সুচরিতা সেন চৌধুরী: কোভিড কাটিয়ে এই প্রথম নিশ্চিন্তে পুজো কাটিয়েছে মানুষ। তাই হয়তো অনেকেই ভেবেছেন পুজোটা নিজের বাড়িতেই কাটাবেন। বেড়ানোটা হবে পুজো শেষে। কিন্তু পুজো শেষে হাতে সময় খুবই কম। দূরে পাহাড়ের কোলে নির্জনে সময় কাটানোর মতো সময় এখন আর হাতে নেই। আসলে সব তো আর এক সঙ্গে পাওয়া যায় না। তাই ছোট্ট করে কিছু একটা ভেবে ফেলতে হবে। আর তার জন্য কলকাতার কাছে সব থেকে ভাল ডেস্টিনেশন হতে পারে আসানবনি (Asanboni Travel)। ২ দিনে দারুণভাবে ঘুরে আসা যায় পাহাড়, জঙ্গল, ড্যামের রাজ্যে।
ঝাড়খণ্ডের এই জায়গাটিতে রয়েছে প্রকৃতির উজার করে দেওয়া সৌন্দর্য। আর এখানকার মূল আকর্ষণ দলমা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। যা তৈরি হয়েছিল ১৯৭৫-এ, উদ্বোধন করেছিলেন সঞ্জয় গান্ধী। এই জঙ্গলে রয়েছে প্রচুর হাতি ও হরিন। হাতি মাঝে মাঝেই লোকালয়ে চলে আসার খবরও শোনা যায়। সেই গল্পে পরে আসছি। সকাল সকাল হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছে গেলাম টাটানগর। ৪ ঘণ্টা মতো সময় লাগে ট্রেনে। সেখান থেকে আসানবনির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। আমি যে সময় গিয়েছিলাম তখন রাস্তা খুব খারাপ ছিল। তবে শুনেছি এখন ভাল হয়ে গিয়েছে।
আসানবনি পৌঁছে গেলাম ১২টার মধ্যে। হোটেল বুক করাই ছিল। হাইওয়ের ওপরেই বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই থাকার জায়গা। সামনে বিশাল লন পেরিয়ে যেতে হয় ঘরে। লন সুন্দর করে সাজানো নানা রকম ফুল গাছ দিয়ে। আর এঅ হোটেলটির সব থেকে আকর্ষণের কেন্দ্রে তার ব্যালকনি। ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই সামনে দেখা যায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা দলমা পাহাড়। শুরুতেই জায়গাটির প্রেমে পড়ে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ওদেরই ডাইনিং হলে পৌঁছে গেলাম। টিপটপ সুন্দর সাজানো ডাইনিং স্পেস। আরও মুগ্ধ করল ওদের রান্না। প্রথম দিন লাঞ্চে ঘরোয়া খাবারই অর্ডার করেছিলাম। ভাত, ডাল, সবজি, চিকেন ইত্যাদি। সুস্বাদু।
সেদিন লাঞ্চ সেরেই বেরিয়ে পড়লাম দলমা ফরেস্ট দেখতে। হোটেল থেকেই গাড়ি পেয়ে গেলাম। ১৫ কিলোমিটারের দূরত্ব। পাহাড়ি আকাবাঁকা পথ ধরে গাড়ি সমতল থেকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখি হতেই সবুজের সমারোহ চোখে পড়ল। একদিকে সবুজ জঙ্গল ক্রমশ ঘন হচ্ছে অন্যদিকে লাল মাটির রাস্তার রুক্ষতা। তবে বর্ষায় এই জঙ্গলের সৌন্দর্য অপরিসীম। এখন বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মাঝে তাই বর্ষার অনুভূতি কিছুটা হলেও পাওয়া যাবে। এই পাহাড়ের গা দিয়েও নেমে আসে মেঘের দল। তাই এখানে যাওয়ার সব থেকে ভাল সময় বর্ষা। গাড়ি আমাদের পৌঁছে দিল পাহাড়ের একদম মাথায়। এখান থেকে হেঁটে ঘুরে ফেলা যায় এদিক ওদিক। তবে মূল জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি নেই। সেখানে ঘুরে বেড়ায় বন্য হাতির দল। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে জঙ্গল।
এই দলমা পাহাড়ের মাথায় গুহার মধ্যে রয়েছে শিব মন্দির। ছোট্ট গুহা। একদিক দিয়ে ঢুকে আর একদিক দিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। তবে সিঁড়ি দিয়ে বেশ খানিকটা উঠতে নামতে হয়। কিন্তু উপর থেকে এক ফ্রেমে ধরা দেয় দলমা পাহাড় আর জঙ্গল। নানা রকমের পাখির ডাকও শোনা যায় এই জঙ্গলে। জঙ্গল, পাহাড়ের প্রেমে কেটে গেল অনেকটা সময়। বিকেল নামছে দেখে ফেরার পথ ধরতেই হল। হোটেলে ঢুকতে সন্ধে হয়ে গেল। এই পাহাড়ে কেউ থাকে না বলে তার গায়ে জোনাকির মতো আলো জ্বলতে দেখা যায় না। কিন্তু চাঁদের আলোয় হোটেলের ব্যালকনি থেকে তা আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে। রাত বাড়তে বৃষ্টি আসে ঝেঁপে। হালকা ঠান্ডার কামরে শিহরণ জাগে। রাতের খাবার ঘরেই আনিয়ে নিই। সাহস করে তন্দুর আইটেম অর্ডার দিয়েছিলাম কিন্তু হোটেল হতাশ করেনি।
পর দিন সকালে যখন ঘুম ভাঙল তখন আকাশ পরিষ্কার। রাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে টের পেয়েছিলাম। তবে সকালে সূর্যি মামা আহ্বান জানালেন নতুন দিনকে। আমরাও ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। এদিনের গন্তব্য চান্ডিল ড্যাম। আসানবনি থেকে ২৬ কিলোমিটারের দূরত্ব। তবে জঙ্গল, পাহাড় দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বিশাল নীল জলরাশির সামনে। সুবর্ণরেখা নদীর উপর তৈরি হয়েছে এই ড্যাম। ব্রিজের উপর দাড়িয়ে জলের উপর হাওয়ার বয়ে যাওয়া দেখতে দেখতেই সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। তবে অ্যাডভেঞ্চার করতে চাইলে রয়েছে স্পিডবোট। জলের উপর গতিতে ছুটে চলেছে নানা রঙের স্পিডবোট।
বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে ফিরে গেলাম হোটেলে। রাতের আসানবনিকে দু’দিন পর দেখলাম। তার এক অপূর্ব রূপ রয়েছে। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাইওয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি। ভেসে আসছে গাড়ির হর্ণের শব্দ। তা ছাড়া একদম নিস্তব্ধ চরাচর। হোটেলের অংশটুকু ছাড়া আর কোথাও কোনও আলো নেই। সেই সময় যতদূর মনে পড়ছে রাস্তায়ও আলো ছিল না। অদ্ভুত এক আলো আধারির খেলা চলত। গাড়ির আলোয় হঠাৎ হঠাৎ করেই পাহাড়টা জেগে উঠত চোখের সামনে। বৃষ্টি এলে সেই পাহাড়টাই কেমন ঝাপসা হয়ে যেত। এই পাহাড়েরও এক অনবদ্য মায়া রয়েছে। যা আজও আকর্ষণ করে।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google