জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ঘরের মাঠে জোড়া গোলে ওডিশা এফসি-কে হারিয়ে চলতি হিরো আইএসএলের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল এটিকে মোহনবাগান, যারা গতবারেও সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। গতবার শেষ চারের লড়াইয়ে যাদের কাছে হেরে ছিটকে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী, সেই হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধেই ফের সেমিফাইনালে নামতে হবে তাদের। এই নিয়ে টানা তিনবার শেষ চারে উঠল কলকাতার দল।
শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রীতিমতো দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২-০-য় জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। প্রথমার্ধে হুগো বুমৌস ও দ্বিতীয়ার্ধে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের গোলে এ দিন ম্যাচ জিতে নেয় তারা। যদিও অসংখ্য সুযোগ পেয়েছিল কলকাতার দল। সেগুলোর অর্ধেক কাজে লাগাতে পারলেও আরও বড় ব্যবধানে জিতত তারা। সারা ম্যাচে ছ’টি শট গোলে রাখেন পেট্রাটসরা। সেখানে ওডিশা একটির বেশি গোলমুখী শট নিতে পারেনি। মোট ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেন তাঁরা। দলের দুই উইঙ্গার মনবীর সিং ও লিস্টন কোলাসোই তিনটি করে সুযোগ তৈরি করে নেন। কিন্তু একটি থেকেও গোল পাননি।
আক্রমণের মতো এ দিন রক্ষণেও এ দিন যথেষ্ট তৎপরতা দেখায় এটিকে মোহনবাগান। প্রতিপক্ষের ধারালো ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিওকে বোতলবন্দী করে রাখে তারা। নন্দকুমার শেখর, ভিক্টর রড্রিগেজরাও বহুবার গোলের চেষ্টা করলেও বারবার তাঁরা আটকে যান প্রীতম কোটাল, স্লাভকো দামিয়ানোভিচ জুটির তোলা পাঁচিলে। আগামী ৯ ও ১৩ মার্চ গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে এই ভারসাম্য বজায় থাকলে এটিকে মোহনবাগানকে রোখা যে বেশ কঠিন হবে, এ দিন যুবভারতীর গ্যালারিতে বসে তা ভাল ভাবেই বুঝে নিলেন হায়দরাবাদের কোচ মানোলো মার্কেজ।
কার্ল ম্যাকহিউ প্রথম এগারোয় ফিরে আসায় এটিকে মোহনবাগান এ দিন কিছুটা শক্তিশালী হলেও গ্ল্যান মার্টিন্স চোটের জন্য খেলতে না পারায় সেই সুবিধাটা পুরোপুরি নিতে পারেনি তারা। গ্ল্যানের জায়গায় এ দিন পুইতিয়া শুরু করেন। অন্য দিকে, যথারীতি নন্দকুমার শেখর ও দিয়েগো মরিসিওকে সামনে রেখে ৪-৪-২-এ দল সাজায় ওডিশা। তবে ম্যাচ শুরুর পর মরিসিওর সঙ্গে ভিক্টর রড্রিগেজকেই বেশিরভাগ আক্রমণে উঠতে দেখা যায়।
ম্যাচ শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই ধাক্কা খায় সবুজ-মেরুন বাহিনী, যখন চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় আশিক কুরুনিয়ানকে। আক্রমণের সময় রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজ তাঁর গোড়ালিতে আঘাত করায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আশিক এবং তার পরে আর মাঠে থাকতে পারেননি। তাঁর জায়গায় রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামেন লিস্টন কোলাসো। এর মিনিট দশেকের মধ্যেই পরষ্পরের সঙ্ঘর্ষে মাথায় চোট পান মরিসিও ও স্লাভকো দামিয়ানোভিচ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত, কারোর চোটই গুরুতর ছিল না।
প্রথম ২৫ মিনিটে দু’পক্ষই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও কোনও দলই কোনও ইতিবাচক সুযোগ তৈরি করতে পারেনি রক্ষণের তৎপরতায়। ১৬ মিনিটের মাথায় শুধু দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করেন ম্যাকহিউ। কিন্তু তাতে হাত ছুঁইয়ে বের করে দেন ওডিশার গোলকিপার অমরিন্দর সিং।
ম্যাচের বয়স বাড়ার সঙ্গে ক্রমশ আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে থাকে এটিকে মোহনবাগান এবং ৩৬ মিনিটের মাথায় তারা প্রথম গোলটি পেয়ে যায় হুগো বুমৌসের পা থেকে। দুর্দান্ত ও পরিকল্পিত গোলটির সূচনা হয় বাঁদিক থেকে পেট্রাটসের কর্নার কিকে। তাঁর পাঠানো বল প্রথম পোস্টের সামনে থেকে অসাধারণ ভাবে ব্যাকফ্লিক করেন মনবীর সিং এবং সেই বলেই ছ’গজের বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে গোলে শট নেন ফরাসি তারকা (১-০)। চলতি লিগে এটি বুমৌসের পাঁচ নম্বর গোল।
গোল খাওয়ার পর ওডিশা এফসি তৎপর হয়ে উঠলেও সবুজ-মেরুন রক্ষণে বারবার আটকে যায়। প্রথমার্ধে তিনটি শট গোলে রাখে কলকাতার দল। কিন্তু ওডিশা একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি। চারটি গোলের সুযাগ তৈরি করে নেয় তারা। ওডিশা সাত-সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও একটিতেও সফল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই পরপর অনেকগুলি ঘটনা ঘটে যায়। শুরুতেই বাঁ উইং থেকে নন্দকুমারের দেওয়া ক্রসে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান গোলের সামনে থাকা মরিসিও। কিন্তু তিনি গোলে শট নেওয়ার আগেই বিশাল কয়েথ বল নিজের দখলে নিয়ে নেন। এর মিনিট দুয়েকের মধ্যে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে উঠে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন কোলাসো এবং গোলে শটও নেন। কিন্তু তা লাফিয়ে উঠে হাত ছুঁইয়ে বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন অমরিন্দর। ৫১ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে ওঠা আশিস রাই বক্সের মধ্য ক্রস দেন, যা পড়ে বক্সের বাঁদিকে কোলাসোর পায়ে। কিন্তু তিনি গোলে শট নেওয়ার আগেই অমরিন্দর তা দখলে নিয়ে নেন।
সমতা আনতে মরিয়া ওডিশা এফসি ৫৬ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে তিন পরিবর্ত খেলোয়াড় নামায়। কিন্তু তাঁরা থিতু হওয়ার আগেই ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি করে ফেলে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ৫৮ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বুমৌসকে পাস বাড়ান ম্যাচের নায়ক ম্যাকহিউ। বুমৌস তা ফের দেন ম্যাকহিউকে। ম্যাকহিউ বক্সের বাইরে থেকে বল দেন বক্সের মধ্যে থাকা পেট্রাটসকে এবং নিখুঁত কোণাকুনি শটে তা জালে জড়িয়ে দেন অস্ট্রেলীয় তারকা, যিনি এ দিন লিগের দশম গোলটি পেলেন (২-০)।
কিন্তু দ্বিতীয় গোলের দু’মিনিটের মধ্যে যে ঘটনাটি ঘটে, তার জন্য একেবারেই তৈরি ছিল না যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে থাকা কেউই। মরিসিওর সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে মাথায় চোট পেয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন সবুজ-মেরুন গোলকিপার বিশাল ও কয়েক সেকেন্ডের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়েন। মাঠের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন রেফারি। কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিশাল উঠে দাঁড়ালেও দলের ডাক্তারদের পরামর্শে তিনি আর গোলে পাহাড়া দিতে পারেননি।
৬৬ মিনিটের মাথায় বিশালের পরিবর্তে নামেন অর্শ আনোয়ার শেখ। পরে অবশ্য জানা যায় তাঁর মাথায় কোনও গুরুতর চোট হয়নি। পরিবর্ত হিসেবে নেমে এ দিন বেশ ভাল পারফরম্যান্স দেখান অর্শ। ৭৩ মিনিটের মাথায় সল ক্রেসপোর গোলমুখী শট আটকান তিনি। যেটুকু গোলে পাহাড়া দেন তিনি, তাতে আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার এগারো মিনিট আগে দুই দলই একাধিক পরিবর্তন আনে। বুমৌসকে তুলে নিয়ে ফেদরিকো গায়েগোকে নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো। লালরিয়ানা হ্নামতে নামেন পুইতিয়ার জায়গায়। ওডিশার কার্লোস দেলগাদোর জায়গায় নামেন পেদ্রো মার্টিন্স ও নন্দকুমার শেখরও মাঠ ছাড়েন নরেন্দর গেহলটকে সুযোগ দিতে।
বিশাল কয়েথের ঘটনার জন্য রেফারি এ দিন আট মিনিট বাড়তি সময় দেন ই দলকে। সেই সময় কাজে লাগানোর জন্য অবশ্য মরিয়া চেষ্টা দেখা যায়নি ওডিশার খেলায়। তবে দ্বিতীয় মিনিটে কোলাসো বক্সের বাইরে থেকে যে ভাবে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন গায়েগোকে, তা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু গায়েগোর গোলমুখী দূর্বল শট ক্লিয়ার করে দেন ওডিশার পরিবর্ত ডিফেন্ডার ধনচন্দ্র মিতেই। শেষ মিনিটে কোলাসো গোলের উদ্দেশ্যে লম্বা শট নিলেও তা গোলের বাইরে চলে যায়।
এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল) (অর্শ আনোয়ার শেখ), আশিস রাই, প্রীতম কোটাল (অধি), স্লাভকো দামিয়ানোভিচ, শুভাশিস বোস, কার্ল ম্যাকহিউ, পুইতিয়া (লালরিয়ানা হ্নামতে), হুগো বুমৌস (ফেদরিকো গায়েগো), আশিক কুরুনিয়ান (লিস্টন কোলাসো), মনবীর সিং, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google