সুচরিতা সেন চৌধুরী: কলকাতা শহরের হাতের কাছে পাহাড় না থাকলে কী হবে, আছে সমুদ্র। একটার পর একটা জায়গা, বিচ, বিচ লাগোয়া মার্কেট, মোহনা— কী নেই। তার মধ্যেই অন্যতম মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত (Mondarmani)। সমুদ্রের পাড়ে বসে হইহুল্লোর থেকে দূরে শুধুই শান্তি খুঁজতে হলে একমাত্র ঠিকানা এই মন্দারমণি। যেখানে লোকের ভিড়, কোলাহল, হুল্লোর, মাইক বাজিয়ে উদ্দাম উৎসব নেই। যেখানে আছে, বিশাল জায়গা নিয়ে সমুদ্রের বিচ লাগোয়া সব রেসর্ট। সেই রেসর্টের থেকেই টুক করে নেমে পড়া যায় বিচে। যেখানে শুধু রেসর্টে থাকতে আসা মানুষরাই থাকবেন। কখনও দেখবেন আপনি একাই দাঁড়িয়ে রয়েছেন উত্তাল, সমুদ্রের সামনে। ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আপনাকে। হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে সব ক্লান্তি, সব গ্লানি। পিছিয়ে পড়ছে শহুরে ইঁদুর দৌঁড়। ক্ষতি কি, যদি উইকএন্ডে বেরিয়ে পড়া যায় এমনই এক গন্তব্যের কাছে।
আমি অবশ্য উইকএন্ড নয়, উইকের শুরুতেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। প্রতিবারের মতো এবারও স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবের উদ্যোগে মন্দারমণির অসাধারণ আমার ট্রি রেসর্টের ২৪ ঘণ্টা আগামী কয়েক মাসের অক্সিজেন দেবে তো বটেই। উপলক্ষ্যটা অবশ্য ছিল ‘স্পোর্টস মিউজিয়াম’এর উদ্বোধন। যেখানে ভ্রমণের পাশাপাশি নতুন দিগন্ত খুলে গেল ভ্রমনার্থীদের জন্য। একঝাঁক ক্রীড়াবিদ সঙ্গে আরও একদল ক্রীড়া সাংবাদিকের জন্য যেন কাজের দুনিয়ায় থেকেও কাজ নয়। হই হই করে কাজ করা, সমুদ্রে পা ভেজানো, জমিয়ে খাওয়া, আড্ডা।

হোটেলের ঘরের ব্যালকনি থেকে সমুদ্র
সকাল প্রায় সাড়ে আটটায় স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাব থেকে বাস ছাড়ল মন্দারমণির উদ্দেশে। বিশাল এক রয়্যাল ক্রুজারে আমরা প্রায় ৫০ জন ক্রীড়া সাংবাদিক। এক সিনিয়র সাংবাদিক মজা করে বললেন, ‘‘বাসের মধ্যে আমরা মনে হচ্ছে দুটো টাইম জোনে রয়েছি। পিছনে কী কথা হচ্ছে সামনে আসতে অনেকটা সময় লাগছে।’’ মজা হলেও সত্যি, বিশাল ওই বাসের ভিতর এতগুলো মানুষ যে এভাবে সেঁধিয়ে যেতে পারবে তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায়নি। মাঝে কোলাঘাটে টি-ব্রেকের পর আবার যাত্রা চলল। কোলাঘাটে প্রবল বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আটকে থাকতে হল তবে বৃষ্টিতে আটকে থাকতে আমার কোনও আপত্তি নেই। মাটির চায়ের ভাড়ে চুমুক দিতে দিতে হাইওয়েতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ছুটে চলা গাড়ি দেখতে দেখতেই কতটা সময় কেটে গেল। তবে আমার আসপাশে বেশ কয়েকজন বেরসিক বৃষ্টি বিরোধীও আছে। যাদের থেকে আমি এই সময় দূরেই থাকি। শেষ পর্যন্ত যখন মন্দারমণির আমার ট্রি রেসর্টে পৌঁছলাম তখন সময়ের কাটা দুপুরে পা দিয়েছে। বেলা দেড়টা। ক্লাব প্রেসিডেন্টের হুকুম এল, আড়াইটের মধ্যে রেডি হয়ে সবাই যেন লাঞ্চের জন্য চলে যাই। যেমন বলা তেমনই কাজ। অসাধারণ নানারকমের খাবারে সাজানো ছিল আমাদের বাফে। খেয়ে একটু বিশ্রামের অবকাশ পায়নি কেউই। স্পোর্টস মিউজিয়াম উদ্বোধনে ছুটতে হল। সব কাজ যখন শেষ হল ততক্ষণে সন্ধে নামছে মন্দারমণির সমুদ্র সৈকতে।

মন্দারমণিতে সূর্যাস্ত
আমার মতো যারা সমুদ্র স্নানে খুব একটা আকর্ষিত হন না তাদের জন্য সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত ভীষন প্রিয় হয়। যেমনটা আমার। রেসর্ট থেকেই একটা ছোট্ট লোহার সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম বিচে। ততক্ষণে দলের প্রায় অনেকেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে দিনের শেষ সূর্যকে অস্ত যেতে দেখলাম। এদিন সূর্যদয় দেখারও সুযোগ হয়েছিল। শহুরে রাস্তায় সূর্যদয় দেখে যাত্রা শুরু করেছিলাম, শেষ করলাম সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্ত দেখে। সূর্যাস্তের পরেও বেশ কিছুক্ষণ বিচে সময় কাটল। অন্ধকার নামলে আর বিচে নামার অনুমতি নেই তাই ফিরতেই হল। তবে সমুদ্র দেখায় কোনও বাধা নেই। বিচের ধার ধরেই রেলিংয়ের পাশে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় রাত। সারা রাত সমুদ্র দেখা যায় ঘরের বারান্দা থেকেও। ডিনার করে অনেকটা সময় সেভাবেই কাটল সমুদ্রের সঙ্গে। যতক্ষণ এনার্জি সঙ্গ দিল ততক্ষণ সমুদ্রে চোখ রেখেই সময় কাটালাম। একটা সময় ঘুম এল ঠিকই।

মোহনা
পরদিন সকাল হল কাঠফাটা রোদের সঙ্গে। সূর্যদয় দেখার জন্য ঘুম ভাঙেনি বেশিরভাগেরই। তবে সকাল সকাল দলের অনেককেই দেখলাম রেসর্টের সুইমিংপুলে সময় কাটাতে। আমি আর আমার মতো অনেকেই সোজা চলে গেলাম ব্রেকফাস্ট সেরে বিচে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চেপে পড়তে হবে বাসে। ফিরতে হবে সেই চেনা শহরে। একটা দিনের সমুদ্র সঙ্গ মনে থেকে যাবে চিরকাল। মনে থেকে যাবে আমার ট্রি রেসর্টের আতিথেয়তা, অসাধারণ খাবার, দারুণ ঘর, টেন্টও রয়েছে থাকার জন্য। আসছে বছর আবার হবে, বলে বেরিয়ে পড়লাম কলকাতার উদ্দেশে। মাঝে আবার সেই কোলাঘাটে টি-ব্রেকের পর শহরে পৌঁছে রওনা দিলাম যে যার গন্তব্যের দিকে।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google