বড়ামাঙ্গওয়া, আমার ভালবাসার বারান্দা, আমার খাদের ধারের রেলিংটা

বড়ামাঙ্গওয়াআমার ভালবাসার বারান্দা

মেঘ বালিকা


বড়ামাঙ্গওয়া আর আমার ভালবাসার বারান্দা। ওই বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় তিস্তার ভেসে যাওয়া। ওই বারান্দা লাগোয়া গাছের ডালে খেলা করে কত নাম না জানা পাখি। না, তারা ক্যমেরায় ধরা দেয় না। শুধু কিচিরমিচির শুনিয়েই আবার দে ছুট। ওই বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় পাহাড়ের হেয়ারপিন বেন্ড কাটিয়ে ছুটে চলা গাড়িদের। আর রাত নামলে ওই বারান্দায় ধরা দেয় উল্টো পাড়ের কালিম্পং পাহাড়ের গায়ের আলোর খেলা। ওই বারান্দা না জানি কত সম্ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একলা।

সকালের চাঁদ

সেই ঝুল বারান্দার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা বছর ছয়েক আগের এক দোলের সকালে। সেই যে প্রেমে পড়া তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তার পর থেকে ঘুরে ফিরেই ওখানে পৌঁছে যাওয়া। এখন তো জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বড়ামাঙ্গওয়া গ্রাম, ওদের জীবন যাত্রা, ওদের বেঁচে থাকা। ওদের স্কুল, ওদের ফুটবলেও যেন আমি নিজেকেই খুঁজে পাই। আর যাকে ঘিরে এই ভাললাগা সেই বড়ামাঙ্গওয়া ফার্ম হাউসের মানুষগুলোর আন্তরিকতাই এই বারান্দার ভাললাগাকে আরও বারিয়ে দিয়েছে। সব সময় হোটেলের বারান্দা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা না দিলেও চলে।

এই পথেই

প্রথম বার মনে আছে ফার্ম হাউসের রাস্তার পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া এক সিঁড়ি দিয়ে মাঝ পথ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে আড্ডা জমিয়েছিলাম আমরা পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে। তার পরের বার যখন ওই সিঁড়ি যাত্রা শেষ করলাম তখন প্রায় জঙ্গলে ঢাকা। তার মধ্যে দিয়েই শেষ পর্যন্ত চলে গিয়ে বড় রাস্তায় পড়লাম। সেখানের ছোট্ট দোকানে কোল্ড ড্রিঙ্ক পর্ব সেরে হেঁটে আবার সেই ফার্ম হাউসে ফেরা। তখনও বড় রাস্তা থেকে ফার্ম হাউসের রাস্তা কাঁচা। বৃষ্টি কাদা রাস্তায় কত হেঁটেছি। এখন সেই রাস্তা পাকা হয়েছে। কখনও সেই রাস্তার দু’পাশে ধানের খেত, কখনও সব্জির বাগান।

সেখানেই সকালের ঘুম ভাঙে মুরগির ডাকে। সঙ্গে দার্জিলিং টি। ফার্ম হাউসের বারান্দায় তত ক্ষণে সূর্যের আলো এসে ঝলমল করছে। চা পর্ব শেষ হতে হতেই তৈরি ব্রেকফাস্টে কখনও লুচি-তরকারি কখনও চাউমিন। কোথা দিয়ে বেলা গড়িয়ে যায় বুঝতে বুঝতেই দুপুরের খাওয়ারের ডাক আসে। সেখানে সব অর্গানিক খাওয়ার। ফার্ম হাউসের ফার্মের সব্জি, দুধ, ডিম, মাংস সব। সঙ্গে দারুণ রান্না। দুপুরে ডিম আর রাতে চিকেন নিশ্চিত তার সঙ্গে কখনও দই তো কখনও পায়েস।

বড়ামাঙ্গওয়ায় সূর্যোদয়

দুপুরের খাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম, তার পর বেরিয়ে পড়া যায় গ্রামের রাস্তায় হেঁটে বেরোনোর জন্য। হাঁটতে হাঁটতে দেখে আসা যায় এখানকার বিরাট কমলালেবুর বাগান। কমলালেবুর সময়ে পুরো বাগান কমলা রঙে ভরে ওঠে। সেখানের ফার্ম থেকে কেনা যায় কমলার নানা রকমের জিনিস। জুস, জ্যাম আরও কত কী।

জানলার ওপারেই মেখের দল

এখান থেকে ঘুরে আসা যায় তাগদা, তিনচুলে। ঘুরে আসা যায় তিস্তা-রঙ্গিতের মিলনস্থল। যেখানে গেলে তিস্তার পাড়ে বসেই অনেকটা সময় কেটে যাবে। সেখানেই বসে দেখে নেওয়া যায় তিস্তার জলে সূর্যাস্তের প্রতিচ্ছবি। যেতে চাইলে ফার্ম হাউসের গাড়িও তৈরি থাকবে। সন্ধে নামলে ফেরা সেই ফার্ম হাউসের বারান্দায়। তবে অন্ধকার হওয়ার আগেই ফিরলে ভাল কারণ রাস্তায় কোনও আলো নেই। ফিরতে ফিরতেই রেডি মোমো, পকোড়া আর গরম গরম কফি।

তখনও কমলা রঙ লাগেনি

ফার্ম হাউসের বাড়ান্দায় বসে কালিম্পংয়ের আলোর খেলা দেখতে দেখতে আড্ডা জমে ওঠে দারুণ। অল্প অল্প ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসতে শুরু করে ঝুল বারান্দায়। শীত কালে সব সময়ই কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার দাপট থাকে। বেশি ক্ষণ বাইরে থাকা যায় না। কিন্তু অন্য সময় এখানেই কেটে যায় অনেকটা সময়। বর্ষায় বারান্দা পেরিয়ে মেঘের দল ঢুকে পড়ে ঘরের ভিতর। কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় ওই বারান্দাকে। দূর হয়ে যায় মনের সব গ্লানি। টান বেড়েই চলে সেই ভালবাসার বারান্দার প্রতি। বাড়তেই থাকে প্রতিদিন।

বেড়ানোর আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন এখানে