত্র জিনিস যা আপনাকে বাঁচাতে পারে তা হল একটি ছোট্ট ঘুম, একটি পাওয়ার ন্যাপ। কিন্তু আফশোস, আপনার অফিসে এর জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই, কারণ কেবল অলস লোকেরাই এর প্রয়োজন অনুভব করে বলে একটা ধারণা তো রয়েছেই। কিন্তু এটা কি সত্য?
বিজ্ঞান কিন্তু সেই অলসতার পক্ষেই বাজি ধরছে। পাওয়ার ন্যাপ, হ্যাঁ, সেই ছোট, মিষ্টি দুপুরের স্নুজ, কেবল ছোট বাচ্চাদের বা আপনার বাড়ির বয়স্কদের জন্য নয়। এগুলি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে, গবেষণা এমনটাই বলছে।
পাওয়ার ন্যাপ হল ১০-৩০ মিনিটের একটি দ্রুত ঘুমের সময় যা আপনাকে গভীর ঘুমে টেনে না নিয়ে আপনার মস্তিষ্ককে পুনরায় চালু করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘পাওয়ার ন্যাপ মানসিক কর্মক্ষমতা, শেখার ক্ষমতা, মোটর দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের উপর পরিমাপযোগ্য প্রভাব ফেলে। মূলত, এটি স্ব-যত্ন, বিজ্ঞান-সমর্থিত।’’
দুপুরের প্রথম দিকে, আমরা ক্লান্তি অনুভব করি এবং গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই ডুব দেওয়ার সময় একটি ছোট ঘুম কেবল সতর্কতা বাড়ায় না, এটি জ্ঞানীয় কার্যকারিতাও তীক্ষ্ণ করে। একটি পাওয়ার ন্যাপ ঘুমের ভারী পর্যায়গুলি এড়িয়ে যায়। এর অর্থ হল আপনি আরও দ্রুত ঘুম থেকে উঠবেন এবংঘুমিয়ে পড়বেন না। এর উপর কীভাবে মানসিক চাপ নির্ভর করে সেটাও একটা বিষয়।
যারা প্রতিদিনের কাজের অংশ, তাদের জন্য কাজের চাপ বাস্তব। কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলি প্রতিদিন বেশ কঠিন হয়ে ওঠে এবং সতর্কতা ফলপ্রসূ হয়। এখানেই একটি পাওয়ার ন্যাপ কাজে আসে। এই পাওয়ার ন্যাপ স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে। ছোট ঘুম কর্টিসলের মাত্রা কমাতে পারে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রেস হরমোন, যা শরীরকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় অবস্থায় যেতে সাহায্য করে।এরল পাশাপাশি, স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, কাজের চাহিদা পরিচালনা করা সহজ করে তোলে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। হতাশা এবং বিরক্তির মতো নেতিবাচক অনুভূতি কমায়, মানসিক সুস্থতার পরিমাণ বাড়ায়। দ্রুত ঘুম ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে, যা সারা দিন ধরে টেকসই উৎপাদনশীলতা এবং একাগ্রতা বজায় রাখে।
মূলত, কর্মীদের এই পাওয়ার ন্যাপ তাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে। কারণ আপনার বিরক্তি, ক্লান্তি, মানসিকভাবে অসুস্থতা এই সব কমে যাবে। আর আপনি কাজে মন দিতে পারবেন, আপনার কাজকে উপভোগ করতে পারবেন। আর তাহলেই চাকরি ছাড়ার প্রয়োজন হবে না।
অফিসের মধ্যে ঠিক কখন ঘুমোলে সেটা যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগবে, সেটা জানাও খুব জরুরী। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে ঘুমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্]রা। যখন আপনার শক্তি স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়, কারণ আপনি হয়তো সকাল ১০টা থেকে কাজ শুরু করেছেন। তার আগে বাড়ি থেকে একটা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে জ্যাম, জট পেরিয়ে অফিস পৌঁছেছেন। এবং এতটা সময় কাজ করেছেন। মাঝে লাঞ্চও সেরেছেন। ঠিক এই সময়টা ক্লান্তি জাঁকিয়ে বসে।
দ্রুত শরীরকে সতেজকে করে তোলার জন্য ১০-২০ মিনিট খুব বেশি হলে ২০-৩০ মিনিট পাওয়ার ন্যাপ যথেষ্ট। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি যে পরিবেশে ঘুমাচ্ছেন তা ঠান্ডা, অন্ধকার এবং ন্যূনতম শব্দ সহ বিশ্রামের জন্য আদর্শ জায়গা। এবং যদি সম্ভব হয়, তাহলে চোখের মাস্ক ব্যবহার করুন। কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য এটি জরুরী। কিন্তু যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে বা যারা অনিদ্রায় ভোগে তাদের জন্য এই পাওয়ার ন্যাপই গুরুত্বপূর্ণ।
এবার বক্তব্য এই পাওয়ার ন্যাপ এই ভারতবর্ষে কতটা সম্ভব, বা আদৌ সম্ভব কি না? বিদেশে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন সংস্থা এই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কিন্তু ভারত ‘লেবার আইন’এরই ধার ধারে না তো সেখানে পাওয়ার ন্যাপ একটা অলীক স্বপ্নই বটে।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google