Latpanchar-এর জঙ্গলে চাঁদের আলোয় হর্ণবিলের হানা

Latpanchar

Latpanchar-এ লাট খেতে খেতে কখনও জঙ্গল তো কখনও নাম না জানা পাখির হানা। কখনও জোঁকের কারসাজি তো কখনও আবার সিঙ্কোনার জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া। চাঁদের আলোয় লাটপাঞ্চার হোক বা অহলদাঁড়া থেকে একফ্রেমে সিকিম, কালিম্পং। দেখা মিলতে পারে অবলুপ্ত প্রায় হিমালয়ান সালামান্ডারেরও। সব দেখে এসে লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


Latpanchar-এর রাস্তা বেশ খটোমটো। মানে পাথুড়ে রাস্তায় গাড়ির ভিতরে রীতিমতো নাচতে নাচতে যখন লাটপাঞ্চারের হোম স্টে-তে পৌঁছলাম তখন সবার গায়ে ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে গিয়ে এই সব ছোটখাটো ব্যথাকে কোনওভাবেই মাথায় চড়তে দেওয়া যায় না। স্নান সেরেই ক্লান্তি কেটে গেল, তার পর হোম স্টে অসাধারণ ডাল, ভাত, ভাজা, আর এগকারিতে তা পুরোপুরি গায়েব। একটু বিশ্রাম নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম শুধুই হেঁটে বেড়ানোর জন্য। জায়গাটা প্রায় পুরোটাই জঙ্গলে ঘেরা। বড় বড় গাছের আড়াল ছেড়ে সূর্যের আলো রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছয় না।

যত এগিয়ে যাবে রাস্তা ততই জঙ্গল ঘন হবে। কমবে আলো। নাম না জানা কোনও পাখি প্রায় কানের পাশ দিয়ে উড়ে চলে যাবে। যাঁরা পাখি চেনে বা পাখির ছবি তুলতে ভালবাসে তাঁদের দন্য লাটপাঞ্চার এক কথায় স্বর্গ। তবে লড়াইটা অন্য জায়গায়। এখানে ঘন জঙ্গল হওয়ায় জায়গাটা বেশ স্যাঁতস্যাঁতে। আর সে কারণেই সারা বছরই জোঁকের প্রবল আধিক্য। জঙ্গলে ঢুকলে তাঁর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তবে পাখিপ্রেমীরা এর সঙ্গে লড়াই করেই সেখানে পৌঁছে যায়।যাঁদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল এই ট্যুরে।

Latpanchar

লাটপাঞ্চারের পথে

সন্ধে নামতেই ফিরতে হল ঘরে। কারণ ততক্ষণে ঠান্ডা পড়েছে জাঁকিয়ে। ও এখানে বলে রাখা ভাল, আমরা লাটপাঞ্চার পৌঁছেছিলাম লক্ষ্মী পুজোর ঠিক আগের দিন। যে কারণে সন্ধে ভড়ে ছিল চাঁদের আলোয়। সে এক মোহময়ী দৃশ্য। পাহাড় থেকে চাঁদটাকে অদ্ভুত বড় দেখায়, আগেও দেখেছি। এদিন যেন অন্য অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে ঠিকরে পড়ছিল চাঁদের আলো। আর সেই আলো-আঁধারিতে গোটা লাটপাঞ্চারের পরিবেশ বদলে গিয়েছিল। কনে কনে ঠান্ডায়ও ঘরে ঢুকে লেপের তলায় গা এলাতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু ভয় দেখালেন হোম স্টে মালিক। বললেন, ‘‘এলাকা ছেড়ে জঙ্গলে যাবে না। জংলি প্রানীরা বেরিয়ে আসে সেই সময়। অগত্যা ফিরতে হল ঘরে।

রাতের খাবারে ঝাল ঝাল চিকেন কষা খেয়ে ঘুমটাও এল খুব তাড়াতাড়ি। পরদিন ভোর ভোর বেরিয়ে পড়তে হবে আসল জঙ্গল দর্শনে। যা মহানন্দা অভয়ারণ্যেরই অংশ। এই জঙ্গলের সব থেকে উঁচু জায়গা। যার উচ্চতা ৪,২০০ ফিট। এই জঙ্গলে হরিণ যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে লেপার্ডও। মাঝে মাঝে তারা বাইরেও বেরিয়ে গ্রামে চলে আসে। বুঝতে পারি সে কারণেই গত রাতে হোম স্টে মালিক আমাদের ঘরে ঢুকে যেতে বলেছিলেন। তবে আজ জঙ্গলের মধ্যে ঢোকার পালা। তবে মনে মনে জোঁকের আতঙ্কটা তাড়া করছে সবাইকে। তাই পায়ে নুন বেঁধে চলা শুরু। গভীর জঙ্গলে বন্য প্রাণীদের জল খাওয়ার জায়গার পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে আরও গভীরে। সেখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের গাইড পাখি দেখালেন অনেক। জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে তখন উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

অহলদাড়া

লাটপাঞ্চারের জঙ্গল দেখা শেষ করে রওনা দিলাম অন্য এক জঙ্গলের উদ্দেশে। আর সেটা হল এখানকার সিঙ্কোনার জঙ্গল। যা থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন। সিঙ্কোনা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়ানোটাই এক অন্য অভিজ্ঞতা।  সেখান থেকে পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যাওয়া যায় অহলদাঁড়া ভিউ পয়েন্ট। সেখান থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে যেমন দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা তেমনই নিচে  দেখা যায় বহমান তিস্তা, গ্যাংটক, কালিম্পং এমনকি কুয়াশা বা মেঘ না থাকলে ধরা দেয় সিল্করুটও। এখান থেকে সানরাইজের দৃশ্যও অপূর্ব।

এখান থেকে চলে যাওয়া যায় নামথাং লেক। যেখানে পাওয়া যায় লুপ্তপ্রায় হিমালয়ান সালামান্ডার। ভাগ্য খুব ভাল না থাকলে তার দেখা পাওয়া দুষ্কর। বেশিরভাগ সময়ই এই লেক শুকনো থাকে। যখন জল থাকে তখন জলের ভিতর থাকে সালামান্ডার। আর তা শুকিয়ে গেলে লেকের এলাকা ঘিরে তৈরি হওয়া গর্তের মধ্যে ঢুকে থাকে বেশিরভাগ সময়। সালামান্ডারের দেখা না পেলেও পাইন বনে ঘেরা লেক চত্তরেও সময় কাটবে দারুণ। কারণ বিভিন্ন ধরনের পাখির দেখাও পাওয়া যাবে এখানে।

নামথিং লেক

লাটপাঞ্চার বিশেষত সাধারণ ট্যুরিস্টের জন্য নয়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ও পাখিপ্রেমীরাই সাধারণত সেখানে যান। এখানে৩৬ রকমের বন্যপ্রাণী রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ২৪০ প্রজাতির পাখি। আবারও বলতে হচ্ছে ভাগ্য ভাল থাকলে অনেক প্রজাতির পাখিকে কামেরাবন্দি করা যায়। আমাদের ভাগ্য ভাল ছিল বলে দেখা মিলেছিল হর্ণবিলের। তবে ভাল ক্যামেরা না থাকায় তাঁকে ছবিতে ধরে রাখতে পারিনি। তবে মনের ফ্রেমে আজও বাধানো রয়েছে সেই দৃশ্য। এ ছাড়া কালো বুলবুল, স্পটেড ঈগলেরও দেখা মিলেছিল। আমাদের গাইডের চোখকে তারা ফাঁকি দিতে পারেনি। ধরা পড়েছে আমাদের মনের ক্যামেরায়ও।

সিঙ্কোনা বাগান

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)